নিউজ ডেস্ক: বারান্দায় শায়িত আছে মৃতদেহটি। কয়েক ঘন্টা আগে মারা গিয়েছেন তিনি। আর কিছুক্ষন বাদেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হবে শ্মশানে। তার আগে মৃতের ছেলে নিয়ে আসলেন একটি হাতিকে। হাতিটি দু’বার শুঁড় তুলে আর্তধ্বনি করল। তার দু’চোখ বেয়ে তখন প্রিয় মানুষটির জন্য ঝরে পড়ছে অঝোর কান্না। বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে এমনই একটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে। এমনকি বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে সেই ভিডিও। হতবাক মানুষ, একটি প্রাণী! সেও অনুভব করে চির বিচ্ছেদের বেদনা!
কেরালার কোটায়াম জেলা থেকে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভিডিও যেখানে এমনই দৃশ্য নজরে পড়েছে। মারা গেছে যে মানুষটি তিনি মাহুত। হাতিটির নাম পালার ব্রহ্মদাঁতন। প্রয়াত মাহুতের নাম দামোদরন নায়ার ওরফে ওমানাচেত্তন।গত ২৫ বছর ধরে নিরন্তর সম্পর্ক দুজনের যার চির বিচ্ছেদ ঘটে গেল বৃহস্পতিবার। শেষ শয্যায় হাতিটি তাঁর নায়ারের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে গেল। যা দেখে থাকতে পারেননি দামোদরের ছেলে। হাতিটির দাঁত ধরে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেল তাঁকেও।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে ব্রহ্মদাঁতন। বারান্দায় সাদা কাপড়ে মোড়া রয়েছে দামোদরণের দেহ। আশপাশ থেকে ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। দেহের সামনে এসে শুঁড় উঁচিয়ে যেন শেষবারের জন্য শ্রদ্ধা জানাল সে। ওই শুঁড় দিয়ে শেষবারের জন্য ছুঁয়ে দিল দেহ। ২৫ বছরের সম্পর্কচ্ছেদে এই মুহুর্ত দেখে ব্রহ্মদাঁতনকে জড়িয়ে ধরলেন দামোদরণ ছেলে রাজেশ। সদ্য পিতৃ-হারা সন্তানের একমাত্র সহমর্মী যেন সে।এই হৃদয় ছোঁয়া ভিডিওটি ট্যুইটারে ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিসেস (আইএফএস) কর্মকর্তা পারভীন কাসওয়ান পোস্ট করেছিলেন।
স্থানীয় প্রতিবেদনের মতে, দামোদরণ নায়ার প্রাণীদের বিশেষত হাতিদের খুব পছন্দ করতেন এবং ছয় দশক ধরে তারা বংশ পরম্পরায় হাতির যত্ন নিচ্ছেন।এরপর ৩ জুন, ৬০ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।দামোদরণের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী এদিন মৃত্যুর পর ব্রহ্মদাঁতনকে তাঁর দেহের সামনে নিয়ে যান আত্মীয় এবং অন্য মাহুতরা।
পরবর্তীকালে ব্রহ্মদাঁতনের মালিক হন ওই অঞ্চলের বাসিন্দা রাজেশ পালাট্টু। সংবাদ সংস্থা আইএএনএস-কে তিনি বলেন, ব্রহ্মদাঁতন শুঁড় দিয়ে দামোদরণের নিথর দেহ ছোঁয়ে। শুঁড় উঁচিয়ে শ্রদ্ধাও জানায় সে। এই দৃশ্য দেখে দামোদরণের স্ত্রী ভেঙে পড়েন। ব্রহ্মদাঁতনের এই ভূমিকা দেখে আমরাও অবাক। কান্না চেপে রাখতে পারছিলাম না। এই দৃশ্য সাক্ষী থাকা সত্যিই খুব কঠিন। দুনিয়া থেকে পবিত্র সম্পর্ক, দুর্লভ দৃশ্য ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। লাখ টাকা খরচ করেও এমন দৃশ্য নজরে পড়েনা যা আমাদের অন্তর থেকে কাঁদায় কিংবা হাসায়। সেরকমই এক দৃশ্যের স্বাক্ষী রইল দামোদরের পরিবার ও প্রতিবেশীরা।