শশাঙ্ক প্রধান: পশ্চিম মেদিনীপুর ডেবরা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের এক অস্থায়ী কর্মীর আত্মহত্যার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ালো হাসপাতাল চত্বরে। কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে অসুস্থ ওই কর্মী বর্তমান ওই হাসপাতালেই ভর্তি রয়েছেন। ওই কর্মী এবং তাঁর মা যিনি ডেবরা ব্লক তৃনমূল মহিলা সমিতির সভানেত্রী দাবি করেছেন এই আত্মহত্যার চেষ্টার পশ্চাতে হাসপাতালের সুপারের মানসিক নির্যাতনই দায়ী। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতাল সুপার। ঘটনার জেরে বুধবার হাসপাতালে কর্মবিরতি পালন করেন অস্থায়ী কর্মীরা। বৃহস্পতিবার আরও বড়সড় আন্দোলনে যেতে পারেন তাঁরা।
জানা গেছে আত্মহত্যার চেষ্টা করা ওই কর্মীর নাম সঞ্জয় ভট্টাচার্য। তিনি তৃনমূল নেত্রী জয়ন্তী ভট্টাচার্যর ছেলে। সঞ্জয় বছর তিনেক হল এই হাসপাতালের কর্মী সরবরাহ ঠিকাদারের অধীন অস্থায়ী কর্মী। ওয়ার্ডবয় হিসাবে তাঁর পোস্টিং। করোনা কালে সঞ্জয়কে ওয়ার্ড থেকে সরিয়ে ফার্মাসি বিভাগে আনা হয়। গত ৩রা জুন সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে ফার্মাসিস্ট হরিপদ পাত্র এবং নবকুমার বেরা ও স্বপন মন্ডল হাসপাতালের সুপার তথা বিএমওএইচ আরিফ হোসেন শাহ-র কাছে লিখিত অভিযোগ জানায় যে সঞ্জয় ভট্টাচার্যর সন্দেহ জনক ভূমিকায়। অভিযোগে লেখা হয়েছে ‘ঔষধ সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের সন্দেহ জনক মনে হয়।’ এই অভিযোগ পাওয়ার পরই সুপার ওই ঠিকাদারি সংস্থার সুপারভাইজারকে বিষয়টি জানান। সুপারভাইজার ৮ তারিখ ওই অভিযোগের ভিত্তিতে সঞ্জয়কে অন্য বিভাগে সরানোর উদ্যোগ নেন। বুধবারই সঞ্জয় কাজ সেরে নিজের বাড়ি বরাগড়ে গিয়ে কীটনাশক পান করে।
সঞ্জয়ের মা জয়ন্তী ভট্টাচার্য জানান, “সঞ্জয়কে নিয়ে প্রথমে ডেবরা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর এখানে আইসিইউ নেই বলে চিকিৎসকদের পরামর্শ মত মেদিনীপুর নিয়ে যাওয়া হয়। মেদিনীপুর নার্সিংহোমগুলি বিষ খাওয়া রুগী নিতে চায়নি বলে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও করোনা রোগীর ভিড় থাকায় ফের ডেবরাতেই ফেরত আনা হয়। ততক্ষনে অনেকটাই ভালো হয়ে ওঠে সঞ্জয়। বর্তমানে সেখানেই রয়েছে সে। জয়ন্তী ভট্টাচার্যর অভিযোগ, ” অদ্ভুত একটা অভিযোগ যেখানে আমার ছেলেকে ওষুধের ব্যাপারে সন্দেহজনক বলা হয়েছে। কী সন্দেহ জনক? সেকি ওষুধ চুরি করত, পাচার করত? যদি তাই করত তবে তদন্ত না করেই তাকে অন্য জায়গায় বদলি করা হচ্ছে কেন? সে যদি চোর হয় তাহলে ওখানে গিয়েও তো চুরি করবে সে?” তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ তিনবছর ধরে বারংবার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরানো হচ্ছে আমার ছেলেকে, সঙ্গে চুরির অপবাদ সহ্য করতে না পেরেই আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল সে। এরজন্য কোম্পানির সুপারভাইজার ও হাসপাতাল সুপার দুজনেই দায়ী।”
হাসপাতাল সুপার অবশ্য শাহ্ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “অস্থায়ী কর্মীরা কোথায় ডিউটি করবে, কোথায় বদলি হবে এটা আমার দেখার কাজ নয় কারন ওরা দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানির অধীন। ওই কর্মীর বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ ছিল যা কোম্পানির সুপারভাইজারকে আমি জানিয়েছি। এরপর ওনার মা মঙ্গলবার বিকালে আমাকে এসে বলে যান, ছেলে যদি কিছু করে বসে তাহলে আপনিই দায়ী। আমি বিষয়টি থানাকে জানিয়েছিলাম আর তারপরই ওই কর্মী আত্মহত্যা করতে গেলেন! আমি বিষয়টি আমার উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের জানিয়েছি।”
এদিকে অন্য একটি কল রেকর্ড বিষয়টিকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। হরিপদ পাত্র নামে যে ফার্মাসিস্ট সহ তিনজন ওই অভিযোগ পত্রটি লিখেছেন সেই এক নম্বরে স্বাক্ষর করা হরিপদ পাত্র আবার ফোনে সঞ্জয়কে বলেন যে, অভিযোগ পত্রটি তাঁকে দিয়ে সই করানো হয়েছে মাত্র। তিনি এর বিন্দুবিসর্গ জানেননা। তিনজন একজন ওই অভিযোগ লিখে একনম্বর ফাঁকা রেখেছিল তাঁর স্বাক্ষরের জন্য। সব মিলিয়ে এক রহস্য তৈরি হয়েছে।
স্থায়ী কর্মীদের একটি অংশের অভিমত সঞ্জয়কে যেখানেই দায়িত্ব দেওয়া হত সেখানেই তাঁর প্রতি অসন্তোষ কাজ করত স্থায়ীকর্মীদের মধ্যে কারন নেত্রীর ছেলে হওয়ার সুবাদে সে কাজ করতনা। নিজের ফোন নম্বর দিয়ে সে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেত প্রয়োজনে তাঁকে ডেকে নিতে বলে। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে স্থায়ী এবং অস্থায়ী কর্মীদের মধ্যে একটি চাপা বিরোধ কাজ করছে। অস্থায়ী কর্মীরা আন্দোলনে নামলে চিকিৎসক নার্স সহ স্থায়ী কর্মীরাও প্রতিবাদে রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। স্থায়ী কর্মীরা অভিযোগ করেছেন তাঁদের পান থেকে চুন খসলেই ঝাঁপিয়ে পড়েন নেতারা অথচ অস্থায়ী কর্মীদের কোনও ত্রুটি নজরে পড়েনা নেতাদের।
একজন স্থায়ী কর্মী জানিয়েছেন, ‘ আমাদের সুপার করোনা যুদ্ধের অন্যতম সেরা সেনাপতি। করোনার বাড়াবাড়ির সময় তাঁকে জেলাস্তরে তুলে নিয়ে গিয়ে কাজ করানো হয়েছে। এরকম কর্মদ্যোগী মানুষ সচরাচর পাওয়া যায়না। গতকাল রাত থেকে একের পর এক হুমকি ফোন পেয়েছেন তিনি। প্রচন্ড চাপে রাখা হয়েছে তাঁকে। আমরাও এর বিহিত চাইব। এই বৈষম্যের শেষ হওয়া প্রয়োজন।”সব মিলিয়ে টানটান উত্তেজনা ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে।