Homeএখন খবরসন্তানকে বাঁচাতেই নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছিল গর্ভিণী মৃত ডলফিন, মানুষের অজ্ঞতাই মৃত্যুর কারন

সন্তানকে বাঁচাতেই নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছিল গর্ভিণী মৃত ডলফিন, মানুষের অজ্ঞতাই মৃত্যুর কারন

ময়নাতদন্ত! পেটের ভেতরে শিশু ডলফিন 

নিজস্ব সংবাদদাতা: মর্মান্তিক তথ্য উঠে আসল ময়নাতদন্তে। জানা গেল পুর্ব মেদিনীপুরের সেচ খালে ঢুকে পড়া গাঞ্জেটিক ডলফিনটি আসলে পুর্ন গর্ভিণী ছিল আর সন্তানের নিরাপদ প্রসবের জন্যই সে দলছুট হয়ে ঢুকে পড়েছিল অপ্রশস্ত সেচ খালে। শনিবার সকালেই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় ডলফিনটিকে। মানু্ষের পাতা মাছ ধরা ফাঁদে আটকে পড়েছিল সেটি। এরপর ময়নাতদন্তে জানা যায় গর্ভিণী ছিল ডলফিনটি।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সারা বছর ধরেই এই ডলফিন প্রসব করলেও সাধারন ভাবে ডিসেম্বর মাস থেকে জানুয়ারি এবং মার্চ মাস থেকে মে মাসেই এদের প্রসবের হার বেশি। প্রসবের সময় এর উত্তাল জল স্রোত কিংবা মোহনার চাইতে নদির শান্ত শাখা প্রশাখায় উঠে আসতে পছন্দ করে। মিলনের সময়েও তাই। উঠে আসে স্বচ্ছ গভীর খাড়ি এলাকায়। প্রায় দশমাস সন্তানকে গর্ভে ধারন করে এরা। আর ডলফিন তার দশবছর বয়সে যৌন মিলনে সক্ষম হয়।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
সব মিলিয়ে তিনটি বিষয় পরিষ্কার, প্রথমত গর্ভিণী ডলফিনটির বয়স ১১বছর বা তার বেশি। দ্বিতীয় একেবারে হিসাব মিলিয়েই প্রসবকাল এগিয়ে এসেছিল তার অর্থাৎ গর্ভস্থ সন্তানের বয়স দশমাস হয়ে গেছিল আর তৃতীয়ত নিরাপদ প্রসবের জন্য খাড়ি মনে করেই সে সেচ খালে ঢুকে পড়েছিল।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
পাশাপাশি এই মর্মান্তিক মৃত্যু মানু্ষের তথা বনদপ্তরের অজ্ঞতাকেই আরও একবার উপহাস করে গেল। বনদপ্তর ধারনার মধ্যেই রাখেনি যে ডলফিনটি গর্ভিণী হতে পারে। যদি হত তবে আরও সতর্কতা অবলম্বন করত। উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করা বনদপ্তরের পাহাড় প্রমান অজ্ঞতা এটাই যে তারা উপকূলীয় বন্যপ্রাণ বা জলের প্রানীগুলি সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল নয়। যে কারনে কোনও ধারনা ছাড়া একটি গর্ভিণী ডলফিনকে বোকার মত ভুটভুটি নিয়ে নদিতে ফেরাতে তাড়া করেছিল।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
পুর্ব মেদিনীপুর জেলার ভূপতিনগর  থানা এলাকার উদাখালি সেচ খালে  বৃহস্পতিবার যখন ডলফিনটিকে দেখা গেল তখনই যদি বনদপ্তর অনুমান করত যে এটা গর্ভিণী হতে পারে তাহলে একটু সতর্ক হতে পারত। সেটা না বুঝেই শুক্রবার যখন তাকে ঘরে ফেরানোর তোড়জোড়ও শুরু হয় সে তখন আরও ৫কিলোমিটার উজানে চলে আসে বাসুদেব বেড়িয়া গ্রামপঞ্চায়েতের উদবাদলের খালে। রসুলপুর নদি থেকে দুরত্ব বেড়ে দাঁড়িয়ে ছিল ১৩কিলোমিটার।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
শুক্রবার খালে জোয়ারের জল ঢুকতেই একটি ভুটভুটি নিয়ে বনদপ্তরের কর্তারা ড্রাইভ শুরু করে ডলফিনটিকে কালিনগরের খালের মুখ দিয়ে রসুলপুর নদিতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। 
ইতিমধ্যেই  ৪৮ঘন্টা ধরেই খালের দুপাড় থেকে এই চিৎকার চেঁচামেচি শুনেছে ডলফিন। তার শ্বাস নেওয়ার প্রক্রিয়ায় ভেসে ওঠাকে খেলা বলে ধরে নিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েছে জনতা। সেই চিৎকারে ভয় পেয়ে বারবার জলের তলায় চলে যেতে হয়েছে তাকে। সন্তানকে পেটে ধারন করেও একটুও বিশ্রাম জোটেনি তার।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
আরও মর্মান্তিক যে অবিশ্রান্ত ওই চিৎকার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডলফিনের রসদ সংগ্রহেও। ডলফিনের খাদ্য মাছ। একে খালগুলিতে ডলফিনের জন্য পর্যাপ্ত মাছের অভাব তার ওপর জনতার হৈচৈ য়ে ভীত সন্ত্রস্ত ডলফিন পর্যাপ্ত খাদ্য সংগ্রহ করতে পারেনি এমনটাই মনে করছেন বনদপ্তরের কর্তারা। রসদ ও বিশ্রামহীনতা ক্লান্ত করে দিয়েছিল ডলফিনটিকে।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এরপর বনদপ্তর ভুটভুটিতে ড্রাইভ শুরু করলে ডলফিন ছুটতে থাকে। কিন্ত সর্বনাশের প্রহর ঘনিয়ে সেটি ঢুকে পড়ে আরও ছোট একটি খালে নিতুড়িয়াতে। সন্ধ্যায় আলো কমে যাওয়ায় হাল ছেড়ে দেয় বনদপ্তর। শনিবার আরও ভেতরে পাওয়া যায় মাছ ধরার জালে জড়ানো দেহ।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
শুধু জলই নয়, বনদপ্তরের এই মর্মান্তিক অজ্ঞতার স্বাক্ষী থেকেছে জঙ্গলও। মাত্র কয়েকমাস আগেই ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুরে হাতির পালকে বনকর্মীরা তাড়া করার সময় মাঠের ওপর ঝুলে পড়া বিদ্যুতের তার স্পর্ষ করায় মৃত্যু হয়েছিল দুটি পুর্নগর্ভা হস্তিনীর। তাদের আর্ত চিৎকারে মানুষ ছুটে না গেলেও পালের দাঁতালটি রক্ষা করতে ছুটে গেলে মৃত্যু হয় তারও। ঘটনায় না বিদ্যুৎদপ্তর না বনদপ্তর কারও শাস্তি হয়নি। ডলফিনের ক্ষেত্রেও হবেনা হয়ত।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
ভারত সরকার এই গাঞ্জেটিক ডলফিনকে জলের মধ্যে থাকা জাতীয় প্রানী হিসাবে ঘোষনা করেছেন অনেকদিন কিন্তু ঘটনা হল বাস্তবে মানু্ষের সভ্যতা বিকাশের তাড়নায় কিংবা উন্নয়নের স্বার্থে জীবন বিপন্ন এদের। এদের স্বাভাবিক বিচরন ক্ষেত্র ব্রহ্মপুত্র মেঘনা যমুনা গঙ্গা বা সিন্ধু অববাহিকায় তৈরি হওয়া ৫০টির বেশি বাঁধ এবং অপরিকল্পিত সেচ প্রণালী এদের বিপন্ন করে তুলেছে।    

RELATED ARTICLES

Most Popular