নিজস্ব সংবাদদাতা:
মাস্ক কোথায়? পুলিশের প্রশ্নে আমতা আমতা করেন সবাই। আর সবারই প্রায় একই উত্তর হোটেলে মাস্ক ফেলে এসেছেন। কেউ কেউ পকেট হাতড়েছে আর বলেছেন, এই যা! মাস্ক কোথায় গেল ? মহিলারা আতিপাতি করে খুঁজছেন পার্স, মনে করে হোটেল থেকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন বলছেন কিন্তু এখন কেউ মনে করতে পারছেননা। পুলিশের তরফ থেকে মাস্ক দিয়ে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হল থানায়। আর এভাবেই করোনা বিধি না মেনে বেপরোয়া ঘোরাফেরার জন্য ৩০জন পর্যটককে আটক করল দিঘা পুলিশ। এদের বেশিরভাগেরই বিরুদ্ধে মাস্ক না পরেই সৈকতে ঘোরার অভিযোগ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার মিলিয়ে মোট ৩০জনকে আটক করার কথা জানিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। এরই পাশাপাশি করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট কিংবা সম্পূর্ণ ভ্যাক্সিনেশন রিপোর্ট না থাকায় শতাধিক পর্যটককে দিঘায় ঢুকতে না দিয়ে ফেরৎ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেই জানা গেছে। ধিরে ধিরে লকডাউন সংক্রান্ত নিয়ম শিথিল ও রাজ্যে করোনার প্রকোপ কমায় পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে দিঘার সৈকতে। সব দিক মাথায় রেখে প্রশাসনের নির্দেশ ছিল যথাযথ করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মেনে আনন্দ করুন পর্যটকরা। কিন্তু বে-আদপ স্বভাবের কিছু পর্যটক মানছিলেননা সে সব। আর তাই এবার পর্যটকদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিল প্রশাসন। নিয়মভঙ্গের জেরে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পর্যন্ত মোট ৩০ জন পর্যটককে আটক করা হয়।
জানা গেছে পূর্ব মেদিনীপুর পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এই অভিযান চালানো হয়। দেখা যায় বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিঘায় আনন্দের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিয়েছিলেন পর্যটকরা। সেখানে অনেকের মুখেই মাস্ক দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকী, মাস্ক পরলেও তা মুখ ও নাক ঢাকার পরিবর্তে থুতনিকে ঢাকা দিচ্ছিল। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে জানিয়েছেন, মাস্ক না পরে থাকা ও করোনা বিধিভঙ্গের জন্য আগামী কয়েকদিন ধরে অভিযান চলবে।
অন্যদিকে কয়েকদিন আগেই কাঁথি মহকুমা প্রশাসনের তরফে নির্দেশিকা প্রকাশ করে বলা হয়, এবার থেকে দিঘায় আসতে গেলে পর্যটকদের সঙ্গে রাখতে হবে করোনা টিকার শংসাপত্র। রাখতে হবে করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট। এছাড়া হোটেলে রুম ভাড়া নিতে গেলেও এই রিপোর্ট বাধ্যতামূলক। তবেই রুম পাওয়া যাবে। না হলে কোনও রুম পাওয়া যাবে না। পাশাপাশি বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষা করা যাবে দিঘাতে। আপাতত ২ টি কেন্দ্র থেকে, আগত পর্যটকদের জন্য কোভিড পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত পর্যটকদের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু, এত কিছুর পরও সেই করোনা নিয়ে একেবারেই সচেতন নন রাজ্যবাসী। আর সেই কারণেই এবার কড়া হতে হল প্রশাসনকে।
আসলে পর্যটকদের উপর আরোপ করা তিন শর্ত পূরণ না করায় ফিরিয়ে দেওয়া হল তাদের। রামনগর ২ ব্লকের বিডিও বিষ্ণুপদ রায় জানিয়েছেন, ‘নমস্কার আপনি আসতে পারেন। আপনি যদি তিনটি শর্তের একটিও পূরণ করতে না পারেন তবে আপনার দিঘায় ঢোকা বারণ।’ আর কাজ হয়েছে তাতেই। প্রশাসন সূত্রে খবর, সোমবারই বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছিল দুটি কোভিড টিকাপ্রাপ্তরা অথবা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করোনা আ্যন্টিজেন পরীক্ষা করানো বা আরটিপিসিআর পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট সঙ্গে রাখতে হবে। না হলে দিঘার দরজা তাদের জন্য বন্ধ।
এদিকে শুক্রবারও দলে দলে দিঘামুখী হয়েছিলেন পর্যটকরা। কিন্তু সদর দরজা থেকে ফেরৎ এলেন পর্যটকদের অনেকেই। তাঁদেরকে ঢুকতেই দেয়নি প্রশাসন। মূলত তিন শর্ত পূরণ না করার জেরেই তাদের ফেরৎ পাঠানো হয়। এদিকে গোটা ব্যবস্থায় পর্যটকদের একাংশ যথেষ্ট বিভ্রান্ত। তাদের একাংশের দাবি, সরকারি বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করেও অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন দিঘার হোটেলে থাকতে না পারলেও কয়েকঘণ্টার জন্য ঘোরার ছাড়পত্র মিলবে। কিন্তু সেটাও হয়নি। ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে শতাধিক পর্যটককে।