নিজস্ব সংবাদদাতা: মরসুমের প্রথম পেল্লাই ইলিশ এল রাজার মতই। ভোরের লাল আলো ফোটার সাথে সাথে ট্রলারে চেপে দিঘা মোহনার বাজার যখন ছুঁল তখন সাড়ে সাতটা। ৬০০ কেজি ইলিশের ভিড়ে তাকে চেনা যাচ্ছিল আলাদা করে। সবার সঙ্গে প্ল্যাস্টিকের ক্যারেটে না নেমে সে নেমেছিল সারেঙের কোলে চেপে, বুকের মধ্যে তাকে রেখেছিল সারেঙ। তার পিঠের ওপর থেকে ঠিকরে পড়ছিল সিঁদুরে রঙ। তার মাথা ছুঁচলো, পেট ছড়িয়ে আছে বাথানের মত আর ধনুকের ছিলার মত বাঁকানো গড়ন, ল্যাজ প্রসারিত অর্ধেক চাঁদ। পুরো মাছটা যেন রুইতনের বিবি, অনেকেটা বরফির মতো।
পেল্লাই সাইজের ইলিশ রানীকে যখন আদর করে আড়তদার নব কুমার পয়ড়ার পাল্লায় চাপানো হল তখন ওজন ২ কেজি ২০০ গ্রামের মাথায় দাঁড়িয়ে গেল কাঁটা। ছোট বড় পাইকার আর খুচরো ক্রেতাদের চোখ টাটাচ্ছিল অভিজ্ঞ চোখ আড় চোখে মেপে নিচ্ছিল ডিমশূন্য চিতল পেট। দাম উঠল পৌনে তিন টাকা প্রতি গ্রাম। ক্যালকুলেটারে হিসাব কষে মঙ্গলবার সকালে তো তা দিঘা মোহনার আড়তে বিক্রি হয়ে গেল ৬ হাজার ৫০ টাকায়। হিসেব কষলে প্রতি গ্রাম পড়ছে পৌনে ৩ টাকা অর্থাৎ ২ টাকা ৭৫ পয়সা। নিলামে জিতে মাছ নিয়ে গেলেন কাঁথি বাজারের এক ব্যবসায়ী।
দীর্ঘ লকডাউন আর প্রজননকালীন নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে শুরু থেকেই এবার খরা রুপালি শস্যের। ততারপর হঠাৎ করে শুরু হয়েছে নাতিবৃষ্টির প্রবনতা। মিঠা জল তেমন করে নামছেনা মোহনায়। ফলে এখনও কিনারামুখী হয়নি ইলিশের দল। লাভের চেয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে বেশি লঞ্চ-ট্রলারের মালিক এবং আড়তদারদের। তারই মাঝে মঙ্গলবার দিঘা মোহনা মৎস্য নিলাম কেন্দ্র উঠল প্রায় ২ টন ইলিশ। হাতে গোনা কয়েকটি লঞ্চের জালে ধরা পড়েছে বড়, মাঝারি, ছোট নানা আকারের ইলিশ।
দিঘার সরিপুর গ্রামের সুব্রত করের লঞ্চের জালে ধরা পড়ে ৬০০ কেজি ইলিশ। এর মধ্যে একটি ছিল নাদুস-নুদুস চওড়া।বাকি মাছগুলোর ওজন ছিল ৪০০-৫০০, ৬০০-৮০০ গ্রামের মতো। বড় ইলিশটি ওজন করে দেখা যায়, ২ কেজি ২০০ গ্রাম। মাথা কুটে মরলেও সাধারণত এত বড় ইলিশের সহজে দেখা মেলে না। তাই প্রকান্ড ইলিশটিকে দেখতে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়। সেই ইলিশ চলে গেল ২৭৫০ টাকা টাকা কেজি দরে।
গত মরসুমের পেল্লাই ইলিশের ওজন ছিল তিনকেজির গায়ে। মরসুমের একেবারে শেষে শীতের মুখে ধরা পড়েছিল সেই ইলিশ। দাম উঠেছিল ১০ হাজার টাকা। এখনও মরসুম আছে । দেখা যাক মঙ্গলবারের রেকর্ড ভেঙে আরও পেল্লাই কেউ আসে কিনা!