অশ্লেষা চৌধুরী: সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত গড়ালেই কুয়াশার দাপট বাড়ছে সারা বাংলার সঙ্গে পাহাড়তলি ও ডুয়ার্স এলাকায়। পশ্চিমি ঝঞ্ঝার কারনে উদ্ভুদ ঘন কুয়াশা ঝেঁপে নামছে ভোর অবধি বসে থাকছে। কুয়াশার কারণে যেমন উত্তরবঙ্গের বিমানের ওঠা নামা বাতিল করতে হচ্ছে তেমনই কুয়াশার দাপটে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল, ঘটছে দূর্ঘটনা। আর এরকমই একটি দুর্ঘটনায় সোমবার রাতে একটি বুনো হাতি প্রান হারালো। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাটে।
জানা গিয়েছে, ৪৮ নম্বর এশিয়ান হাইওয়েতে দ্রুতগতিতে ছুটে চলা লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয় একটি বুনো মাকনা হাতির। হাতিটির বয়স পনেরো বছর বলে জানা গিয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাটের জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান লাগোয়া এশিয়ান হাইওয়েতে এই মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনাটি ঘটে। জানা গিয়েছে সেই সময় হাতিটি রাস্তা পারাপার হচ্ছিল।
এদিন রাতে এলাকার সরকারি করাত মিলের সংলগ্ন এশিয়ান হাইওয়ের পাশের বাসিন্দারা হঠাৎ একটি বিকট শব্দ শুনতে পান। তারা বাইরে বেরিয়ে এসেই দেখতে পান মর্মান্তিক দৃশ্যটি। তারা দেখেন প্রচন্ড যন্ত্রনায় হাতিটি কাতরাচ্ছে। তারা দেখতে পেয়েই বন দপ্তরে খবর দেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান জলদাপাড়া বনদপ্তরের অতিরিক্ত বন্যপ্রাণ আধিকারিক ও বনকর্মীরা। সংঘর্ষের অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে, লরিটির ধাক্কায় প্রকান্ড হাতিটি প্রায় পনেরো ফুট দূরে ছেঁচড়ে যায়। প্রাথমিক পরীক্ষার পর বনকর্তাদের অনুমান কোমরের হাড় ভেঙে গিয়েছে হাতিটির। বন দপ্তরের জলদাপাড়া বনবিভাগের পক্ষ থেকে হাতিটিকে চিকিৎসা করার ও সেখান থেকে উদ্ধার করে প্রাণে বাঁচানোর চেষ্টা চালানো হয় রাতভর। কিন্তু বন দপ্তরের শত চেষ্টা ব্যর্থ করে অবশেষে মঙ্গলবার সকাল সাতটা নাগাদ দুর্ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় হাতিটির। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখছে বন দপ্তর।
প্রসঙ্গত, ডুয়ার্সে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ট্রেন দুর্ঘটনায় হাতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে। আশেপাশের জঙ্গল থেকে প্রায় দিনেই হাতিরা কখনও দল বেঁধে তো কখনও দল ছুট হয়ে রেল লাইনের ওপরে উঠে আসে। আবার কখনও রেললাইন পারাপার করে। সেই সময় ট্রেনের ধাক্কায় বেঘোরে প্রাণ হারাতে হয় অনেক হাতিকে। ট্রেনের গতি সরকার বেঁধে দেওয়ার পরেও এরকম দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকত। কিন্তু করোনা আবহে দীর্ঘদিন ট্রেন বন্ধ থাকায় হয়তো একটু হাফ ছেড়ে বেঁচেছিল হাতিরা। কিন্তু তাদের সেই সুখ দীর্ঘস্থায়ী হল না। ট্রেন না থাকায় লরির ধাক্কায় নিজেদের এক সঙ্গীকে হারিয়ে ফেলল তারা।
কয়েকদিন আগেই এই একই জাতীয় সড়কের ওপর গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রান হারিয়েছিল একটি লেপার্ড শাবক। মৃত্যুর পর রহস্য জনক ভাবে উধাও হয়ে যায় সেই শাবকটির দেহ। পুলিশ কুকুর নামিয়ে, ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েও উদ্ধার হয়নি সেটি। সেই ঘটনার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই ফের এক বন্যপ্রানের মৃত্যু ঘটল। স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বিগ্ন পশুপ্রেমীরা।