নিজস্ব সংবাদদাতা: ঝাড়গ্রাম : রাত পোহালেই বিশ্ব আদিবাসী দিবস, আদিবাসী জনজাতি গোষ্টির মানুষদের জীবন জীবিকা অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক স্তরে মান্যতা দিয়েই পালন করা হয় দিনটিকে।
কিন্তু তার আগের দিনই শনিবার ঝাড়গ্রাম বনদপ্তরের উদ্যোগে ভেঙে দেওয়া হলো জঙ্গলমহলের প্রাচীনতম উপজাতি ভুক্ত একটি লোধা শবর পরিবারের বাড়ি। আমফান ঝড়ে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল হত দরিদ্র ওই আদিবাসী সম্প্রদায় ভুক্ত মানুষটির বাড়ি। সম্প্রতি সরকারের সাহায্য পেয়েছিল পরিবারটি। সেই অর্থে মেরামত কাজ শুরু করার পরই বাড়িটি ভেঙে দিল বন দপ্তর।
জঙ্গল মহলের অন্তর্গত ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্ৰাম ব্লকের মলম গ্রাম পঞ্চায়েতের ভালিয়াচাকড়ি গ্রামের বাবলু ভক্তার বাড়ি ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে সামাজিক সংগঠন গুলি।
বনদপ্তরের ভনয়াগ্ৰামের রেঞ্জার শিবরাম রক্ষিত জানান জায়গাটি বন দপ্তরের অধীন তাই ওই জায়গায় কোন ভাবেই বাড়ি তৈরি করতে দেওয়া যাবে না। অন্য দিকে ওই বাড়ির মালিক বাবলু ভক্তার প্রশ্ন , সে কোনও বাড়ি বানাচ্ছিল না। গত ১০ বছর ধরে বসবাস করছে এমন বাড়ির মেরামত করছিল সে। বাবলুর আরও দাবি, সে যদি বেআইনি ভাবে বসবাস করে থাকে তবে সরকার তার বাড়ি সরানোর জন্য ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ বরাদ্দ করল কেন?
স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে বাবলু ভক্তার পরিবার । নিজস্ব চাষবাসের জমি নেই চাষের কাজ এবং দিনমজুরি করে দিন গুজরান হয় এই লোধা শবর সম্প্রদায়ের মানুষ বাবলু ভক্তার । জঙ্গলমহলের লোধা শবর সাম্প্রয়াদের বাবলু ভক্তা বলেন , দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এখানে আমি বসবাস করছি । আমফান ঝড়ে আমার বাড়ি ভেঙে যাওয়ার পর আমি আবেদন করেছিলাম বাড়ি তৈরীর জন্য টাকা পাই । এদিন সিমেন্টের খুঁটি এবং এডবেস্টার দিয়ে বাড়ি তৈরি করছিলাম হঠাৎ করে বনদপ্তরের লোক জন এসে আমার বাড়িটিকে ভেঙে দেয় । আমি অসহায় হয়ে পড়েছি । আমি একজন লোধা সম্প্রদায়ের মানুষ । নিজস্ব জমি টুকুও নেই । লোকের জমিতে কাজ করে সংসার চালায় । এখন আমার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাব ।
জেলা তথা রাজ্যের আদিবাসী বনবাসীদের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করে চলেছেন সমাজসেবী ঝরনা আচার্য্য। পশ্চিম বঙ্গ লোধা শবর সমাজ, কার্যকরী সভাপতি ঝরনা বলেন, ‘আদিবাসীদের হাত ধরে জঙ্গলের কোনও ক্ষতি হয়না বরং যুগের পর যুগ জঙ্গলকে টিকিয়ে রেখেছেন তাঁরাই। আর সে জন্য ২০০৬সালে সংসদে পাশ হওয়া বনাধিকার আইনে পরম্পরাগত ভাবে বসবাস করা দুর্বল বনবাসী উপজাতি গুলিকে বিশেষ অধিকার প্রদান করা হয়েছে। সেই অধিকার অনুযায়ী এঁদের উচ্ছেদ করা যায়না বরং এঁদের বিশেষ পাট্টা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বন দপ্তর এসব কিছু না মেনে এই কাজ করেই চলেছে। এর আগে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল কলমাপুখুরিয়া গ্রামে রাজু প্রামানিকের বাড়ি। সরকার একদিকে বলছে জঙ্গলমহলের মানুষের জন্য কাজ করছে কিন্তু বাস্তবে বিশ্ব আদিবাসী দিবসে এটাই হচ্ছে জঙ্গলবাসীদের জন্য সরকারের আসল উপহার।”
তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলার কোঅডিনেটর তথা নয়াগ্রামের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত বলেন , বিষয়টি খতিয়ে দেখে ওই পরিবার কে যতটা সাহায্য করার করব । লোধা শবর সাম্প্রয়াদের মানুষের পাশে সর্বদা তৃণমূল কংগ্রেস রয়েছে ।