নিউজ ডেস্ক: খড়গপুর শহরের তেলেগু ভাষাভাষি জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্খা পূরণ করলেন মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা, উর্দুর পাশাপাশি তেলেগু ভাষাকেও সরকারি মর্যাদা দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মূখ্যমন্ত্রী। খড়গপুর শহরে শতাধিক বছরের কাছাকাছি বাস এই দক্ষিণী জনগোষ্ঠীর। রেল কারখানা প্রতিষ্ঠার সময় থেকে এসেছেন এঁরা। নিজস্ব সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ভাষার পৃথক ভিত্তি বজায় রেখেও মিশে গেছেন বাঙালি জনজাতির সাথে। সে মিশ্রণ এতটাই গভীরে যে বাঙালিরাও আজ তাঁদের উৎসব পার্বণে সমান ভাবে জড়িয়ে থাকেন। তবুও বাংলায় থেকে দ্বিতীয় জনজাতি হিসাবেই থাকতেন তাঁরা কারন তাঁদের ভাষার সরকারি মর্যাদা ছিলনা যা এবার দিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
খড়গপুরের শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছেন এঁরা। রেল এলাকাতে তো রয়েইছেন সঙ্গে রয়েছেন রেল এলাকার বাইরেও। মথুরাকাটি, নিমপুরা, মলঞ্চ, বিশ্বরঞ্জন নগর, চিত্তরঞ্জন নগর, সমপেটা বস্তি, টুরি পাড়া মিলিয়ে শহরের জনসংখ্যার প্রায় ২০থেকে ২৫শতাংশ। অন্ধ্রপ্রদেশ ভাগ হয়ে যাওয়ার পর এই শহরের অধিকাংশের শেকড় আদতে তেলেঙ্গানা রাজ্যে। এই শহরে রয়েছে তাঁদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক সংস্থা ও মঞ্চ। বছরে একবার সেখানে কয়েকদিন ধরে চলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড।
ভাষার সরকারি স্বীকৃতি না থাকলেও বাম আমলে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে তেলেগু ভাষায় পঠনপাঠনকে। রয়েছে একাধিক স্কুল যেখানে নিজেদের ভাষাতেই প্রাথমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। তৎকালীন বোর্ড এঁদের পরীক্ষাও নিতেন তেলেগু ভাষা ও হরফে।
এঁদের সবচেয়ে বড় উৎসব মাতা পূজা। শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পর্যায়ক্রমে প্রায় দু’মাস ধরে একের পর এক অঞ্চলে মাতার আরাধনা চলতে থাকে। এক একটি অঞ্চলে টানা সাত দিন ধরে চলে মায়ের পুজো ও পরিক্রমন। এক অঞ্চলে শেষ হলে ফের অন্য অঞ্চলে শুরু। চলে মেলা, উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাচ, গান আর দক্ষিণী খানা পিনা।
এঁদের হাত ধরে খড়গপুর শহরের প্রায় অ-দক্ষিণী মানুষের দ্বিতীয় পছন্দের খাদ্যাভ্যাসে ঢুকে পড়ছে ইডলি, বড়া, ওপমা, ধোসা, সম্বরম। অনেক অদক্ষিণী মানুষের বাড়িতে ব্রেকফাস্টের জন্য পাওয়া যাবে ইডলি বানানোর সরঞ্জাম। সস্তায় পেটভরে খাবার পেতে লাইন দিয়ে মানুষের ভিড় দেখা যাবে বোগদা, মালঞ্চ, ইন্দা, খরিদা, নিমপুরা, প্রেমবাজারে, সবই দক্ষিণী খাবার।
এমনই একটি জনজাতির ভাষা সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ায় তাঁরা নিজেরাতো খুশি সঙ্গে খুশি আপামর খড়গপুরবাসী। তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে ‘তেলেগু’কে রাজ্য সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হল। মঙ্গলবার নবান্নে রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানা গেছে খড়গপুর শহরের তেলেগুভাষীদের দীর্ঘ দিনের দাবি নিয়ে খড়গপুর শহরের বিধায়ক প্রদীপ সরকার এ নিয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই আবেদন মেনেই রাজ্য মন্ত্রীসভার এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।