নিজস্ব সংবাদদাতা; আসানসোল:নিজের স্ত্রীর যাতায়াতের কষ্ট দেখে পাহাড় কেটে একাই একটা রাস্তা বানিয়ে ফেলেছিল দশরথ মাঝি। বিশ্ব জেনেছিল সেই পত্নী প্রেমের কথা। এবার এক মাতৃপ্রেমের ঘটনা এই পশ্চিম বাংলার রানীগঞ্জে। মায়ের পানীয় জল আনার কষ্ট দেখে নিজের বাড়িতে একটি পাতকুয়া খনন করল স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মেয়ে।
ঘটনা রানীগঞ্জের বক্তারনগর রেলগেটের বাসিন্দা ববিতা সরেন। দীর্ঘক্ষন লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে, অনেক দূর থেকে জল আনা মায়ের কষ্ট ববিতাকে বিচলিত করতো। তাই মায়ের জল কষ্ট দূর করার জন্য তার ভাই ও দিদির সহযোগিতায় নিজের বাড়িতেই একটি পাতকুয়া খনন করে ফেলেছে। কদিন ধরে জলেরও দেখা মিলছে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ের কাণ্ডে বিস্মিত এলাকাবাসী।
রানীগঞ্জের বক্তারনগর রেলগেট সংলগ্ন একটি আধিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় বাড়ি ববিতার। মা বাবা দুবোন এক ভাই নিয়ে তাদের পরিবার। বাবা একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে সামান্য বেতনে কাজ করেন । মা গৃহকর্মী। সংসারের পানীয় জল মা আনে। পাড়ায় তিনটে পানীয় জলের কল থাকলেও তাদের বাড়ি পাড়ার এক প্রান্তে হওয়ায় সেখান থেকে অসুস্থ মায়ের পক্ষে জল আনাও বিরাট কষ্টকর। দীর্ঘক্ষন লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে অনেক দূর থেকে জল আনা ববিতার মনে দারুন কষ্ট হত। কিন্তু উপায় তো কিছু নেই! বাবার স্বল্প আয়, সেই থেকে মেপে মেপে চালাতে হয় সংসার। বাড়িতে টিউবওয়েল বসানোর সামর্থ নেই। তাই এক দিন ববিতা সিদ্ধান্ত নিল বাড়িতে নিজেই পাতকুয়া করবে।
সিদ্ধান্ত মত কাজ, শুরু করল কুয়া খোড়ার কাজ। মেয়ের সিদ্ধান্ত কে স্বাগত জানিয়ে প্রথমে কুয়ো খোড়ার হাত দিয়েছিলেন বাবা। কয়েক মাস ধরে কাজ করতে করতে ছয় ফুট মত গর্ত করেন নিজের বাড়িতে। যেহেতু পড়াশুনোর জন্য বর্ধমানে থাকতো, তাই ছুটির দিন পেলেই বাড়ি ফিরে কুয়া কাটার কাজে ব্যাস্থ হয়ে পড়ত। কিন্তু এই লক ডাউনে বাড়িতে থাকার সুবাদে কুয়াটির প্রায় ১৮থেকে ১৯ ফুট মাটি কেটে ফেলেছে।
এখন কুয়াতে জলের দেখাও মিলেছে। বেশ কিছু দিনের মধ্যে কুয়োর জল ব্যবহার করতে পারবে বলেও জানিয়েছে ববিতা। মেয়ের এই কর্মকান্ড দেখে হতবাক এলাকার মানুষ। মায়ের জল আনার কষ্ট দেখে মেয়ে যে এমন কাজ করতে পারে তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। মেয়ের উদ্যোগে খুশি তার মা। আর ইচ্ছে থাকলে উপায়ের এই উদাহরন উদ্বুদ্ধ করেছে প্রতিবেশীদের।