Homeএখন খবরকপালের নাম গোপাল, ছিলেন মাওবাদী হলেন পুলিশকর্মী ! এবার লটারি কেটে...

কপালের নাম গোপাল, ছিলেন মাওবাদী হলেন পুলিশকর্মী ! এবার লটারি কেটে রাতারাতি কোটিপতি যজ্ঞেশ্বর

পলাশ খাঁ :– একেই বলে কপালের নাম গোপাল। ওই যে বলেনা, উপরওয়ালা জব দেতা হ্যায় তো ছপ্পর ফুঁড়কে দেতা হ্যায়! তেমনই অবস্থা যেন যজ্ঞেশ্বর বেসরার। একসময় ছিলেন মাওবাদী, সেখান থেকে পুনর্বাসন পেয়ে হয়েছেন শান্তিরক্ষক। সেই শান্তিরক্ষকেই লটারি কেটে রাতারাতি হয়ে গেলেন কোটিপতি। ঝাড়গ্রাম থানায় কর্মরত বছর আঠাশের পুলিসকর্মী যজ্ঞেশ্বর বেসরা লটারিতে এই কোটি টাকা পাওয়ার কথা জানতে পেরেই হতভম্ব হয়ে পড়েন। পরে সেই ঘোর কাটিয়ে যজ্ঞেশ্বর জানান টাকা হাতে পেলেই প্রথমে গ্রামের মাটির বাড়িটি পাকা করবেন পাশাপাশি কয়েক বিঘা চাষের জমি কিনবেন, পরে কি করবো তা পরিবারের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেবো।

ওডিশা বর্ডারের ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর ১ ব্লকের রেহেড়াঘুটু গ্রামের বাসিন্দা যজ্ঞেশ্বর বেসরা গত প্রায় সাড়ে ছয় বৎসর ধরে ঝাড়গ্রাম থানায় স্পেশাল হোমগার্ড পদে চাকুরী করছেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে ঝাড়গ্রাম স্টেশন সংলগ্ন একটি দোকান থেকে ডিয়ার লটারি ৩০ টাকা দামের একই সিরিজের ৫টি টিকিট ১৫০ টাকায় কেটে ছিলেন। সঙ্গে ছিল বন্ধু ভবেশ মাণ্ডি। দুজনেই লটারি কাটেন। ভাগ্য খুলে গেল মাত্র ৬ ঘন্টা পর। দুপুর ১টায় যজ্ঞেশ্বর হলেন কোটিপতি! যজ্ঞেশ্বর বেসরা বলেন,’দুপুরে আমি জামদায় জঙ্গলমহল উৎসব দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানের একটি লটারি দোকানে রেজাল্ট থেকে নিজে বুঝতে পারছিলাম ঠিক না ভুল। কার্যত চমকে গিয়েছিলাম। কাউকে কিছু না বলে সোজা থানার ব্যারাকে চলে আসি।’ কোটিপতি হওয়ার পর থেকে থানায় এখন সকলের মুখে মুখে যজ্ঞেশ্বরের নাম। খুশি তাঁর পরিবারের সদস্য থেকে থানার সহকর্মীরা।

জানা গিয়েছে, বাম আমলে জঙ্গলমহলে অনুন্নয়ন আর বঞ্চনার প্রতিবাদে সারা জঙ্গলমহল জুড়ে মাওবাদী আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনে ২০০৮ সালে গা ভাসিয়েছিলেন এই যজ্ঞেশ্বর বেসরাও। স্থানীয় স্কুলের অষ্টম শ্রেনী পাশ যজ্ঞেশ্বর মাওবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জঙ্গলমহলের উন্নয়ন ঘটাতে চেয়েছিলেন। সরাসরি মাও কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে ওড়িশার বারিপাদার সুলিয়াপাদা থানায় তার নামে তিনটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। পুলিশের হাত থেকে রেহায় পেতে সেই সময় তিনি সবার অলক্ষে পালিয়ে যান বেঙ্গালুরুতে। সেখানে গিয়ে বেশ কয়েক বছর গাড়ি চালানোর কাজ করতেন৷ পরে রাজ্যে পালা পরিবর্তনের পর মাওবাদীদের উপর থাকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা শিথিল করা হয় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। ফিরে আসেন বাড়ি।

২০১৪ সালে মুখ্যমন্ত্রীর আত্মসমর্পণ প্যাকেজে তিনি স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি পেয়ে যান। চাকরী পেয়েই বিয়েও করেন তিনি। বাড়িতে বর্তমানে বাবা মা, দাদা বৌদি, বিবাহিত স্ত্রী এবং বছর তিনেকের এক কন্যা রয়েছে। চাকুরী পাওয়ার প্রথম থেকেই তিনি ঝাড়গ্রাম থানায় কর্মরত রয়েছেন। জানা গিয়েছে, লটারি কাটা প্রথম থেকেই নেশা ছিল যজ্ঞেশ্বরের। গত দেড় বছর আগেও তিনি লটারিতে ৪৫ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। তবে কোটি টাকা পাবেন স্বপ্নেও ভাবেননি।

রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যজ্ঞেশ্বর জানান, ” আমার এই চাকুরী থেকে যে টুকু আয় হয় তাতে সংসার চালাতেই ফুরিয়ে যায়৷ বাবা দাদা পৈতৃক সামান্য জমি রয়েছে তাতে চাষাবাদ করেন। তাই লটারির এই টাকা হাতে পেলেই আগে কয়েক বিঘা চাষের জমি কিনবো৷ পাশাপাশি গ্রামের মাটির বাড়ির ভেঙে পাকা বাড়ি বানাব। এটাই প্রথম ইচ্ছা রয়েছে। বাকি টাকা কি করবো তা বাবা মা দাদা বৌদি আর স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করবো।

RELATED ARTICLES

Most Popular