নিজস্ব সংবাদদাতা: ডেবরার ৫১ বছর বয়সী পোস্ট মাস্টারের শুভেন্দু কুমার মাইতি যিনি মাত্র তিনদিনের জ্বরে মারা গেছিলেন তাঁর করোনা সংক্রমন হয়েছিল বলেই জেলার স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। শনিবার ১৩ ঘন্টা পর বিকেল সাড়ে তিনটা নাগাদ ডেবরা থানা এলাকার বাকলসা সেবকরাম গ্রামের বাড়ি থেকে মৃতদেহ সংগ্ৰহ করে মেদিনীপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেদিনই মৃতের নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়। রবিবার নমুনা পরীক্ষা হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি ল্যাবে। গভীর রাতে পাওয়া রিপোর্টে মাইতির শরীরের করোনার জীবানু ছিল বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য ইংরেজি হিসাবে শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া থানার প্রতাপপুর পোস্টঅফিসের নতুন পদে যোগ দেওয়ার আড়াই দিনের মাথায় অসুস্থ হয়ে বৃহস্পতিবারই বিকালে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। ওই দিন স্থানীয় এক চিকিৎসকের পরামর্শ মত ওষুধ খান এবং শুক্রবার কয়েকটি পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা দেওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার বিকাল থেকেই অসুস্থতা বাড়তে থাকে, শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। অবস্থা সঙ্কটজনক হলে শুক্রবার রাত ১০ টা থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও আ্যম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি। রাত ১টা নাগাদ এক আত্মীয়ের একটি আ্যম্বুলেন্স এসে পৌঁছায় ২০কিলোমিটার দূর থেকে কিন্তু ততক্ষনে পোষ্ট মাস্টারকে আর নিয়ে যাওয়ার মত সময় ছিলনা। ঘরেই মৃত্যু হয় রাত দেড়টা নাগাদ।
পরে জানা যায় শুভেন্দু সহ যৌথ পরিবারের ১০ সদস্যের প্রায় প্রত্যেকেরই জ্বর হয়েছিল। শুভেন্দুর বড়দা দীপক মাইতি হোমিওপ্যাথি প্র্যাকটিস করেন। তাঁরই ওষুধ খেয়ে সবার জ্বর ভাল হয়ে যায়। ১৪ই জুলাই নতুন কাজের জায়গায় যোগ দেন শুভেন্দু ১৬ তারিখ ফের জ্বর আসায় কাজ করতে পারেননি বেশিক্ষন। সহকর্মীর হাতে অফিসের চাবি দিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। তারপর আড়াইদিনের মাথায় মৃত্যু। ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে। কেউ ভয়ে ওই বাড়ির দিকে জাননি।
এদিকে শুভেন্দু মাইতিকে মেদিনীপুর মর্গে নিয়ে যাওয়ার পরেই তৎপরতা শুরু হয় পুলিশ ও স্বাস্থ্যদপ্তরের। শুভেন্দুবাবুর পরিবারের ১০জন সদস্য ছাড়াও অসুস্থ অবস্থায় সংস্পর্ষে আসা এক কোয়াক ডাক্তার, আত্মীয় মিলে ২৩ জনকে চিহ্নিত করা হয় নমুনা দেওয়ার জন্য। রবিবার তাঁরা ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যান নমুনা দিতে কিন্তু ইতিমধ্যে ডেবরা থানার কয়েকজন কর্মী সহ আরও কয়েকজনের নমুনা সংগ্ৰহ জরুরি হয়ে পড়লে সবার নমুনা সংগ্ৰহ করা সম্ভব হয়নি। বয়স্ক ও উপসর্গ রয়েছে এমন মাত্র ৭ জনের নমুনা সংগ্ৰহ করা সম্ভব হয়।
সোমবার মৃতের স্ত্রী ও দুই পুত্র সহ ১৬ জনের নমুনা সংগ্ৰহ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। পরিবারের এক সদস্যের মধ্যে এখনও জ্বরের উপসর্গ রয়েছে বলে জানা গেছে।
করোনা মহামারি আইন অনুযায়ী মৃতের দেহ সৎকারের দায়িত্ব প্রশাসনের। পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হবেনা। তিনি যেহেতু হিন্দু ছিলেন তাই হিন্দু মতেই তাঁকে দাহ করা হবে। সাধারনত করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষিত খড়গপুর শহরের খরিদা মন্দিরতলা শ্মশানের ইলেক্ট্রিক চুল্লিতেই দাহ করা হবে তাঁর দেহ।