নিজস্ব সংবাদদাতা: ভারতে করোনভাইরাসের প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটল কর্ণাটকে। জানা গেছে কালবুর্গি নামের এক ৭৬ বছর বয়সী ব্যক্তি প্রথম এদেশে কোভিড -১৯ এর কারনে মৃত্যুর শিকার হয়েছেন বলে স্বীকার করে নিয়েছে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রক। স্থানীয় চিকিৎসকরা সন্দেহ করেছিলেন যে মৃতের করোনভাইরাস ছিল, তবে পরীক্ষার ফলাফল এতদিন সেটা নিশ্চিত করে নি। বৃহস্পতিবারই কর্ণাটক সরকারের একজন প্রবীণ স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সুরেশ শাস্ত্রী বলেছেন সরকারি ভাবে জানিয়ে দেন যে ল্যাব পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে যে নিহত ব্যক্তির কোভিড -১৯ ছিল।
এদিন লিখিত ভাবেই ডাঃ সুরেশ শাস্ত্রী স্বাক্ষরিত ওই সরকারি ঘোষনায় বলা হয়, “৭৬ বছর বয়সী কালবুর্গির যিনি মারা গেছেন এবং তিনি একজন সন্দেহভাজন কোভিড- ১৯ ভাইরাস আক্রান্ত রোগী ছিলেন এবং করোনা পরীক্ষায় তা নিশ্চিত হয়েছেন। নিয়ম অনুসারে প্রয়োজনীয় যোগাযোগের সন্ধান, বিচ্ছিন্নতা এবং অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তেলঙ্গানা সরকারকেও অবহিত করা হয়েছে যেহেতু তিনি সেখানে একটি বেসরকারী হাসপাতালে গিয়েছিলেন।” এই একই তথ্য কর্ণাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বি শ্রীরামুলুও সরবরাহ করেছেন।
ভারত সরকারের তরফে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক প্রবীণ কর্মকর্তা নয়াদিল্লিতে বলেছেন যে এই ব্যক্তির মৃত্যু ২৯ শে জানুয়ারী থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই ব্যক্তির সৌদি আরব সফর করেছিল। ২৯ শে ফেব্রুয়ারি হায়দরাবাদে হয়ে এবং কর্ণাটকের কালাবুরাগিতে গিয়েছিলেন।
কর্ণাটক রাজ্যের যুগ্ম পরিচালক (যোগাযোগযোগ্য রোগ) বিজি প্রকাশ কুমার বলেছেন, মৃতদেহটি সৎকারের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’র সমস্ত নিয়ম ও সতর্কতা অনুসরণ করা হয়। নিয়ম গুলি বিশদভাবে জানাতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, “ভারত সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দেহটি সম্পূর্ণরূপে নির্বীজিত এবং নির্মূল করা হয়।”তিনি আরও বলেছেন, যেহেতু মানুষটি অসুস্থ অবস্থায় হায়দরাবাদের একটি বেসরকারী হাসপাতালে গিয়েছিল তাই তেলেঙ্গানা সরকারকেও পুরো বিষয় অবহিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার এই ব্যক্তির মৃত্যুর ঘোষণা করার সময়ই রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছিল যে মৃত্যুর সঠিক কারণ সন্ধান করা হচ্ছে।কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আধিকারিকের মতে, “ওই ব্যক্তি সৌদি আরব থেকে ফিরে আসার সময়ই জ্বরে ও কাশির লক্ষণ তৈরি করেছিলেন। প্রথমে এক বেসরকারী চিকিৎসক তাকে তাঁর বাড়িতে গিয়ে সেখানে চিকিৎসা করেছিলেন। ৯ ই মার্চ, লক্ষণগুলি আরও বেড়ে যায় এবং তাকে স্থানীয় এলাকারই একটি বেসরকারী হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
এই বেসরকারী হাসপাতালে তাকে প্রাথমিক ভাবে ‘মিড-জোন ভাইরাল নিউমোনিয়া’ এবং ‘সন্দেহভাজন কোভিড -১৯’ হিসাবে চিহ্নিত করে। ৯ মার্চ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা না করে উপস্থিত চিকিৎসকরা আরও উন্নত পরামর্শের জন্য অন্যত্র রোগীকে স্থানান্তরিত করার কথা বলেন। এরপরই তাকে হায়দরাবাদের একটি বেসরকারী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরই তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার তাকে গুলবার্গ মেডিকেল সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট (জিআইএমএস) এনে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি মারা যান।
ওই ব্যক্তির ছাড়াও কর্ণাটকে আরও ৫টি কোভিড-১৯ আক্রান্তের ঘটনা নিশ্চিত করা হয়েছে । বৃহস্পতিবার নিশ্চিত হওয়া পঞ্চম জন ২৬ বছর বয়সী এক যুবর যিনি সম্প্রতি গ্রীস থেকে ফিরে এসেছিলেন। এদিকে প্রথম করানোর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরেই কর্ণাটকের শিক্ষা বিভাগ সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা হিসাবে কিন্ডারগার্টেন থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রীষ্মকালীন ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছে। আর উঁচু ক্লাশ গুলির জন্য বাধ্যতামূলক পড়ার ছুটি বা স্টাডি লিভ ঘোষণা করেছে।