নিজস্ব সংবাদদাতা: ‘ছত্রধর মাহাত জঙ্গলমহলের মানুষের জন্য আন্দোলন করেছিলেন কিন্তু তৃনমূল তাঁর সংসারটাকে তছনছ করে দিয়েছে। এখন অবশ্য তাঁর স্ত্রী ছেলের কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।’ ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরে এসে এমনটাই বললেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দিলীপের এই কথার মধ্যে ছত্রধর ও বিজেপির মধ্যে বোঝাপড়ার ইঙ্গিত পাচ্ছে রাজনৈতিক মহল।
তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র ছত্রধর মাহাত সম্প্রতি NIA-র তদন্তের আওতায় রয়েছেন। বর্তমানে NIA আদালতের দ্বারস্থ ছত্রধরকে গ্রেপ্তার করতে চেয়ে ফলে যথেষ্টই চাপে রয়েছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি কী NIA-র ফাঁদ থেকে বেরুতে চাইছেন? উঠছে সেই প্রশ্ন। না হলে দিলীপ ঘোষের মত ব্যক্তি যেখানে কথায় কথায় তৃণমূলের নেতাদের আদ্যশ্রাদ্ধ করে বেড়ান সেখানে হঠাৎ ছত্রধর মাহাতকে জঙ্গলের মানুষের জন্য আন্দোলনকারী নেতা হিসেবে বর্ননা করলেন?
রাজনীতিকদের মতে, দিলীপ ঘোষ বিষয়টা নিয়ে ছত্রধর মহাতর প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে পারতেন কিন্তু ছত্রধরের আন্দোলনকে প্রশংসা করা যা কিনা মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত এবং বিজেপি যেখানে মাওবাদীদের চূড়ান্ত বিরোধী সেখানে এই প্রসঙ্গ উত্থাপন যথেষ্টই প্রাসঙ্গিক। হতে পারে ছত্রধর মাহাতকে দিলীপ ঘোষ কোনও সঙ্কেত পাঠালেন অথবা ইতিমধ্যেই বিজেপির সঙ্গে ছত্রধর মাহাতর কথাবার্তা চলেছে। অন্যদিকে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় সারা ভারতেই দেখা গেছে ইডি, সিবিআই ইত্যাদি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির হাত থেকে বাঁচতে বিরোধী দল থেকে অনেকেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন এবং আশ্চর্য জনক ভাবেই তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তের গতি অতি মাত্রায় শ্লথ হয়ে গেছে।
ঘটনা হচ্ছে ছত্রধর মাহাত জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর এমনকি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর বিজেপি নেতারা তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কথা বলেননি। কাকতলীয় ভাবেই যেই ছত্রধর মাহাত সক্রিয় হয়ে উঠলেন অমনি NIA তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ছত্রধর নিজেও দাবি করেছেন যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই বিজেপি NIA কে ব্যবহার করছে। এখন সেই প্রতিহিংসার ফাঁদ থেকে বের হতে মাহাত বিজেপি মুখি হন কিনা সেটাই এখন দেখার।
এদিন প্রাসঙ্গিক ভাবে তৃণমূলের বিদ্রোহী নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু আধিকারীকে মেদিনীপুরের নেতা বলে উল্লেখ করেছেন দিলীপ ঘোষ। আগামী দিনে জঙ্গলমহলের নেতা বাংলা শাসন করবে এমনটাই দাবি করে ঘোষ বলেন, ‘আরেকজন রয়েছেন মেদিনীপুরের নেতা। যাঁর ছবি দেখা যায়। সেই শুভেন্দু অধিকারী। তাঁকে তাঁর দলের লোকেরাই ঠেলে ঠেলে বিজেপিতে পাঠাচ্ছে। তিনি নিজে বলেননি যে বিজেপিতে যোগ দেবেন কিন্তু তাঁর দল তাঁকে পাঠিয়েই ছাড়বে।”এরপর তিনি বলেন, ‘আমাদের দলে যারা আছে তারাই যথেষ্ট। এরপরও যারা আমাদের দলে আসতে চান তাঁদের স্বাগত। বিজেপি একটি বৃহৎ পরিবার এখানে সবার ঠাঁই হবে।
সোমবার গোপীবল্লভপুরের আমরা ক’জন পুজো কমিটি’র জগদ্ধাত্রী পুজো পরিদর্শন কর্মসূচিতে দিলীপ ঘোষ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঝাড়গ্রাম লোকসভার সাংসদ কুনার হেমব্রম, বিজেপির ঝাড়গ্ৰাম জেলা সভাপতি সুখময় সৎপতি, জেলার সম্পাদক অবনী ঘোষ প্রমুখরা। নামেই পুজোর পরিদর্শন, আক্ষরিক অর্থে বিজেপির জনসভাতেই রূপান্তরিত হয় ওই অনুষ্ঠান। সভায় উপস্থিত জনতাও উৎসাহ দেখিয়েছেন এই রাজনৈতিক চর্চায়।