Homeএখন খবরকন্যাশ্রী, বার্ধক্যভাতা থেকে ১০০দিনের কাজের ১৫লক্ষ টাকা নিয়ে পলাতক ডেবরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের...

কন্যাশ্রী, বার্ধক্যভাতা থেকে ১০০দিনের কাজের ১৫লক্ষ টাকা নিয়ে পলাতক ডেবরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের প্রতিনিধি

নিজস্ব সংবাদদাতা: কারও ২৫হাজার, কারও ৩০হাজার, কারও আবার ৫০হাজার কারও আবার ১লক্ষ টাকা! কেউ টাকা জমিয়েছিলেন তিল তিল করে হাঁস মুরগি ছাগল পালন করে, কেউ আবার প্রবাসে থাকা স্বামীর উপার্জনের টাকা রেখেছিলেন মাথার ওপর ছাদ বানাবেন বলে। কারও ১০০দিনের কাজের টাকা, কারও বার্ধক্যভাতা কারও আবার কন্যাশ্রীর টাকা! সব চেটেপুটে সাফ করে দিয়ে পালিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা থানার অন্তর্গত একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের মালিক।

এখনও পর্যন্ত যে সমস্ত প্রতারিতরা তাঁদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন শুধু তাঁদেরটা হিসাব করলেই তছরূপ হওয়া টাকার পরিমান ১৫লক্ষ। অনেকেই এখনও জানেনইনা যে এমন কান্ড হয়ে আছে। ন’মাসে ছ’মাসে ব্যাঙ্ক মুখো হন যাঁরা তাঁদের হিসাব করলে এই লুটের পরিমান কত কে জানে? বর্তমানে তালা ঝোলানো ওই গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রটির অবস্থান ডেবরা পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত ভবানীপুর গ্রামপঞ্চায়েতের অন্তর্গত পাটনা গ্রামে, গ্রামপঞ্চায়েত দপ্তরের ১৫ মিটারের মধ্যে।

নরেন্দ্র মোদি সরকার প্রথম ক্ষমতায় আসার পর জিরো ব্যালেন্স পাশ বই খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক গুলি গ্রামে গ্রামে কমিশন ভিত্তিক গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মত বিভিন্ন গ্রামে গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র গড়ে ওঠে। সরকারি প্রকল্পের টাকা এই জিরো ব্যালেন্স আ্যকাউন্ট মারফৎ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। এদের দৈনিক লেনদেনের ক্ষমতা খুবই কম। মানুষের চাহিদা মত টাকা একই সঙ্গে দিতে পারেনা। অনেক সময়ই আগাম উইথড্রল স্লিপ দিয়ে রাখতে হয়, বিনিময়ে পরিষেবা কেন্দ্রের মালিকরা একটি চিরকুট ধরিয়ে দেন রশিদ বাবদ, মূল শাখা থেকে টাকা এনে দেওয়া হবে বলে।

পাটনার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ওই পরিষেবা কেন্দ্রটির প্রতিনিধি বা মালিক নিশিকান্ত চক্রবর্তী এভাবেই উইথড্রল স্লিপে সই অথবা টিপ সই দিয়ে সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ যার মধ্যে বেশিরভাগই মহিলা তাঁদের লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছেন। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলেছেন কিন্তু গ্রাহককে দেননি। স্থানীয় পাটনা হাইস্কুলের ছাত্রী সুজাতা সরকার জানিয়েছে সে কন্যাশ্রী বাবদ প্রাপ্ত টাকা থেকে ২ হাজার টাকা তোলার জন্য উথড্রল স্লিপ জমা দিয়েছিল পরের দিন ২হাজার টাকা পেয়েও যায় কিন্তু পরে পাশ বই আপ-টু-ডেট করতে গিয়ে দেখে ১০হাজার টাকা তোলা হয়ে গেছে। স্থানীয় বাঁশকুল গ্রামের বিদ্যা ভূঞা তিল তিল করে ৫০হাজার টাকা জমিয়েছিলেন, অসরফপুর গ্রামের মায়া ভূঞা ছাগল চাষ করে ৪৫হাজার টাকা রেখেছিলেন, তপন মাইতি গত ১বছর ধরে জমা দিয়েছেন ৩০হাজার টাকা কিন্তু আপ-টু-ডেট করতে গিয়ে দেখেন ৪০০টাকা পড়ে রয়েছে। এমনই প্রতারনার শিকার স্থানীয় গ্রামপঞ্চায়েত অফিসেরই এক অস্থায়ী কর্মী যাঁর ১লক্ষ টাকা হাপিস করে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সমাজসেবী গৌতম মাজি জানিয়েছেন, ‘ কারও ১০০দিনের কাজের টাকা, কেউ আবার তিল তিল করে সঞ্চয় করেছেন। কেউ বাড়ি বানাবেন, কেউ মেয়ের বিয়ে দেবেন কিন্তু সবার মাথায় হাত। এ যেন সরকারি চিটফান্ড। এলাকার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতারা সবই জানেন কিন্তু কেউ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেননা। প্রবঞ্চিত মানুষগুলোর কি হবে?”

ভবানীপুর গ্রামপঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা স্থানীয় তৃনমূল নেতা জগন্নাথ মূলা জানিয়েছেন, ” অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। ওই ব্যক্তিকে ধরে উনি যে অঞ্চলের বাসিন্দা সেই শালডহরির পঞ্চায়েত কে ধরে একটা রাস্তা বের করার যথেষ্ঠ চেষ্টা করেছি। আমার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে গরিব মানুষগুলোর টাকা পাইয়ে দেওয়ার কারন ব্যাঙ্ক এই টাকা দেবেনা। ওই ব্যক্তি কথা দিয়েছিলেন ধিরে ধিরে সবার টাকা মিটিয়ে দেবেন কিন্তু এখন দেখছি উনি পালিয়ে গেছেন বাড়ি ছেড়ে। এবার পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিক।”

RELATED ARTICLES

Most Popular