Homeএখন খবরTrajic farewell: হাজার হাজার জনতার চোখের জলে পাশাপাশি দুই চিতায় দুই বধূ,...

Trajic farewell: হাজার হাজার জনতার চোখের জলে পাশাপাশি দুই চিতায় দুই বধূ, দুই অপরিনত শিশুর সমাধি দাসপুরে! সমস্বরে কান্নায় ভেঙে পড়ল রাজনগর

নিজস্ব সংবাদদাতা: মঙ্গলবার ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল থেকে যখন দুই গৃহবধূ ১৯ বছরের খুশি আর ২১ বছরের নীলাঞ্জনার দেহ এসে পৌছালো তখন বিকাল সাড়ে ৪টা। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার রাজনগর গ্রাম তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষের কান্নায় তখন মুখরিত রাজনগরের শ্মশান। দুই গৃহবধূর সাথেই সযতনে নামানো হয়েছে ৭ মাস ও ৪মাসের দুই গর্ভস্থ শিশুর অপরিণত দেহ দুটিও। তাঁদের জন্য মায়েদের চিতার পাশেই দুটি সমাধি তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর আলো দেখার আগেই মাতৃগর্ভে চিরনিদ্রায় দুটি ভ্রূণ। রাজনগরের মানুষই শুধু নয়, মুখ ভার করে থাকা রাজনগরের আকাশও যেন কান্নায় ভেঙে পড়ার অপেক্ষায়।

ওদিকে দুই ভাই শম্ভু আর সুদর্শন দলুইকে তখন তৈরি করা হচ্ছে শেষ কাজ করার জন্য। নিয়ম এটাই, স্ত্রী আর সন্তানদের সৎকারের দায়িত্ব তাঁদেরই। সোমবার দুপুরে সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিজেদের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হারিয়ে এমনিতেই মর্মান্তিক অবস্থা তাঁদের। গতকাল থেকে কেঁদে কেঁদে চোখের জল শেষ হয়ে গেছে। মন এখন পাথরের মত শক্ত। গত ২৪ঘন্টায় দুচোখের পাতা এক করতে পারেননি দুজনই। করবেন কী করে?

চোখ বন্ধ করলেই যে মাত্র বছর দু-তিনেকের বিবাহিত জীবনের স্মৃতি। এই তো সবে মাত্র জমে উঠেছিল সংসারের খেলা ঘর। শুধুই মনে পড়ে যায় নতুন বিবাহিত জীবনের মান অভিমান, হাসি-খুনসুটির দিন গুলো। আর তারই মধ্যে দুজনেই যে বাবা হতে চলেছিল। সেই দুই ভাইকে ধরে কোনও মতে চিতায় আগুন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদেরই কোলে করে সমাধিতে যাওয়ার আয়োজন দুটি ভ্রুনের।

রাজনগর গ্রামের ভেতরে এদিন পড়ে রয়েছেন শুধুই চলৎশক্তিহীন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। গোটা গ্রাম উঠে এসেছে রাজনগর পশ্চিমের শ্মশানে। শ্মশানকালী মন্দির থেকে একটু দুরেই সাজানো দুই চিতায় শোয়ানো হয়েছে দুই সিমন্তিনীকে। গাঁয়ের এয়োতিরা তাঁদের সিঁথি রাঙিয়ে দিয়েছেন উপচে পড়া সিঁদুরে। পায়ে মোটা করে আলতার ছোপ। শোকে আচ্ছন্ন শম্ভু আর সুদর্শনকে নিয়ে গেলেন গ্রামের লোকেরা। মুখাগ্নি করতে হবে তাঁদেরই।

মর্মান্তিক এই ঘটনায় এদিন পরিবারকে স্বান্তনা দিতে শ্মশানে হাজির হয়েছেন দাসপুর-১ বিডিও বিকাশ নস্কর এবং পঞ্চায়েত সভাপতি  সুনীল ভৌমিক। ভেঙে পড়া সেই অভিশপ্ত বাড়ির অংশটি ঘুরে দেখেন তাঁরা। সোমবার দুপুরে যেখানে ভাত খেতে বসে পাশের বাড়ির দেওয়াল ভেঙে পড়ে চিরঘুমে তলিয়ে গেছিলেন দুই অন্তঃসত্ত্বা। বিকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ পশ্চিমে ঢলে পড়া সূর্যের চাইতেও টকটকে লাল হয়ে যখন দুই গৃহবধূর চিতা জ্বলে উঠলো, যখন শেষবার বল হরি, হরি বল আওয়াজে দুই গৃহবধূ আর দুই শিশুকে বিদায় জানাচ্ছে কীর্তনিয়ার দল, তখনও কাঁদছে দাসপুর।

RELATED ARTICLES

Most Popular