নিজস্ব সংবাদদাতা: ভুয়ো IPS, ভুয়ো বিচারক আর ভুয়ো আইনজীবী সহ গুচ্ছ গুচ্ছ ভুয়োর পর এবার পুলিশের জালে ভুয়ো মানবাধিকার কমিশন সদস্য। আর এই ভুয়ো ব্যক্তিটি যে সে নয়। তিনি একাধারে প্রাথমিক শিক্ষক আর তৃনমূল কংগ্রেসের হোমড়া- চোমড়াও বটে। এতটাই হোমড়া চোমড়া যে একসময় সামলেছেন উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের (DPSC) প্রাক্তন চেয়ারম্যানের পদও। রবিবার সন্ধেবেলা রায়গঞ্জের চণ্ডীতলা এলাকা থেকে তাঁকে আটক করেছে কর্ণজোড়া ফাঁড়ির পুলিশ। তারই সাথে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে ভারত সরকারের স্টিকার লাগানো একটি গাড়িও।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে আটক হওয়া ওই ব্যক্তির নাম বেঞ্জামিন হেমব্রম। আটক হেমব্রমের কাছ থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান পদের একটি আই-কার্ডও পেয়েছে। যদিও কমিশনের অনুমতি সংক্রান্ত সরকারি নথিপত্র তিনি তা দেখাতে পারেননি বলে খবর। একটি সূত্রে জানা গেছে হেমতাবাদ আর্দশ হাই স্কুলের সহশিক্ষক পদে কর্মরত বেঞ্জামিন হেমব্রম উত্তর দিনাজপুর ডিপিএসসির চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত ছিলেন। বছর আড়াই আগে ডিপিএসসি পদ থেকে তাঁকে অপসারণ করা হয়। তারপর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন কমিশনের লোগো লাগানো স্টিকার গাড়িতে লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত বেঞ্জামিনকে। বাজেয়াপ্ত হওয়া বিলাসবহুল গাড়ি ছাড়াও হেমতাবাদে দু’দুটি সুসজ্জিত দোতলা বাড়ির মালিক তিনি।
পাশাপাশি আরও একটি বিলাসবহুল গাড়ির মালিক বেঞ্জামিন। কিছুদিন হেমতাবাদ স্কুল থেকে পুরুলিয়ার একটি স্কুলে বদলি হয়েছিলেন বেঞ্জামিন কিন্তু নিজের প্রভাবে ফের ফিরে আসেন হেমতাবাদ আর্দশ হাইস্কুলেই। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে বহুবছর ধরেই এই ভুয়ো পরিচয় ব্যবহার করে চলেছেন বেঞ্জামিন হেমব্রম। পুলিশ জানিয়েছে ”বেঞ্জামিন হেমব্রমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যানের পরিচয় দেওয়া আটক ব্যক্তির প্রমাণপত্র পরীক্ষা করা চলছে।”
অন্যদিকে জলপাইগুড়ির মালবাজার থেকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরেক ভুয়ো মানবাধিকার কমিশন আধিকারিককে। ওই ব্যক্তি কমিশনের সদস্য পরিচয় দিয়ে প্রাইমারি স্কুলে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আদায় করত বলে জানা গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, কোচবিহারের মোস্তাফি পাড়ার বাসিন্দা ধৃত ওই ব্যক্তির নাম মৈনাক চক্রবর্তী। সে নিজেকে মানবাধিকার কমিশনের অফিসার পরিচয় দিয়ে প্রাইমারি স্কুলে চাকরি দেওয়ার নাম করে মেটেলির বাসিন্দা অপু সরকার নামে এক যুবকের থেকে টাকা নিয়েছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে তাতে আরও টাকা দেওয়ার দাবি জানায়। যুবক খোঁজ নিয়ে দেখেন, অ্যাকাউন্ট নম্বরটি একটি রিসর্টের। এরপরই তাঁর সন্দেহ হওয়ায় মেটেলি থানায় অভিযোগ জানান। রাতে পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করে। আর কে কে তার প্রতারণার জাল জড়িয়েছেন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পরপর একের পর এক ভুয়ো আধিকারিক গ্রেপ্তার হওয়ায় রীতিমতো নাজেহাল হতে হচ্ছে পুলিশকে।