Homeএখন খবরভর্তি নেয়নি কলকাতার কোভিড হাসপাতাল,হুগলির হাসপাতালে মৃত্যু ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ৩৮ বছরের দেবদত্তার

ভর্তি নেয়নি কলকাতার কোভিড হাসপাতাল,হুগলির হাসপাতালে মৃত্যু ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ৩৮ বছরের দেবদত্তার

ওয়েব ডেস্ক : ৪৮ ঘন্টা পার হয়নি ১৮ বছরের শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর। যে মৃত্যু দেখিয়ে দিয়েছে এরাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আর কোভিড চিকিৎসার বাস্তব রূপ। দেখিয়ে দিয়েছে একমাত্র সন্তানকে দিনভর হাসপাতালে ঘোরার পর বেড খালি থাকা সত্ত্বেও তাকে ভর্তি নেয়নি হাসপাতাল আর এবার দেখা গেল সেই ব্যবস্থার কোনও পরিবর্তনই হয়নি। রাজ্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ আমলা মাত্র ৩৮ বছর বয়সী ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট চিকিৎসার সুযোগই পাননি কলকাতার কোভিড হাসপাতাল গুলিতে ফলে প্রায় বিনা চিকিৎসায় তাঁকে মারা যেতে হয়েছে এমনই অভিযোগ তাঁর পরিবারের। সোমবার সকাল ৯ টায় ঘটে যাওয়া এই দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, এরাজ্য সত্যি সত্যিই করোনা আক্রান্তদের জন্য নিরাপদ কী না?

২০১০ সালের ব্যাচের ডব্লিউবিসিএস অফিসার দেবদত্তা রায় প্রথমে পুরুলিয়া ২ নম্বর ব্লকের বিডিও হিসেবে কর্তব্যরত ছিলেন। এরপরে ২০১৭ সালে হুগলি জেলার চন্দননগর মহকুমা অফিসে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে যোগ দেন। প্রথমদিকে সব ঠিকই ছিল। কিন্তু ভিন রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা বাংলায় ফেরানোর কাজ শুরু হতেই তার দায়িত্ব বেড়ে যায়৷ যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকরা হুগলির ডানকুনি স্টেশনে নামতেন মূলতঃ সশরীরে উপস্থিত থেকে তাদের দেখাশোনার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করাই ছিল তাঁর কাজ। আর সেই কাজ করতে গিয়েই করোনায় আক্রান্ত হন তিনি।

জানা গিয়েছে, প্রায় ৯ দিন যাবত জ্বর-সর্দিতে ভুগছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। সন্দেহবশত করোনা পরীক্ষা করানো হলে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এদিকে করোনায় সংক্রমিত জেনে প্রথম অবস্থায় দমদম লিচু বাগানের বাড়িতেই হোম আইসোলেশনে ছিলেন দেবদত্তা। কিন্তু দিন দিন শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেন পরিবারের সদস্যরা৷ কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, শহরের একাধিক সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরলেও কোথাও ভর্তি হতে পারেননি ওই আমলা। এমনকি প্রশাসনের সাথে বারংবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তারাও কোনোরকম সাহায্য করতে পারেনি।

এরপর রবিবার বিকেলে তাঁর শারীরিক অবস্থা এতটাই অবনতি হয় যে শেষমেশ তাঁকে হুগলির শ্রমজীবী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু এত হাসপাতাল ঘোরাঘুরিতে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না মেলায় তাঁর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই কমে এসেছিল। এমনকি ততক্ষণে মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধিপেয়েছে সংক্রমণও। এরপর সেখানেই সোমবার সকাল পৌনে ৯টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। মায়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে দেবদত্তার মাত্র ৪ বছরের ছোট্ট মেয়ে। মুখ্যমন্ত্রী বারংবার দাবি করে আসছেন এই রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবা অন্যান্য সকল রাজ্য থেকে অনেক এগিয়ে। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে যেভাবে রাজ্যের একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, যিনি একটি প্রশাসনিক পদে কর্তব্যরত, তাঁরই যদি হাসপাতালে বেড না মেলায় মৃত্যু হয় সেক্ষেত্রে আমরা সাধারণ মানুষরা আদৌ কি নিরাপদ এই রাজ্যে??

পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রীর আরও দাবি, এ রাজ্যে নাকি সুস্থতার হার অনেকটাই বেশি। সুস্থতার হার বেশি ঠিকই তবে বিগত কয়েকদিনের রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা যেভাবে তলানিতে ঠেকেছে তাতে একটা প্রশ্নই বারংবার ঘুরপাক খাচ্ছে, যে পরিমাণ মানুষ এরাজ্যে সুস্থ হয়েছে তাদের সুস্থতার পিছনে কি আদৌ হাসপাতালের ভূমিকা রয়েছে নাকি নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাতেই মারণ ভাইরাসকে হারিয়ে জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়েছেন?

RELATED ARTICLES

Most Popular