নিজস্ব সংবাদদাতা : শুধুই দিঘা গিয়ে অনেকেরই আর সাধ মেটেনা। সঙ্গে যদি আশেপাশের জায়গা গুলো যাওয়া যেত আর সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে বরং সন্ধ্যা থেকে দিঘার সমুদ্র পাড়ে কাটানো অথবা ওল্ড দিঘার বাজারে টুকিটাকি মার্কেটিং সেরে নেওয়া? অনেকেই অবশ্য সেটা করে থাকেন কিন্তু সে যদি নিজেদের গাড়ি থাকে কিংবা পকেটে রেস্তো থাকলে গাড়ি ভাড়া করে। কিন্তু মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্তর সে ক্ষমতা কোথায়? এবার আর সে চিন্তা নেই সবার জন্যই চালু হয়েছে ‘বিচ ট্যুর’। ১৭ সিটারের ট্রাভেলারে মাত্র ৩৪০ টাকার একদিনের ‘বিচ ট্যুর’ প্যাকেজ।
নিউ দিঘা থেকে শুরু করে শঙ্করপুর, চাঁদপুর, জলধা, তাজপুর, মন্দারমণি হয়ে ভ্রমণ শেষ হবে দিঘাতেই। শুধুই জনপদ নয়, নাই নাই করে যাতায়াতের এই ১০০কিলোমিটার রাস্তা মাঝে মাঝে ছুঁয়ে যাবে দিঘার ভার্জিন বিচ বা অনাঘ্রাতা যুবতী যৌবনময় তটভূমিকেও। সুযোগ মিলবে নিউ দিঘার বিজ্ঞান কেন্দ্র, ঢেউসগার-পার্ক, অমরাবতী-পার্ক এবং ওশিয়ানা সৈকত ঘুরে দেখারও। ভ্রমণের ফাঁকে দুপুরে ভুরিভোজেরও ব্যবস্থাও থাকবে তাজপুর, মন্দারমণির ফুডপ্লাজাগুলোতে৷ এর জন্য অবশ্য আলাদা করে টাকা খরচ করতে হবে পর্যটকদের। শুক্রবার, বড়দিনের মেজাজেই সেই বিচ ট্যুরের উদ্বোধন হয়ে গেল ধুমধাম করে আর শুরুতেই অসম্ভব সাড়া মিলল।
টালিগঞ্জের মৌমিতা দত্ত কিংবা নিউ টাউনের রত্না সেনরা রীতিমত উচ্ছ্বসিত। মৌমিতা জানালেন, ‘ দেখুন, দিঘা আমরা ফি বছর আসি। আগে বাবা মায়ের সঙ্গে আসতাম, এখন বরের সঙ্গে আসি। কোনও কোনও সময় বছরে দুবারও আসা হয়ে যায়। দিঘা বলতে গেলে ঘরের মত। এবার করোনা পরিস্থিতিতে আসা হয়নি। তাই খুব এক্সাইটমেন্ট নিয়েই এসেছিলাম আর এসেই চমকে গেলাম এই বিচ ট্যুরের কথা শুনেই। আজ আমরা জায়গা পাইনি। আগামীকাল, শনিবার যাচ্ছি। ভীষন ভাল লাগছে। শংকরপুর কিংবা মন্দারমনি গেছি কিন্তু জলধার ওদিকটা যাওয়া হয়নি। শুনেছি একেবারে ভার্জিন বিচ!”
রত্না সেন বলেন, “খুব দরকার ছিল এটার। পুরীতে বা অন্য জায়গাতে এই ব্যবস্থাটা রয়েছে। এখানে প্রাইভেট কার কিংবা গাড়ি ভাড়া করতে হত। প্রচুর খরচ সাপেক্ষ তারপর যে যেরকম খুশি ভাড়া নিত। এটা হয়ে খুব ভাল হয়েছে। আমরা প্ৰথম দিনেই জায়গা পেয়ে গেছি। খুব এনজয় করছি। দিঘার আশেপাশের বিচ গুলোও দেখতে পাচ্ছি দিঘাতে এসে।”
দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্ৰশাসন যৌথভাবে চালু করেছে এই ট্যুর প্যাকেজ। ১৭ সিটের একটি গাড়ি দিয়ে ভ্রমণ পরিষেবা চালু হলেও আগামী দিনে গাড়ির সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের প্রশাসক মানসকুমার মন্ডল। চালু করা হবে অনলাইন বুকিং পরিষেবাও।
এদিকে বড় দিনের দিঘায় শুক্রবার ঠাসা ভিড়। ভিড় সামলাতে দিনভরই নজরে এসেছে পুলিশের রীতিমত নাজেহাল অবস্থা হয়েছে। জনসমাগম ছিল ওল্ড দিঘা- নিউ দিঘার বিভিন্ন স্নানঘাট।
ভিড়ে জমজমাট ছিল বিনোদন পার্ক, বিজ্ঞান কেন্দ্রগুলো। হোটেল সংগঠকদের হিসেবে মতো, বড়দিনে দিঘায় ভিড় জমিয়েছেন প্রায় এক লক্ষ পর্যটক। দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘ছোট-বড় প্রায় সব হোটেলেই পর্যটক এসেছেন।’ ভিড় নজরে এসেছে ডে-ট্রিপার বা পিকনিক পার্টির। ঝাউবনে হাঁড়ি-কড়াই নিয়ে চড়ুইভাতির আনন্দের পাশাপাশি চলছে সমুদ্র জুড়ে জমজমাট শীত স্নান।