Homeএখন খবর'দুই বিঘা' জমি নিয়ে তোলপাড় ঘাটাল, বিডিও-র বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ মূখ্যমন্ত্রীর...

‘দুই বিঘা’ জমি নিয়ে তোলপাড় ঘাটাল, বিডিও-র বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ মূখ্যমন্ত্রীর কাছে

নিজস্ব সংবাদদাতা: ‘শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভূঁই..’ না, এ দু’বিঘা জমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপেনের জমি নয়। ঘাটালের মোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ধরমপুর মৌজায় এই দু’বিঘা দু’শতক জমির মালিক উত্তর ২৪ পরগনার নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা সোমা দাসগুপ্ত নামের এক গৃহবধূর। কলকাতা মহানগর লাগোয়া নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা হঠাৎ করে বন্যাপ্রবন ঘাটালের অজপাড়া গাঁ ধরমপুরে কেন জমি কিনতে এলেন আর কেনই বা সেখানে সম্প্রতি বাড়ি করতে শুরু করেছে তা নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই মানুষের। সেই মানুষই খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন যে সোমা দাশগুপ্ত আদতে ঘাটালের বিডিও অরিন্দম দাশগুপ্তের স্ত্রী। স্ত্রীর নামে জমি কিনে বাড়ি বানাচ্ছেন ঘাটালের বিডিও স্বয়ং।

ঘাটালের কয়েকজন ব্যক্তি যাঁরা নিজেদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আদর্শে অনুপ্রাণিত ও একান্ত অনুগামী বলে দাবি করেছেন তাঁরাই মূখ্য মন্ত্রীর কাছে পাঠানো একটি অভিযোগ পত্রে দাবি করেছেন যে, বিডিও অরিন্দম দাশগুপ্ত ওই দু’বিঘা দু’শতক যে জমিটি কিনেছেন এবং যার মূল্য ১২লাখ টাকা বলে দাবি করা হয়েছে তা আদতে জমির আসল বাজার মূল্যের চেয়ে তিন ভাগের একভাগেরও কম করে দেখানো হয়েছে এবং ঘাটালের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ সরকারি অর্থ কী পরিমান বিডিও লুঠ করে থাকেন এই জমি কান্ডটি তারই একটি ভগ্নাংশ উদাহরন মাত্র। মূখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো ওই অভিযোগে অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, বিডিও সাহেব স্থানীয় নেতৃত্বের সহযোগিতায় কয়েকজন নির্দিষ্ট ঠিকাদারদের সঙ্গে সু সম্পর্কের ভিত্তিতে শতাংশের হারে কাটমানি নিয়ে থাকেন, কন্টিজেন্সির বিলে কারচুপি করে থাকেন, ভুয়ো বিল তৈরি করে গাড়ি ব্যবহার বাবদ অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে থাকেন এমনকি একই খরচের হিসাব ভিন্ন ভিন্ন খাতে দেখিয়ে থাকেন এবং এই ভাবে মাসে আলাদা করে ৪ থেকে ৫লক্ষ টাকা উপার্জন করে থাকেন। এই উপার্জনের কালো টাকা সাদা করার জন্যই তিনি ওই জমি কিনেছেন।

অভিযোগকারীরা প্রমান হিসেবে বলেছেন, সম্প্রতি বিডিও ও পঞ্চায়েত সমিতি ভবন রঙ করার জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তা একবার বিডিওর খাত থেকে এবং আরেকবার পঞ্চায়েত সমিতির কন্টিজেন্সি খাতে দেখানো হয়েছে এবং দুটি ক্ষেত্রেই যে ভাউচার দেখানো হয়েছে তা বিদ্যাসাগর সোসাইটি নামের একটি দ্রব্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেওয়া। অভিযোগ এমজিএনআরজিও সহ বিভিন্ন খাতের কন্টিজেন্সি ফান্ডের টাকা বিডিও ভুয়ো ভাউচার দিয়ে আত্মসাৎ করে থাকেন।
বিডিওর অরিন্দম দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ যে তিনি যে বাড়িটি তৈরি কাজ শুরু করে দিয়েছেন তার জন্য স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের যে অনুমোদন নেওয়া দরকার ছিল সেই অনুমতি তিনি নেননি।

ঘাটালের বিডিও অবশ্য এই অভিযোগকে ভুয়ো এবং ভিত্তিহীন বলেছেন। ‘দ্য খড়গপুর পোষ্ট’কে তিনি বলেন, “আমার স্ত্রীর নামে যে সম্পত্তি কেনা হয়েছে তা সরকারি নিয়ম মেনে চেক মারফৎ লেন দেন হয়েছে। এই টাকার একটি অংশ আমি জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে লোন নিয়েছি। এই অভিযোগ বাস্তবতা বিহীন, অভিসন্ধি মূলক।” বিডিও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন নিজে লোন করার পাশাপাশি জমি কেনার একটি অংশ তাঁর স্ত্রী বাপের বাড়ির কাছ থেকে জোগাড় করেছেন।
স্থানীয়দের ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা মূল্যের জমি ১২লক্ষ টাকায় কিনে তিনি ওই টাকা সদায় রূপান্তরিত করেছেন এবং সময় মত বিক্রি করে মূল টাকা সুদ সহ তুলে নেওয়ার জন্যই ওখানে বাড়ি বানাচ্ছেন। অভিযোগকারীরা জানাচ্ছেন বিডিওর ওই সব বেআইনি অর্থ উপার্জন প্রক্রিয়ায় মদত রয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের যদিও তারা কারা এ নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি তবে বলা হয়েছে বিডিওর অনুমতি হীন ওই বাড়ির ভিত্তি পত্তনের সময় উপস্থিত ছিলেন ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দলুই এবং ঘাটাল তৃনমুলের ব্লক সভাপতি দিলীপ মাজি।

বিধায়ক শঙ্কর দলুই বলেন,’ “ঘাটালের বিডিও সম্পর্কে আমারই ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে। আমি বিভিন্ন স্তরে জানিয়েছি এমনকি পঞ্চায়েত মন্ত্রীকেও বলেছি ওনাকে ঘাটাল থেকে সরিয়ে নিতে। উনি ঘাটালকে পিছিয়ে দিচ্ছেন। পঞ্চায়েত মন্ত্রী বলেছেন বিডিওদের ট্রান্সফার ওনার আওতায় পড়েনা। তবুও ওনার বাড়ির ভিত পুজোয় গেছি। উনি ফোন করে বললেন, আপনার এলাকায় বাড়ি বানাচ্ছি। অবসর জীবনে আপনার প্রতিবেশী হিসাবে কাটাব। এরপর আমি না বলি কি করে?”

ঘাটাল তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির সহকারি সভাপতি দিলীপ মাজি বলেন,’খবরটা আমাকেও অবাক করেছে। এর আগের বিডিও চার বছর থেকেই পালাই পালাই করেছিলেন। আর ইনি একেবারে বাড়ি বানিয়ে বসছেন! তবে পঞ্চায়েত সমিতির কোনও আর্থিক ক্ষমতা নেই। সভাপতিকে অর্থ ব্যয় সংক্রান্ত কোনো বিলেই সই করতে হয়না। ফলে সবটাই বিডিও করেন। তাই খরচের দায়িত্ব ওনার। পঞ্চায়েত সমিতির কোনো কিছু করারই নেই। তবুও রঙ করার খরচ নিয়ে আমি একবার অর্থ কমিটিতে বিষয়টি উত্থাপন করেছিলাম। তখন আমাদের বলা হয়েছিল যে পার্টে পার্টে কাজ হচ্ছে। পুরো কাজ শেষ হলে জানানো হবে। আজ পর্যন্ত জানতে পারিনি। আর ওনার ভিত পুজোর দিন গেছি। একজন বিডিও যদি আমন্ত্রন জানান তবে যাওয়াটা ভদ্রতা মনে করেই গেছি। এরমধ্যে কি রয়েছে ভেবে দেখিনি। তবে ওনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্যিই মারাত্মক। তদন্ত হোক হলেই পরিস্কার হয়ে যাবে।”

অভিযোগ শুধু মূখ্যমন্ত্রীর কাছে নয়, মহকুমা শাসক, জেলা শাসক, মূখ্য সচিব, প্রধান সচিব সমস্ত স্তরেই করা হয়েছে। অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় প্রশাসনের অন্দর মহলেও। তবে করোনা কালীন পরিস্থিতির জন্য তদন্তের প্রক্রিয়া কিছুটা থমকে। যদিও বিষয়টি নিয়ে তদন্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে। ঘাটাল বিডিও অফিসের কয়েকজন ডেভলপমেন্ট অফিসারও জানিয়েছেন রিলিফ, ইলেকশন, ১০০দিনের কাজ ইত্যাদি সমস্ত কিছু কন্টিজেন্সি ফান্ডের ওপর বিডিও যে দখলদারি মনোভাব নিয়ে চলেন তা খুব একটা স্বাভাবিক নয়।

RELATED ARTICLES

Most Popular