নিজস্ব সংবাদদাতা: গ্রামবাসীরা চেপে না ধরলে জানাই যেতনা গোটা পরিবারই করোনায় আক্রান্ত কিন্তু জানা গেলনা কয়েক ঘন্টা আগে মৃত মানুষটারও করোনা হয়েছিল কিনা। জানা জরুরি ছিল কিন্তু জানা যায়নি কারন মৃতকে সমাহিত করে ফেলা হয়েছে। যারা সমাহিত করলেন তাঁরাও তো করোনা আক্রান্ত হতে পারেন! কিন্তু কে খুঁজবে তাঁদের? আবার যদি খুঁজে না পাওয়া যায় তাঁদেরই কাছ থেকে আক্রান্ত হতে পারেন। এমন করেই যে মড়ক ছড়িয়ে পড়ে।
ডেবরার গোলগ্রামের এই ঘটনার সঙ্গে লোয়াদার বাকলসা সেবকরামের অনেকটাই মিল। দু’জায়গাতেই মৃতের পরিবার করোনা আক্রান্ত। পার্থক্য একটাই বাকলসাতে মৃত্যুর পরে জানা গেছিল মৃত করোনা আক্রান্ত আর এখানে জানা যায়নি মৃতের করোনা ছিল কিনা। কিন্তু দুটি পরিবারই করোনা আক্রান্ত।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানা এলাকার গোলগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার খাসকেন্দুবাগিচার আনুমানিক ৪৮ বছরের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয় গত বুধবার। প্রবল জ্বরে অচেতন হয়ে পড়ে ছিলেন ওই ব্যক্তি। বুধবার রাতেই পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া হাসপাতাল থেকে ওই ব্যক্তিকে চন্ডীপুরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। রাস্তায় মৃত্যু হয় তাঁর। সেখান থেকে ফিরিয়ে এনে গ্রামেই ,খাসকেন্দুবাগিচায় কবর দিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে।
জানা যাচ্ছে, ওই ব্যক্তি কলকাতায় থাকতেন। সেখানে কাঠের দোকানে কাজ করতেন। লকডাউন শুরু হওয়ায় বাড়ি ফিরে আসেন এবং তিনমাস ছিলেন। এর মধ্যে নিজের বাড়ি বানাচ্ছিলেন তাই ধার দেনা হয়ে যায় বাজারে। সেই কারনে ফের কলকাতা ফিরে যান। দিন দশেক আগে বাড়ি ফেরেন তিনি। রবিবার থেকে ব্যক্তির জ্বর আসে। সোমবার স্থানীয় এক হাতুড়ে চিকিৎসককে দেখানো হয়। সেই চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষা করাতে বলেন। পরিবারের দাবি অনুযায়ী,সেই পরীক্ষায় টাই ফয়েড ধরা পড়ে।
মঙ্গলবার ওই ব্যক্তির শরীর প্রচন্ড খারাপ হয়ে পড়ে। পরিবারের এক সদস্য জানান, “তার শরীর এতটাই খারাপ যে বসে থাকতেই পারছিলনা। আমরা চিকিৎসককে ফোন করি। উনি আমাদের তখুনি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। আমরা মঙ্গলবার রাতে পীতপুরে অবস্থিত পাঁশকুড়া হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে জরুরী বিভাগে ভর্তি করা হয়। ঘন্টা খানেক সেখানে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থাকার পর অবস্থার কোনোও পরিবর্তন হয়নি বরং খারাপ হচ্ছিল। রাতেই হাসপাতালের পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয়, অবস্থা ভাল নয়, এখানে এর চেয়ে ভাল চিকিৎসা সম্ভব নয়। অন্য কোথাও নিয়ে যান।”
রাত দেড়টা নাগাদ অক্সিজেন ও স্যালাইন সহ রোগীকে নিয়ে ফের গাড়িতে ওই ব্যক্তিকে নিয়ে পরিবার রওনা দেয় পূর্ব মেদিনীপুরের চন্ডীপুর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। এরপর পথেই মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির। চন্ডিপুরের চিকিৎসকই ওই মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
কেন ওই ব্যক্তিকে ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের বদলে অন্য জেলার পীতপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল এর উত্তরে পরিবারের লোকেরা বলেছে , তাঁদের কয়েকজন প্রতিবেশী জানিয়েছিলেন যে ডেবরার থেকে পীতপুর হাসপাতাল নাকি ঢের ভাল। ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল সম্পর্কে এই ধারনা কারা তৈরি করেছেন জানা নেই কিন্তু এই একই ঘটনা লক্ষ্য করা গেছিল বাকলসা সেবকরাম গ্রামের মৃত পোস্ট মাস্টারের পরিবারের। হাসপাতাল ভাল নয় এই ধারনা থেকেই রুগীকে নার্সিংহোমে ভর্তির উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাঁরা যদিও বাড়িতেই মৃত্যু হয় তাঁরও।
এদিকে খাসকেন্দুবাগিচার ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পরেই টনক নড়ে গ্রাম বাসীদের। যে কাজটা অনেক আগেই করা উচিৎ ছিল সামনে সাক্ষাৎ মৃত্যুকে দেখার পরই সেটা মনে পড়ে তাঁদের। পুরো পরিবারকেই করোনা পরীক্ষার জন্য বলে তারা। শুক্রবার পরিবারের চার সদস্যের করোনা পরীক্ষা হয়। ওই ব্যক্তির স্ত্রী কন্যা এবং ৯বছর বয়সী পুত্রের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে একজনের নেগেটিভ ফল এসেছে। রবিবার এদের ডেবরা হাসপাতালে ভর্তি করার কথা।
একজন স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্য হল, “এখন নিয়ম অনুযায়ী ওই ব্যক্তিকে কবর থেকে তুলে তাঁর করোনা পরীক্ষা করা উচিৎ এবং তা পজিটিভ হলে হাতুড়ে চিকিৎসক, সংস্পর্শে আসা গ্রামবাসী যারা ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন, যাঁরা কবর দিয়েছেন, আ্যম্বুলেন্স চালক, পীতপুর ও চন্ডীপুরের চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মী সবারই করোনা পরীক্ষা করা উচিৎ। নচেৎ সংক্রমন আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।”
ডেবরা এলাকার সত্য এবং তথ্য পূর্ন খবর জানার জন্য আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন। পান টাটকা আপডেট।