নিজস্ব সংবাদদাতা, গোয়ালতোড় :- মিড-ডে-মিলের জন্য মজুত করা চালের সন্ধানে জঙ্গল মহলের দুর্বল পরিকাঠামোর বিদ্যালয় গুলিতে হাতির দলের হামলা নতুন কিছু নয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিদ্যালয়ের চারপাশে প্রাচীর দেওয়ার পাশাপাশি মজবুত করা হচ্ছে মিড-ডে-মিলের রান্নাঘর। তার ওপর ছাত্রছাত্রী না থাকায় বন্ধ মিড-ডে-মিল। তাই এখন নতুন লক্ষ্য লকডাউন বাবদ সরকারের বরাদ্দ রেশনের চাল।
লকডাউন আর করোনার দৌলতে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার বিনে পয়সায় চাল দিয়েছে। ঘরে ঘরে মজুত রয়েছে সেই চাল। নুন আনতে পান্তা ফুরোনো সংসারেও এখন দু-দশ কেজি চাল মজুত। আর সেই চালের সন্ধানে এবার গ্রামে গ্রামে হানা দিচ্ছে হাতি। হাতির সন্ধানে গরিব মানুষের সেই দুর্বল কাঠামোর বাড়ি। গত ৪৮ ঘন্টায় এই চালের সন্ধানে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড় এলাকায় ৬টি বাড়ি তছনছ করে দিয়েছে একটি দাঁতাল যার মধ্যে রয়েছে একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং চারটি সাধারণ বাড়ি।
বুধবার রাতের প্রথম ঘটনাটি ঘটে গোয়ালতোড়ের ধরমপুর গ্রামে। ধরমপুরের বাসিন্দারা জানান ওই দিন মধ্যরাতে দাঁতাল হাতিটি প্রথমে হামলা চালায় গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। দুটি জায়গা তছনছ করে কিছু না পেয়ে হামলা চালায় পর পর তিনটি বাড়িতে। এই তিনটি বাড়ির জমিয়ে রাখা রেশনের চাল খেয়ে তান্ডব চালায় হাতি।গ্রামবাসীরা খবর পেয়ে একজোট হয়ে হুলা জ্বালিয়ে ও পটকা ফাটিয়ে হাতিটিকে জঙ্গলে ফেরৎ পাঠায়।
এরপর বৃহস্পতিবার রাতে দাঁতাল হাতিটি হানা দেয় ধরমপুরের পাশের গ্রাম শাঁখাভাঙায়। এবার আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হানা দিয়ে সময় আর শক্তি খরচ করেনি হাতি।
সোজা হানা দেয় শাঁখাভাঙ্গা গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর শীতল মুর্মুর বাড়িতে। শীতল তখন স্ত্রী বেলমনি আর দুই শিশুকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন বাড়ির মধ্যেই। নিম্নচাপের জেরে সারারাত ধরেই বৃষ্টি হওয়ার দরুন প্রতিবেশীরাও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। সেই সুযোগে হাতি লোকালয়ে চলে আসে। রাস্তার ধারেই শীতলের নতুন কাঁচা বাড়িতে হামলা চালায়। মাটির দেওয়াল ভেঙ্গে বাড়িতে মজুত প্রায় ৫০ কেজি চাল খেয়ে ছড়িয়ে তছনছ করে।
দেওয়াল ভাঙ্গার আওয়াজে সকলের ঘুম ভেঙ্গে যায়। নাবালক দুই শিশু ভয় পেয়ে চিৎকার করতে থাকে। তখন তারা বাড়ি থেকে কোনো রকমে বেরিয়ে পালিয়ে যায়। পরে গ্রামবাসীদের জানালে গ্রামবাসীরা হাতিটিকে তাড়িয়ে জঙ্গলে ফেরৎ পাঠায়৷
বেলমনি জানান, দিনমজুরি করে কোনো রকমে সংসার চলে আমাদের। লকডাউনের মাঝেই কোনো রকমে এই মাটির বাড়িটি তৈরি করে এসবেস্টরের ছাউনি দিয়েছিলাম। আর হাতি এসে বাড়ি ভেঙ্গে চাল খেয়ে চলে যায়৷ এখন এই লকডাউনের মাঝে আমরা কি খাবো আর কোথায় থাকবো ভেবে পাচ্ছিনা।
লকডাউনের সময় রেশনের চাল লুট করা নিয়ে শাসক বিরোধী তরজায় ভিন্ন মাত্রা পেয়েছিল বাংলার রাজনীতি। ক্ষুব্ধ মূখ্যমন্ত্রী নিজের দলের নেতা কর্মীদের যেমন সেই নিয়ে সতর্ক করেছিলেন তেমনই সরিয়ে দিয়েছিলেন খাদ্য সচিবকে। কিন্তু রেশনের চাল চুরি করা নিয়ে এই দাঁতালকে আটকাবে?
বনদপ্তর অবশ্য জানিয়েছে হাতিটিকে সরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরপর এই ঘটনায় ক্ষোভ বাড়ছে গ্রামবাসীদের আঁচ পেয়েই শুক্রবার ঘটনাস্থলে যান গোয়ালতোড় রেঞ্জের বন অধিকারিক । গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে তিনি প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়ে আসেন। তিনি আরও জানান, হাতি তাড়ানোর জন্য গ্রামবাসীদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করবে বনদপ্তর।