নিজস্ব সংবাদদাতা: মাস ছ’য়েক বাদেই বিধান সভা নির্বাচন যখন ডাক দিচ্ছে বাংলাকে আর সেই নির্বাচনের বৈতরণী পের হতে মরিয়া শাসকদল। শুভেন্দু অধিকারী যে জেলাগুলোতে শাসকদলকে মরন কামড় দিতে তৈরি তার মধ্যেই রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর। শুভেন্দুর সেই চ্যালেঞ্জকে গোড়াতেই মাঠে মারার জন্য তড়িঘড়ি মাঠে নেমে পড়েছে শাসকদল। স্বয়ং দলের সুপ্রিমো তথা বাংলার মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী আগামী ৭ই ডিসেম্বর, সোমবার মেদিনীপুরে আসছেন সভা করতে। সেই সভার প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। চলছে পাড়ায় পাড়ায় অলিতে গলিতে ‘মেদিনীপুর চলো’ কর্মসূচি। কিন্তু ৭২ঘন্টা আগে সেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরাতেই ভিন্ন রূপে চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কয়েকশ মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। দাবি করলেন সেতু না হলে ভোট বয়কটে সামিল হবেন ওই চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার হাজার হাজার মানুষ।
শনিবার, ডেবরা বাজারে উড়ালপুল সংলগ্ন এলাকায় জড়ো হয়েছিলেন ভরতপুর, গোলগ্রাম, ভবানীপুর ও মলিঘাটি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকা থেকে ১০০বাইক এবং তিনটি বাসে করে হাজির হয়েছিলেন ওই চারটি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার মানুষদের নিয়ে গঠিত দ্বিপান্তর মুক্তি সংগ্রামী মঞ্চের সদস্যরা। কাঁসাই নদীর দুটি শাখার মধ্যে থাকা এই বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডের মধ্যে থাকা লক্ষাধিক মানুষের জন্য কোনও সেতু নেই আজও। একের পর এক সরকার এসেছে এবং গেছে। বাম আমলে অবশ্য লোয়াদার কাছে একটি সেতু তৈরি হয় কিন্তু শেষ অবধি সংযোগকারী রাস্তার ব্যবস্থা না করতে পারায় সেই সেতু ঝুলেই রয়েছে।
বর্তমান সরকারও বেশ কিছু টাকা বরাদ্দ করে দুপাশের রাস্তা ইত্যাদি সম্প্রসারণের কাজ শুরু করলেও সেতুর সংযোগকারী রাস্তার সমস্যা বিশবাঁও জলে। ফলে নির্বাচনের আগেই সেতুর সমস্যা মিটবে এমনটা বোধহয় সম্ভব নয়।ফলে ক্রমশ ক্ষোভের আগুন বাড়ছে ওই নদী বেষ্টিত ভূখণ্ডের অন্তর্গত ২০০টি ছোটবড় গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে। সেই ক্ষোভই শনিবার আছড়ে পড়তে দেখা গেল ডেবরা বাজারে। জানা গেছে এবার ভোট বয়কটের আহবান জানিয়ে গ্রামে গ্রামে ছোট ছোট সভা, মিটিং, মিছিল ইত্যাদি শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছে মঞ্চ।
দ্বিপান্তর মুক্তি সংগ্রামী মঞ্চের এক সদস্য জানিয়েছেন, ‘২০১১সালে বিধানসভা নির্বাচনে গোলগ্রামের মাটিতে হেলিকপ্টার নিয়ে সভা করে গেছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী তথা বর্তমান মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। বলেছিলেন, আপনারা আমায় ডেবরা বিধানসভা দিন আমি আপনাদের সেতু দেব। ডেবরাবাসী তাঁকে ডেবরা উপহার দিয়েছেন। একবার নয়, দু’বার তাঁকে ডেবরা বিধানসভা জিতিয়ে দিয়েছেন মানুষ কিন্তু তিনি তাঁর নিজের কথা রাখেননি। এখনও রাস্তা সম্প্রসারণের নামে ভাঁওতাবাজি হচ্ছে কারন আমরা জানি সংযোগকারি রাস্তার সমস্যা মেটেনি।
এদিনের সভায় হাজির মঞ্চের সম্পাদক সমাজসেবী গৌতম মাজী বলেন, ‘১৯৭২ সাল থেকে শুধুই আবেদন আর নিবেদন করে গেছি আমরা। কেউ ফিরেও তাকায়নি আমাদের আসন্ন প্রসবা মা, সাপের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তি, রাতে ভিতে হৃদরোগে আক্রান্ত অথবা নাভিশ্বাস ওঠা বৃদ্ধ বৃদ্ধার দিকে। আমাদের জন্য বরাদ্দ বাঁশের সেতু, আমাদের জন্য বরাদ্দ নৌকা। আমাদের নিয়ে সারা বছর পারাপারের ব্যবসা। আমাদের প্রসূতি মা আ্যম্বুলেন্স সহ জলে পড়ে যায়। অনেক হয়েছে আর নয়। এবার আর প্রতিশ্রুতি নয়, ভোটের আগেই সেতু চাই নইলে কোনও ভোট নাই।”
২০১৮ সালে এই চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষদের নিয়ে তৈরি হয়েছে এই অরাজনৈতিক সংগঠন দ্বীপান্তর মুক্তি সংগ্রামী মঞ্চ যাদের একটাই দাবি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করতে হবে। মঞ্চের উদ্যোক্তা সঞ্জয় গোস্বামী, সুজিত পারিয়াল, অরবিন্দ সাউট্যা, কেশব চক্রবর্তী , পুলকেশ কুইঁতিরা জানিয়েছেন,”বিডিও, জেলা পরিষদ, জেলা শাসক থেকে সর্বত্রই বারংবার নিষ্ফলা হয়েছে আমাদের দাবি। দিনের শেষে আমরা কেবলই ভোট দেওয়ার লোক ছাড়া আর কিছুই নয়। স্বাধীনতার পরে এভাবেই কেটে গেছে কম বেশি ৪২ টি নির্বাচন। ভোটের কালি আঙুলে নিয়ে ঘরে ফিরেছি আমরা তারপর জীবন ভর সেই কালি চুষে যাচ্ছি। আমাদের ঠাকুরদা, বাবার পর আমরাও সেই আঙুল চুষছি। এবার আর সেই আঙুলে কালি নেবেনা এখানকার জনতা।মূখ্যমন্ত্রীর জেলাসফরের আগে মুখ্যমন্ত্রী কে আমাদের এটাই বার্তা।”