নিজস্ব সংবাদদাতা: রাত আটটার সেই জনপ্রিয় শো আবার চালু করেছিল জি-২৪ ঘন্টা। শুরু করেছিল অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই কিন্তু না, আর তাঁকে দেখা যাবেনা। আর তিনি বলবেন না, নমস্কার! আপনার রায়ে আপনাকে স্বাগত। গত দু’ দশকেরও বেশি সময় ধরে সংবাদ জগতের এই জনপ্রিয় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করে এসেছিলেন অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝে অবশ্য সরে যান সেখান থেকে। জি-২৪ ছেড়ে চলে আসেন আনন্দবাজার পত্রিকার ডিজিটাল প্রকাশনীর সম্পাদক হয়ে। এরপর এই নির্বাচনের আগে একটি সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেল টিভি নাইন তাঁকে বাংলা সম্প্রচারের সম্পাদক করে নিয়ে আসেন কিন্তু সেও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
এই কদিন আগেই ফের তাঁকে জি-২৪ঘন্টায় ফিরিয়ে আনে কর্তৃপক্ষ। পুরানো জায়গাতে ফিরেই ফের স্বমহিমায় ফিরে এসেছিলেন ‘আপনার রায়’ নিয়ে কিন্তু বজ্রপাত হল রবিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ রোখার জন্য শুরু হওয়া বাংলার দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউন শুরু হওয়ার দিনটিতেই করোনা যুদ্ধ জয় করেও তারই অভিঘাতে পরাজিত হলেন অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই মর্মান্তিক খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই যেন পরমাত্মীয় বিয়োগের যন্ত্রনায় শোকস্তব্ধ বাংলার সংবাদপ্রেমী মানুষ। সেই হাসি খুশি প্রাণবন্ত মানুষটি যখন স্টুডিওর মধ্যে বসে থাকা তাবড় তাবড় নেতাদের উত্তপ্ত তর্কবিতর্কের মধ্যেই নিজের সেই মূল্যবান হাসিটি নিয়ে বলতেন, “প্লিজ প্লিজ আর নয়, আবার হবে একটু পরে। হ্যাঁ ঠিক এই জায়গা থেকেই শুরু করব।” তারপর অতি দ্রুততার সঙ্গে দর্শকদের দিকে তাকিয়ে বলতেন, কোথাও যাবেননা প্লিজ, ফিরে আসছি, এখুনি ফিরে আসছি, ছোট একটা বিরতির পর। দর্শক বসে থাকতেন, ঠায় বসে থাকতেন। এখনও বসে আছে কিন্তু না, আর যে অঞ্জন ফিরবেননা!
গত কয়েকদিন ধরেই কলকাতার ইএম বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা জয় করার পরে সংক্রমিত হন পরবর্তী সমস্যায়। অবস্থা ক্রমশ সঙ্কটজনক হয়ে পড়লেও চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎই তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। রবিবার রাত সাড়ে নটা নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিলেন অঞ্জনবাবু। প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক বিরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুই সন্তান রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার মেজ ভাইকে হারিয়েছিলেন।আর এদিন মুখ্যসচিবের ভাইয়ের মৃত্যু হল কোভিডে।
দীর্ঘ ৩৫ বছরের সাংবাদিক জীবন অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রিন্ট মিডিয়া থেকে বৈদ্যুতিন ও ডিজিটাল মিডিয়া সর্বত্রই তাঁর চূড়ান্ত সাফল্যের নজির। সম্পাদক হিসেবে যেখানেই গেছেন ফলিয়ে এসেছেন মুক্তো।
তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাংলার সাংবাদিক মহলে। করোনা জয় করেও ভুগতে শুরু করেন করোনা পরবর্তী সমস্যায়। শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। প্রায় বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিলেন তার পোস্ট কোভিড কমপ্লিকেশনে আরও কিছু সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার শারীরিক অবস্থাকে মাথায় রেখে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা হয়েছিল তাঁকে। গত সপ্তাহ থেকেই অতি সঙ্কটজনক ছিল অঞ্জনবাবুর শারীরিক অবস্থা। তারপর সব শেষ!বিরতির পরে আর ফিরলেননা অঞ্জন।