ওয়েব ডেস্ক : গোটা দেশে প্রতিদিন ক্রমশ বেড়েই চলেছে করোনা সংক্রমণের হার। এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে ১৫ই জুনের মধ্যে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের মাধ্যমে নিজ নিজ রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। কিন্তু এই অভিশপ্ত শ্রমিক স্পেশালে রোজই মৃত্যু হচ্ছে শ্রমিকদের। কখনও জল ও খাবারের অভাবে, কখনও আবার অসুস্থতায়। ফের এমনই এক ঘটনা ঘটলো পশ্চিমবঙ্গের এক পরিযায়ী শ্রমিকের সাথে। টানা ৪৮ ঘণ্টা ট্রেনের কামরায় পেটের যন্ত্রণায় কাতরানোর পর অবশেষে প্রাণ হারালেন ২৭ বছর বয়সী মালদহের এক পরিযায়ী শ্রমিক। এই নিয়ে শ্রমিক স্পেশালে এখনও পর্যন্ত মালদহের ৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ৪ মাস আগে কেরলের কায়কলম এলাকায় রাজমিস্ত্রির সহকারি হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলেন মালদহের পুখুরিয়া থানার চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা খতিব শেখ ও তার খুড়তুতো ভাই মতিন শেখ। কিন্তু লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় বাড়ি ফিরতে চাইলেও কোনোভাবেই বাড়ি আসা সম্ভব হচ্ছিলো না। অবশেষে গত ৬ জুন কেরলের কায়কলম জংশন থেকে মালদহের উদ্দেশ্যে তাঁরা শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে ওঠেন। কিন্তু ট্রেনে উঠেই তার পেটে ব্যাথা শুরু হয়। ট্রেনের মধ্যে দুদিন অসহ্য পেটে ব্যথায় কাতরালেও রেলের তরফে কোনো চিকিৎসার সহায়তা করা হয়নি। অবশেষে ব্যাথায় ছটফট করতে করতে মারা যান এই পরিযায়ী শ্রমিক। তবে খতিব শেখের পেট ব্যাথার সাথে জ্বর কিংবা করোনা জাতীয় লক্ষন ছিল না প্রাথমিক ভাবে জানা না গেলেও ট্রেনটি মালদহ স্টেশনে পৌঁছানোর পর দেহটি ময়না তদন্তের জন্য মালদহ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়।
জানা গিয়েছে, মৃত খতিব শেখের পরিবারে স্ত্রী লাকি বিবি, ছয় এবং চার বছর বয়সি দুই ছেলে রয়েছে। স্বামীর রোজগারে চলত সংসার। কিন্তু এখন তাঁরা অসহায়। ফলে পরিবারের তরফে আর্থিক সাহায্যের দাবি জানানো হয়েছে৷ পরিবারের অভিযোগ, দুদিব ধরে পেট ব্যাথায় প্রচন্ড কষ্ট পাচ্ছিল খতিব। কিন্তু রেলের তরফে কোনোরকম চিকিৎসার তো করাই হয়নি এমনকি যাত্রীর শারীরিক অবস্থার কথা ভবে ট্রেনও থামানো হয়নি। ফলে এক্ষেত্রে রেলের চূড়ান্ত গাফিলতির জেরেই অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছে খতিব শেখকে।
মৃতের খুড়তুতো ভাই মতিন শেখ বলেন, “দাদার সঙ্গে আমিও কেরল থেকে ট্রেনে করে ফিরছিলাম। ৬ জুন রাত ৮ টায় আমরা কেরলের কায়কলম জংশন থেকে ট্রেন ধরি। ৭ জুন সকাল থেকেই দাদার পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়। ৪৮ ঘন্টার বেশি সময় ধরে দাদা পেটের যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন। ঘনঘন শৌচাগারেও যান। বমি, পেট খারাপও হয়েছিল। ট্রেন কোথাও থামেনি। যার ফলে চিকিৎসা মেলেনি। সোমবার রাতে দাদা পেটের যন্ত্রণায় ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকেন। এরপর আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। মঙ্গলবার সকালে মালদহ টাউন স্টেশন ঢোকার মুখে দাদাকে যখন ডেকে তুলি, কোনও সাড়া পাইনি। বুঝতে পারি, দাদার মৃত্যু হয়েছে।”
ঘটনায় উত্তর মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, “ঘটনাটি দুঃখজনক। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পরই জানা যাবে। আমরা অসহায় ওই শ্রমিকের পরিবারের পাশে থাকব।” অন্যদিকে, রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ মৌসম নূর ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “রেলের চরম উদাসীনতার কারণেই প্রাণ হারালেন মালদহের পর পর তিনজন শ্রমিক। ট্রেনে কোনো যাত্রী অসুস্থ হলে কোনওরকম পরিষেবা মিলছে না।”
কেন্দ্রের শ্রমিক স্পেশালে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন পরিযায়ীরা। কিন্তু শুধু যে করোনায় কারনেই প্রাণ যাচ্ছে তা কিন্তু নয়। কখনও ক্ষিদের জ্বালায় কখনও আবার উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে প্রতিদিন শ্রমিক স্পেশালে মারা যাচ্ছে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ। ফলে এক্ষেত্রে রেল কর্তৃপক্ষের ব্যাপক গাফিলতি রয়েছে৷ ফলে স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রে ‘শ্রমিক স্পেশাল’ দিন দিন ‘মৃত্য স্পেশাল’ এ পরিণত হচ্ছে।