নিজস্ব সংবাদদাতা: নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়েছিল ২৩ জনের। মঙ্গলবার রিপোর্ট পাওয়া গেছে মাত্র ৫জনের তার মধ্যে ২জনেরই পজিটিভ। যে দুজনের রিপোর্ট পজিটিভ তারা করোনা আক্রান্ত মৃত পোস্ট মাস্টারের সরাসরি সংস্পর্শে ছিলেন অন্যদিকে যে তিনজনের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে তাঁরা কেউই সরাসরি সংস্পর্শে ছিলেন না। স্বাভাবিক ভাবেই ভয় আর ভীতির বাতাবরন পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানার বাকলসা সেবকরাম গ্রামের মৃত পোস্ট মাস্টার শুভেন্দু কুমার মাইতির পরিবারে।
শনিবার মারা গেছেন শুভেন্দুবাবু। মৃত্যুর পর জানা যায় তিনি করোনা পজিটিভ ছিলেন। তাঁর সংস্পর্শে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এসেছেন এমন ২৩জনের নমুনা নেওয়া হয় রবিবার ও সোমবার। রবিবার ৭ জনের এবং সোমবার বাকিদের নমুনা সংগ্ৰহ করা হয় ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। রবিবার যে ৭ জনের নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়েছিল তাঁদের মধ্যে মাত্র ৫জনের ফলাফল মঙ্গলবার অবধি পাওয়া গেছে যার ২ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেল। বাকিদের কথা এখনও জানা যায়নি।
যে ২৩জনের নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়েছে তার মধ্যে ১২জন মৃতের সরাসরি সংস্পর্শে আসেন। যার মধ্যে শুভেন্দু বাবুর ৭৮ বছর বয়সী মা, স্ত্রী, দুই পুত্র, দুই দাদা ও বৌদি, ভাতুষ্পুত্র, শ্যালক এবং একজন গ্রামীন চিকিৎসক আছেন। এই ১২ জনের ২জনের রিপোর্ট এসেছে যার মধ্যে ৭৮বছর বয়সী মা ও ৫৭ বছরের বড়দা দুজনই পজিটিভ। স্বাভাবিক ভাবেই বাকি ১০জনের মানসিক অবস্থা আতঙ্কের। এর মধ্যে আবার জ্বর থাকায় শুভেন্দু বাবুর মা ও মেজদাকে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের আ্যম্বুলেন্স করে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বাকি ১১ জনের ততটা আশঙ্কার কারন নেই কারন তাঁরা কোনোও না কোনও কারনে ওই বাড়িতে গেছিলেন কিংবা যাননি। নিছক পাশাপাশি বাড়ি বা জ্ঞাতি হওয়ার সুবাদে নমুনা দিয়েছিলেন যেমন শুভেন্দু বাবুর জেঠা মশাই, জেঠিমা, জেঠতুতো দাদা যারা ইতিমধ্যেই নেগেটিভ এসেছেন।
আশঙ্কার আরও কারন হল যে শুভেন্দু বাবু সহ ১১জনের পুরো পরিবার টাই জ্বরে ভুগেছিলেন। একটি পোস্ট অফিস থেকে অন্য পোস্ট অফিসে বদলি হওয়ার মাঝখানে শুভেন্দু বাবু ১০দিনের ছুটি নিয়েছিলেন। নতুন বদলি হওয়া পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার প্রতাপ পুর পোস্ট অফিসের মত সেই পোস্ট অফিসটিও পূর্ব মেদিনীপুরের। পুরানো পোস্ট অফিস থেকে এসে নতুন পোস্ট অফিসে যাওয়ার আগে ওই ১০দিনের ছুটি কাটানোর সময় তিনি নিজে এবং বাকি পরিবারের সবাই জ্বরে ভোগেন। মনে করা হচ্ছে করোনায় জর্জরিত পূর্ব মেদিনীপুর থেকে সংক্রমন তিনিই নিয়ে এসেছিলেন।
পরিবারের সবাই এমন কি তিনিও বড়দার হোমিওপ্যাথিতে আপাত ভাল হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু নতুন দায়িত্ব গ্রহন করার আড়াই দিনের মাথায় ফের আক্রান্ত হন এবং বাড়ি চলে আসেন আর তিনদিনের মাথায় মৃত্যু হয় তাঁর। এরপরই ফের জ্বর দেখা দেয় তাঁর মা ও মেজদার। আর তারপর মঙ্গলবার দেখা গেল তাঁরই মত মা ও বড়দা দুজনে করোনা পজিটিভ। সুতারং পরিষ্কার যে বড়দার হোমিওপ্যাথিতে করোনা মুক্ত হয়নি। এটা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বলেই হয়ত পরে স্থানীয় এমবিবিএস ডাক্তার অরবিন্দ দাসের কাছে গিয়েছিলেন কিন্তু ততক্ষন সংক্রমন অনেক দূর ছড়িয়ে দিয়েছিল ফলে কাজ করেনি ওষুধ।
ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের মতে, “পরিবারের যথেষ্ট গাফিলতি ছিল এই বিষয়ে। করোনা কালে কোনও ঝুঁকি নেওয়া ঠিক নয়। শুভেন্দু বাবু প্রথমবার কিংবা দ্বিতীয় বার বাড়ি ফিরেই যদি হাসপাতালে চলে আসতেন তবে এই ঘটনা নাও ঘটতে পারত। তাই জ্বর কাশি শ্বাসকষ্ট সহ কিছু হলেই সরাসরি হাসপাতালে চলে আসতে হবে।”