নিজস্ব সংবাদদাতা: মর্মান্তিক মৃত্যুর স্বাক্ষী থাকল আইআইটি খড়গপুর। মাত্র ৫২ বছর বয়সে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল আইআইটি খড়গপুরের এক ছাত্রাবাস কর্মচারীর। সোমবার রাত ৮টা নাগাদ সজ্ঞাহীন অবস্থায় বি.সি.রায় টেকনলজি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে বল্লভভাই প্যাটেল ছাত্রাবাসের কর্মচারী তপন কুমার দের। তার মাত্র চার ঘণ্টা আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
রবিবার আইআইটি খড়গপুরে আ্যন্টিজেন পরীক্ষায় যে চারজনের পজিটিভ ধরা পড়ে তারই মধ্যে ছিলেন তপন। বাকি তিনজনের একজন ৫৪ বছরের মহিলা, যিনি আইআইটি ক্যাম্পাসের বাসিন্দা। অন্য দুজন ওই হাসপাতালেরই এক ৪৬ বছরের করনিক ও তাঁর ১৮ বছরের কন্যা। আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাস লাগোয়া সুকান্ত নগরের বাসিন্দা ওই বাবা ও মেয়ে। তপনও ক্যাম্পাস লাগোয়া রবীন্দ্রপল্লী এলাকায় থাকত বলেই জানা গেছে।
জানা গেছে মৃত তপন কুমার দে সামান্য জ্বর নিয়ে অস্বস্তিতে ছিলেন। এরপরই রবিবার বি.সি.রায় টেকনলোজি হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা তাঁর করোনা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। হাসপাতালেই আ্যন্টিজেন পরীক্ষা করা হয় তপনের। সেখানেই পজিটিভ ধরা পড়ে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরটি/পিসিআর পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়। যদিও সেই পরীক্ষার ফল আসার আগেই মৃত্যু হল তপনের। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে পজিটিভ ফলাফল আসার পরই তপনকে হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিন্তু কোনও অসুবিধা বোধ না করায় তপন হোম আইসোলেশনে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে সোমবার সকালেও স্বাভাবিক ছিল। হালকা জ্বর ছাড়া তেমন কোনও সমস্যা ছিলনা। কিন্তু দুপুরের পর থেকে অস্বস্তি বোধ করতে শুরু করেন তিনি। বিকাল ৪টা নাগাদ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে পরিবারের লোকেরা হাসপাতালে ফোন করলে সঙ্গে সঙ্গে আইআইটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে আ্যম্বুলেন্স পাঠায়। হাসপাতাল থেকে বাড়ির দূরত্ব মাত্র কয়েক কিলোমিটার ফলে আ্যম্বুলেন্স আসতে বেশি সময় নেয়নি। সাড়ে চারটে নাগাদ আইআইটি বি.সি.রায় টেলকনোলজি হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি করে নেওয়া হয় তাঁকে। চিকিৎসক দেখেন তাঁকে। অক্সিজেন দেওয়া হয়। অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হয়ে ওঠে। পরিবারের লোক নিশ্চিন্ত হয়। কিন্তু রাত ৮ টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানানো হয় অবস্থা সঙ্কট জনক হয়ে পড়েছে। তপনের ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠরত একমাত্র ছেলে দ্রুত ছুটে যায় হাসপাতালে, ততক্ষনে মৃত্যু হয়েছে তপনের। মাত্র ১বছর আগেই দুরারোগ্য ক্যানসার রোগে মৃত্যু হয়েছে তপনের ছোট ভাই কার্তিক দের। ফলে গোটা পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। গ্রাস করেছে আতঙ্কও।
এই মৃত্যু তপনের পরিবারের পাশাপাশি তার সহকর্মীদেরও হতবাক করে দিয়েছে। সুগারের রোগী হলেও খুব বাড়াবাড়ি পর্যায়ের ছিলনা। নিয়মিত ওষুধ খেতেন। করোনা কালে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করেই তিনি চলতেন বলে সহকর্মীরা জানিয়েছেন। আক্রান্ত হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল ভেবেই পাচ্ছেননা সহকর্মীরা। কারও মনে হচ্ছে করোনা জনিত আতঙ্ক থেকে হার্ট ফেল করেছেন ওই ব্যক্তি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য মনে করেছে আক্রান্ত চিহ্নিত হওয়ার পরই পরামর্শ মেনে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষনে থাকলে হয়ত এই দুর্ভাগ্য জনক ঘটনা ঘটতনা কারন সেক্ষেত্রে হাসপাতাল দ্রুত কলকাতায় পাঠাতে পারত। গোটা ঘটনায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে ওই এলাকায়। নিয়ম মেনে দেহ দেওয়া হয়নি পরিবারের লোকেদের। পরিবারের ২জন সদস্যের উপস্থিতিতে পুলিশের তত্ত্বাবধানে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মন্দিরতলা বৈদ্যুতিক চুল্লিতে দেহ সৎকার হতে পারে বলে জানা গেছে। এদিকে সোমবারের রিপোর্টে ফের রবীন্দ্রপল্লী এলাকায় আরও একজন ৫২ বছরের ব্যক্তির করোনা পজিটিভ চিহ্নিত হয়েছে।