নিজস্ব সংবাদদাতা: সুপার সাইক্লোন থেকে সুনামি, আয়লা থেকে বুলবুল এমন লম্বা ছুটি মেলেনি দিঘার। সাতের দশকের গোড়ায় ‘বীরকুল’ থেকে দিঘা হয়ে ওঠার পর ৫০বছর গড়ালো দিঘার। আর সেই পাঁচ দশকের মাথায় এবার টানা ছুটি দিঘার, সৌজন্যে কোভিড-১৯ ওরফে করোনা ভাইরাস। আগামী ৩১ মার্চ অবধি দলবেঁধে সমুদ্রস্নান এবং পিকনিক করতে বারণ করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। একই সঙ্গে বিভিন্ন ট্রাভেল এন্ড ট্যুর সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই সময়ের মধ্যে সমস্ত পিকনিক, ট্যুরের বুকিং বাতিল করতে।
বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের তরফে এমন নির্দেশিকা জারি করার পরই দিঘা সহ মন্দারমণি, তাজপুর এবং শঙ্করপুর সৈকত এলাকায় মাইক প্রচারের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয় এই সতর্কতার কথা। ফলে ঘরে ফেরা শুরু হয়ে গেছে পর্যটকদের। মন খারাপের ট্রলি বয়ে বাস টার্মিনাশ কিংবা স্টেশন মুখি পর্যটকরা। এত নির্জনতা আগে দেখেনি দিঘা। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন,’ সতর্কতা সবাইকে মানতে হবে। আমরা চাই, জমায়েত ঠেকাতে এই সময়ের মধ্যে পর্যটকরা না আসুন সৈকতের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে।’
এমনিতেই বন্ধ হয়ে গেছিল অ্যাকোরিয়াম, সায়েন্সসেন্টার, ট্রয়ট্রেন ইত্যাদি দিঘার বিনোদনের জায়গা গুলি। খাঁ খাঁ দিঘার ভরসা ছিল দল বেঁধে সমুদ্র স্নানের মজা টুকুই কিংবা ডে ট্রিপের পিকনিক। বৃহস্পতিবার সেখানেও নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় পর্যটন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল দিঘা। পশ্চিমবাংলার ইতিহাসে দিঘাই একমাত্র পর্যটন কেন্দ্র যা গড়ে ওঠার পর এমন বিছিন্নতা দেখেনি। গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনে যা দার্জিলিং দেখেছে, কামতাপুরি আন্দোলনে যা ডুয়ার্স দেখেছে, মাওবাদী আন্দোলনে যা পুরুলিয়া বাঁকুড়া ঝাড়গ্রাম দেখেছে তাই এবার দিঘা দেখল করোনার দৌলতে।
আর এর ফলে মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে দিঘা। করোনা সতর্কতার মুখে ৩১ মার্চ পর্যন্ত হোটেল বুকিং বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছে দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন,’ করোনা সংক্রামণ রুখতে জমায়েত বন্ধ রাখা জরুরি। দিঘাতেও তা প্রয়োজন। তাই আমরাও ৩১ মার্চ পর্যন্ত হোটেল বুকিং বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
দিঘার এই পর্যটনকে ঘিরে লক্ষাধিক মানু্ষের জীবন জীবিকা। লজ, হোটেল, গাড়ি ভাড়া, ছোটবড় বিপনী, রিকশা, টোটো, অটো, ডাব ওয়ালা, মৎসজীবী, নুলিয়া ইত্যাদি কে নেই এই পর্যটন অর্থনীতিতে? এরমধ্যে দিঘা বাজারের সৌখিন সাজগোজ আর গৃহসজ্জার সরঞ্জামের সঙ্গেই যুক্ত হাজার হাজার পরিবার ও স্বসহায়ক গ্রুপ। এখনও অবধি ১০দিনের নিষেধাজ্ঞা কিন্তু যদি সেটা প্রলম্বিত হয় তবে নিশ্চিত ভাবেই টান পড়বে দিঘার ভাঁড়ারে।
এর আগেই দিঘায় অবস্থিত পূর্ব ভারতের বৃহত্তম পাইকারি মাছের বাজার বন্ধ করে দেওয়ার কথা ঘোষনা করা হয়েছে। ২৩শে মার্চ শেষ বাজার হওয়ার কথা। করোনা সতর্কতার দরুন ওই বাজারে প্রতিদিন আসা তিন হাজার ক্রেতা বিক্রেতার ভিড় এড়ানোই এই সিদ্ধান্তের কারন। এর ফলে যে লক্ষাধিক মানুষ অর্থনেতিক ক্ষতির মুখে তারও সিংহভাগ দিঘার। সব মিলিয়ে জোড়া ধাক্কায় এখন দিঘা।