নিজস্ব সংবাদদাতা: আর মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জোরালো ঝড়বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। তার আগে সোমবার রাতেই বেশ কয়েকটি ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করলেন জেলা শাসক রশ্মি কোমল। এদিন দিনভর বিপর্যয়ের আগে এবং পরে বিপর্যয় মোকাবিলা নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে দফায় দফায় প্রস্তুতি বৈঠক সারার পর রাতের দিকে বিপর্যয় ঘটতে পারে এমন কিছু জায়গার প্রস্তুতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে বেরিয়ে চলে আসেন কেশিয়াড়ীতে।
ততঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ শেষ অবধি ঝাঁপাতে চলেছে ওড়িশা উপকূলে। এখনো অবধি পাওয়া খবর অনুযায়ী যশের সম্ভাব্য ল্যান্ডফল বা স্পর্শভূমি হতে চলেছে ওড়িশা উপকূলের বালেশ্বর আর চাঁদিপুরের মাঝামাঝি ইঞ্চুদি (Inchudi) তটভূমিতে। যদিও এর ফলে বাংলার বেশিরভাগ এলাকাই ঝড়ের দাপট থেকে রক্ষা পেলেও পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের তটভূমি সংলগ্ন এলাকায় বিপদ থেকেই যাচ্ছে। দিঘা সংলগ্ন কাঁথি এগরার মত ঝড়ের দাপট থাকবে পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুর, দাঁতন, বেলদা, নারায়নগড় ও কেশিয়াড়ীতে।
তবে ঝড়ের দাপট জেলার মধ্যে কেশিয়াড়ীতেই বেশি হওয়ার সম্ভবনা বেশি হবে বলেই মনে করা হচ্ছে কারন ভুবনেশ্বরের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে যশ ওড়িশার বালেশ্বর, ভদ্রক ও ময়ূরভঞ্জ জেলার ওপরেই সাংঘাতিক আঘাত হানতে চলেছে। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম ও গোপীবল্লভপুর থানা ওড়িশার ওই অঞ্চলের সন্নিহিত আর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ী থানা রয়েছে এই দুই থানা ঘেঁসেই।
সম্ভবতঃ এই দিকটাই অনুমান করেই কেশিয়াড়ী সহ সংলগ্ন এলাকায় বিপর্যয় মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। সোমবার প্রায় মধ্যরাতে কেশিয়াড়ী পৌঁছে যান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাশাসক রশ্মি কোমল। কেশিয়াড়ী ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় স্কুল বাড়ি ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গুলি তে আশ্রয়স্থল তৈরি করে অসংখ্য মানুষের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে। সেই ব্যবস্থা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে কেশিয়াড়ীতে চলে আসেন জেলাশাসক। অতিরিক্ত জেলাশাসক ছাড়াও তাঁর সঙ্গে ছিলেন সঙ্গে ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সৌগত রায় এবং কেশিয়াড়ী থানার আইসি বিশ্বজিৎ হালদার ।
কেশিয়াড়ী ব্লকের আগরপাড়া ও কাঞ্চনপুর এবং রজনীকান্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় শিবির পরিদর্শন করার পাশাপাশি জেলাশাসক খাজরা গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার আশ্রয় শিবির পরিদর্শন করেন। প্রাথমিক ভাবে ঠিক করা হয়েছে ব্লকের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষকে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে সরিয়ে আনা হবে। পরে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিন রাতে বেশকিছু মানুষকে নিয়েও আসা হয়েছে আশ্রয় শিবিরে। তাঁদের জন্য পানিয় জল, পর্যাপ্ত শুকনো খাবার এবং মাস্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে ঝড়ের গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে তটভূমিতে ঝাঁপাতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এরফলে পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘায় ঝড়ের গতি প্রতিঘন্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকতে পারে। এগরা, দাঁতন, মোহনপুর, বেলদায় ৭৫ থেকে ৮০ র মধ্যে নারায়নগড়, ডেবরা, পিংলা, সবংয়ে ৫০ থেকে ৬৫, খড়গপুর-মেদিনীপুরে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইতে পারে। কিন্তু ঝড়ের পৃষ্টদেশ কেশিয়াড়ী ছুঁয়ে গেলে এখানে ঝড়ের অভিঘাত বেশি হতে পারে যা দিঘার সমান কিংবা তারও বেশি। তবে সবটাই এখনও অবধি অনুমান কারন ঝড়ের চোখ বা কেন্দ্র এখনও নির্দিষ্ট হয়নি। এটা নির্দিষ্ট হলেই ঝড়ের আশেপাশের অভিঘাত অঞ্চল ও অভিঘাতের গুনগত মান মাপতে সুবিধা হবে। তবে উল্লেখিত প্রতিটা থানা এলাকাতেই ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ চলবে এবং সেটাও বিপর্যয়ের কারন হয়ে দাঁড়াবে।