নিজস্ব সংবাদদাতা: ফেসবুকে ছবি ছড়িয়ে তার কীর্তিললাপ ছড়িয়ে দেওয়া হবে প্রতিবেশীর এমনই হুমকির জেরে এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছে এমন অভিযোগ দায়ের করল কিশোরীর পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদা থানার অন্তর্গত গহিরা গ্রামে। কিশোরীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার একটি মামলা দায়ের করেছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ক্লাশ এইটের ওই ছাত্রীর বয়স ১৬বছর বলে জানা গেছে।
কিশোরীর বাবা অভিযোগ করেছেন ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার সন্ধ্যাবেলায়। ওইদিন বাড়ির সামনে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কিশোরীর পরিবারের ঝগড়া হয়েছিল সেই ঝগড়ার সময়ই এই হুমকি দেয় প্রতিবেশী। কিশোরীর বাবা জানায়, ”আমাদের বাড়ির সামনে একটি পাকা সড়ক রয়েছে সেই সড়কের উলটো দিকে বাড়ি ওই প্রতিবেশীর। আমরা পাকা সড়কের ওপর ধান শুকোতে দিয়েছিলাম। এতে পথচারীদের কোনও আপত্তি ছিলনা কারন আমরা ধান শুকোতে দিয়ে কেউ না কেউ ওখানে থাকতাম এবং আমাদের ধানের জন্য কারও যাতে অসুবিধা না হয় তার দিকে নজর রাখতাম।”
তাঁর দাবি, “এই ধান শুকোতে দেওয়ায় আপত্তি জানায় আমার উল্টো দিকে থাকা প্রতিবেশী। কেন তাঁদের আপত্তি বুঝতে পারিনি। এই বিষয় নিয়ে আমাদের সঙ্গে ওই পরিবারের কথা কাটাকাটি হয়। এই ঝগড়ার সময়েই প্রতিবেশীরা হুমকি দেয় আমার মেয়ের ছবি ফেসবুকে দিয়ে তার কীর্তিকলাপ ফাঁস করে দেবে জনসমক্ষে।”
কিশোরীর বাবা জানান, ‘কিছুদিন আগে আমার মেয়ে একটি যুবকের সঙ্গে বাড়িতে থেকে পালিয়ে যায়। ওর অল্প বয়স সেই কারনেই হয়ত এই প্রলোভনেই সে ওই যুবকের সাথে চলে যায়। এই ভুলটা যে কোনও পরিবারের যে কোনও মেয়ের সাথেই হতে পারে। সেটাই হয়েছিল আমার মেয়ের ক্ষেত্রে। যাইহোক পরে আমরা মেয়েকে ফিরিয়ে আনি। উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনায় মিটে যায়। বুধবার ঝগড়ার সময় আমার প্রতিবেশী সেই প্রসঙ্গ তুলে এনে অত্যন্ত কুৎসিত ভাবে আমার মেয়েকে আক্রমন করে। তাকে দেহজীবী থেকে শুরু করে নানা নোংরা বিশেষণ দিয়ে গলাগালি করে এবং বলে তার চরিত্র জনসমক্ষে আনার জন্য ফেসবুকে তার ছবি ছেড়ে দিয়ে তার কীর্তিকলাপ প্রকাশ করে দেওয়া হবে।”
আত্মঘাতী কিশোরীর পরিবার জানিয়েছে, এরপরই ওই কিশোরী অত্যন্ত মুষড়ে পড়ে। কারও সঙ্গে আর কথা না বলে ঘরে ঢুকে গিয়েছিল। পরিবারের লোকেরা সড়ক থেকে ধান তুলে তা বস্তাবন্দি করে যখন ঘরে আনে তখন সন্ধ্যা হয়ে যায়। ঘরে ফিরে তারা কিশোরীর খোঁজ শুরু করেন। পরে বাড়ির একটি অংশ থেকে ওই কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। গামছা দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়েছিল কিশোরী। পুলিশ খবর পেয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে। বেলদা থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, কিশোরীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে একটি আত্মহত্যায় প্ররোরচনার মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসলেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।