নিজস্ব সংবাদদাতা: মাস দুয়েক আগের মর্মান্তিক দিনটার কথা এখনও ভুলতে পারেননি সেনাপতি মানা। পথ দুর্ঘটনায় আহত বন্ধুকে নিয়ে ছুটছিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের পথে। তার আগে আশেপাশের হাসপাতাল, নার্সিং হোম ঘোরা হয়ে গেছে কিন্তু কোথাও রক্ত নেই! চিকিৎসকরা বলেছিলেন, আপাতত কয়েক বোতল রক্ত দিতে হবে তারপর দুর্ঘটনার চিকিৎসা। সেই রক্তের জন্যই বন্ধু সুভাষ দুলে কে নিয়ে ছুটে ছিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের পথে কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। হাসপাতালে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয়েছিল বন্ধুর। সেদিনই বন্ধুর নিথর দেহকে ছুঁয়ে মনে মনে শপথ নিয়েছিলেন সেনাপতি মানা। শপথ রক্তের অভাবে মানুষের মৃত্যু আটকাতে সাধ্যমত লড়ে যাবেন তিনি। সেই অঙ্গীকার রাখলেন সেনাপতি।
দুমাস পরে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা থানার এক প্রত্যন্ত গ্রামে জীবনের প্রথম রক্তদান শিবিরটি করেই ফেললেন সেনাপতি। শুধু করলেন বললে বোধহয় একটু কমই বলা হবে বরং বলা ভালো রীতিমত সফল করে হয়েছে তাঁর প্রথম প্রচেষ্টা। আমলাগোড়া পোষ্ট অফিসের অন্তর্গত সেই প্রত্যন্ত গ্রাম পায়রাউড়া রক্তদান শিবিরে ৫০জন রক্তদান করেছেন যারমধ্যে ১৬জন মহিলা! শুধু তাই নয় এর মধ্যে এক ডজন মানুষ জীবনের প্রথম রক্তদান করলেন এই রক্তদান শিবিরে।
শুক্রবার পায়রাউড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত শিবিরে মানুষের এই উৎসাহ উদ্দীপনায় আপ্লুত সেনাপতি মানা জানান, ” যদি সেদিন প্রচুর টাকা পয়সার দরকার হত আমরা হয়ত যোগাড় করে বাঁচিয়ে আনতে পারতাম সুভাষকে। ও আমার প্রাণের চেয়েও অধিক ছিল। নিজের সর্বস্ব দিয়েই ওকে বাঁচিয়ে আনতে পারতাম যদি সেটা সম্ভব হত কিন্ত আমরা হেরে গেছি রক্তের অভাবের কাছে। সেটাই আমার মনে সবচেয়ে বড় আঘাত ছিল। রক্তের অভাবে এই অকাল মৃত্যু মেনে নেওয়া যায়না। শুধু সুভাষ নয়, কত প্রাণই এই ভাবে অকালে ঝরে যায়। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা নিয়ে এরকম শিবির আয়োজন করে যাব। আমি উৎসাহিত এই কারনে যে এই প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ এগিয়ে এসেছেন, এগিয়ে এসেছেন মহিলারাও।”.
এই রক্তদান শিবিরে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের পাশাপাশি উপস্থিত হয়েছিলেন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ও উপপ্রধান। আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে সেনাপতির এই কর্মযজ্ঞ দেখতে হাজির ছিলেন গড়বেতা এবং অন্যান্য জায়গায় থাকা সেনাপতির পরিচিত বন্ধু বান্ধবরা। রক্তদাতাদের একটি করে গাছের চারা দিয়ে সমবর্ধিত করেন সেনাপতি। দেওয়া হয় গোলাপ ফুল। এই অনুষ্ঠান যথেষ্ট উদ্দীপ্ত করেছে স্থানীয় গ্রামবাসীদের। যাঁরা এই রক্ত সংগ্ৰহ করতে এসেছিলেন তাঁদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি।
সেনাপতির এই উদ্যোগে গর্বিত তাঁর বন্ধুরা। এক বন্ধু জানান, ‘ জীবন যাপন ও দৈনন্দিন আচরণে সেনাবাহিনীর মতই শৃঙ্খলা পরায়ন সেনাপতি। তাঁর পোশাক পরিচ্ছদেও সেনা বাহিনীর লোগো ইত্যাদি দেখা যায়। অদ্যন্ত দেশপ্রেমিক মানুষটি যেন নাগরিক জীবনেই একটি লড়াই চালিয়ে যায়। চন্দ্রকোনা রোডের সেই দুর্ঘটনায় বন্ধুর মৃত্যুর পর থেকেই সে আমাদের কাছে প্রায় বলত, রক্তদান শিবির করবে সে। এরকম প্রাথমিক আবেগ অনেকেরই থাকে যা সময়ের সাথে সাথে হারিয়েও যায় কিন্তু আমরা জানতাম সেনাপতি এটা করেই ছাড়বে। ও যে সত্যিকারেরই সেনাপতি!”