নিজস্ব সংবাদদাতা: বাড়ির বাইরে গেলে মাস্ক পরা আর বাড়িতে ফিরে ভালো করে হাত ধুয়ে নেওয়া! অসুস্থ থাকলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা। বাস্,।শুধু এই টুকু করলেই অনেকখানি রক্ষে। অন্ততঃ পেশাগত কারনে বাড়ির বাইরে গিয়ে আক্রান্ত হলেও পরিবারের মানুষজন বেঁচে যেতে পারেন সংক্রমন থেকে। কিন্তু মানুষের বেপরোয়া ভাব, দায়িত্ব জ্ঞানহীনতা এমন জায়গায় পৌঁচেছে যে বাড়ি থেকে না বেরিয়েও আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ বৃদ্ধা! এমনই চিত্র দেখা গেল খড়গপুর, মেদিনীপুর, ডেবরা, দাসপুর, চন্দ্রকোনা, মোহনপুর শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই।
বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরে আক্রান্ত করোনাকালের সর্বাধিক। আক্রান্ত ২৩৬জন। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের এই রিপোর্ট বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে নূন্যতম করোনা বিধি না মানায় পারিবারিক এবং পেশাগত নৈকট্য সংক্রমনের মাত্রা অনেক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে। আর সেই ঘটনার বড় স্বাক্ষ্য বোধহয় মেদিনীপুর শহরের বড় আস্তানার এক ৬ মাসের শিশু। বড় আস্তানার এই পরিবারে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ বছরের স্বামী এবং তাঁর ২৩ বছরের স্ত্রী। নিশ্চিত ভাবেই পেশাগত কারনে বাড়ির বাইরে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর যথাযথ বিধি না মেনে স্ত্রী এবং নবাগত পুত্রসন্তানকে সঙ্গ দিতে গিয়ে তাঁদের করোনার জীবাণুও উপহার দিয়েছেন ওই ব্যক্তি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাইরে থেকে ঘরে এসে ভালোভাবে হাত-পা ধুলে, জামা কাপড় বাইরে ছেড়ে তা ধুয়ে নিলে তিনি যেমন স্ত্রী-পুত্রকে সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারতেন তেমনই নিজে কর্মক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করলে, ঘন ঘন হাত ধুয়ে কিংবা স্যানেটাইজ করে এবং মাস্কহীন মানুষ থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখলে নিজেকে রক্ষা করতে পারতেন। পাশাপাশি গনপরিবহন ব্যবহার করলে বা অনেক মানুষের সমাগম হয় এমন জায়গায় মাথায় ক্যাপ পরা এবং গ্লোভস পরতে পারলে সংক্রমন এড়ানো যায় ভালো ভাবে। এবার দেখা যাক জেলার পারিবারিক ও পেশাগত সংক্রমনের চিত্রটা।
২১শে এপ্রিল ২৩৬ জন আক্রান্তের মধ্যে ৫৭ জন পারিবারিক বা পেশাগত নৈকট্য থেকে সংক্রমিত হয়েছেন এরমধ্যে ১৬টি পরিবারের ৪১ জন এবং ৩টি পেশাগত নৈকট্য থেকে মোট ১৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। যেমন মেদিনীপুর শহরের বিধাননগরে ৩টি পরিবারের ৬ জন আক্রান্ত। এঁদের মধ্যে ৩৩বছরের মহিলা এবং তাঁর ১৪ বছরের ছেলে এবং ৪৯ বছরের বাবা এবং তাঁর ১৫ বছরের ছেলে আক্রান্ত। বিধাননগরেই আক্রান্ত ৩৩ বছরের মা ও তাঁর ৫বছরের শিশুপুত্র। শহরের প্রগতিপল্লী এলাকায় একই পরিবারের ৩৯ ও ৩৫ বছরের দুই ভাই আক্রান্ত। বার্জটাউনে আক্রান্ত ৬৫ ও ৬২ বছরের দুই বৃদ্ধা আবার রাঙামাটি এলাকায় আক্রান্ত ৭১ ও ৬৭ বছরের বৃদ্ধ দম্পতি।
খড়গপুর শহরের ইন্দাতে একই পরিবারের ৩মহিলা আক্রান্ত হয়েছেন যাঁদের বয়স ৬৩, ৩৭, ২১ বছর। আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসে আক্রান্ত ২২ এবং ১৮ বছরের দুই বোন। শহরের পর গ্রামীন খড়গপুরের জকপুর বড়াডিহায় ২৭ এবং ৪৫ বছরের দুই মহিলা একই পরিবার থেকে আক্রান্ত। ভেটিয়া ডিমৌলিতে আক্রান্ত ৪৪ ও ৪২ বছরের দম্পতি। খড়গপুর মহকুমার ডেবরার গৌরাঙ্গপুর থেকে সর্বাধিক পারিবারিক সংক্রমনের খবর পাওয়া গেছে। এখানে একই পরিবারের ৫ জন আক্রান্ত যারমধ্যে ২০ ও ২৮ বছরের দুই তরুণী, ৬২ বছরের এক বৃদ্ধা এবং ৪১ ও ৬৮ বছরের দুজন পুরুষ রয়েছেন। এই মহকুমার মোহনপুর বাগদার পাঁচরুলিতে একই পরিবারের ৬৫ বছরের বৃদ্ধ ও ৫৫ বছরের মহিলা আক্রান্ত।
এরপর বড়সড় পারিবারিক সংক্রমন ঘাটাল মহকুমার দাসপুর থানা এলাকায়। ওখানকার রাধাকান্তপুর বাসুদেবপুরে একই পরিবারের ৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তরা হলেন ৪৫, ৪০, ২২ এবং ২০ বছরের চার মহিলা। এই থানারই দুধকোমড়া গ্রামে একই পরিবারের ২৮ ও ২০ বছরের দুই যুবক এবং ২৭ বছরের যুবতী আক্রান্ত। পরের ঘটনা চন্দ্রকোনা থানার ক্ষীরপাই এলাকার বেলডাঙা গোহালডাঙাতে। এখানে একই পরিবারের ৩৪ বছরের দুই মহিলা এবং ৪২ বছরের এক পুরুষ আক্রান্ত হয়েছেন।
এরপর নজর দেওয়া যাক পেশাগত নৈকট্য থেকে সংক্রমনের বিষয়টি যা কিনা জেলার খড়গপুর ও মেদিনীপুর শহর থেকে নজরে এসেছে। পারস্পরিক নৈকট্য এই সংক্রমনকে বাড়িয়েছে রেল ওয়ার্কশপ এলাকায় যেখানে অন্ততঃ ৯ জনের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা গিয়েছে। এরই পাশাপাশি খড়গপুর টিএটি মেটালিক কারখানার কর্মী যাঁরা চৌরঙ্গী এলাকায় একই সাথে বসবাস করেন এরকম ৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন যাঁদের পদবী একই এবং এঁদের বয়স হল ৪২, ৪৩, ৩৪, ৩৬ এবং ৫৭ বছর। যতদূর মনে হচ্ছে এঁরা ভিনপ্রদেশের একই এলাকার বাসিন্দা এবং কর্মসূত্রে একই সঙ্গে থাকেন। মেদিনীপুর শহরের একটি নার্সিং হোমে কর্মরত ৪৮ এবং ২৪ বছরের দুই পরিসেবিকা আক্রান্ত হয়েছেন। ছবি: প্রতীকি