নিজস্ব সংবাদদাতা: ভাজা দিয়ে শুরু করে পান অবধি প্রায় ১৪রকমের আইটেম ! মেনু কার্ডে সাদাভাত থেকে ফ্রায়েড রাইস হয়ে মাছ, মাংস, দই, কয়েক রকমের মিষ্টি, কী নেই? কিন্তু পেট পুরে খাওয়া হলনা অনেকেরই। পঙত বসার পরই পুলিশের হানায় লন্ডভন্ড সব কিছু। কনে যাত্রী থেকে আমন্ত্রিত গ্রামবাসী, অতিথি অভ্যাগতরা পড়িমরি করে পালালেন পুলিশের ভয়ে। করোনা বিধি এড়িয়ে ছেলের বউভাতে এলাহি মহাভোজের আয়োজন করে এখন বিপাকে পড়েছেন বরকর্তা গৃহস্বামী স্বয়ং। অতিমারি আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হবে তাঁকে। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার ঝুমঝুমি গ্রামে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ঝুমঝুমি গ্রামের রাসবিহারী মন্ডল, সম্ভ্রান্ত কৃষকের পাশাপাশি ব্যবসায়ীও বটে। শাসকদল তৃনমূল কংগ্রেসের কট্টর সমর্থক এবং একনিষ্ঠ কর্মী। উচ্চবিত্ত রাসবিহারী মন্ডল তাঁর ছেলের বিয়ে দিয়েছেন দাসপুর থানারই কলাইকুন্ডু গ্রামে। বিয়ে হয়েছে মঙ্গলবার। আর প্রীতিভোজের দিন ধার্য হয় বুধবার। এখন লকডাউন কাল। তাই শুধু ব্রাহ্মণ আর পাঁজিই নয়, তারই সাথে দরকার পুলিশের অনুমতি। নিয়ম মেনে পুলিশের অনুমতি স্বাপেক্ষেই বিবাহ আয়োজন সম্পুর্ন হয়। সরকারি নিয়ম মেনে পরিবার সদস্য বাদ দিয়ে ৫০ জন উপস্থিত থাকতে পারবে বিবাহ অনুষ্ঠানে এই শর্তে পুলিশ অনুমতি দেয়।
কিন্তু মন্ডল পরিবারের তাতে চলবে কেন? একে শাসকদলের অনুগামী তায় উচ্চবিত্ত। পাঁচ গাঁয়ের লোককে আপ্যায়ন না করলে বিয়ে বাড়ি ন্যাড়া ন্যাড়া লাগে তাই পুলিশকে এড়িয়ে একে তাকে নেমন্তন্ন করতে করতে আমন্ত্রিতের সংখ্যা দাঁড়ায় নাই নাই করে সাড়ে পাঁচশ। খবর পেয়ে পুলিশের চক্ষু চড়ক গাছ! একে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রথম করোনা ধরা পড়েছিল এই দাসপুরেই। করোনার প্রথম এবং দ্বিতীয় ঢেউয়ে দাসপুর এলাকায় সংক্রমন ছড়িয়েছিল ব্যাপক আকারে। হয়েছে প্রচুর মৃত্যুও।
প্রথম দফায় করোনা সামলাতে রীতিমত নাওয়া-খাওয়া চলতি লকডাউনে সেই সংক্রমনের হার বেশ নিচের দিকে। এখন এক বড় লোকের খেয়াল আর বিলাসিতা যাপন করতে শিকেয় উঠবে করোনা বিধি? যদি একবার এই বিয়ে বাড়ি থেকে সংক্রমন ছড়ায় তবে শত শত মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন ফলে ঝুঁকি নেয়নি পুলিশ। খবর পেয়েই হানা দেয় প্রীতিভোজের আসরে। খালি করে দিতে বলা হয় বউ-ভাতের মন্ডপ। বন্ধ করে দেওয়া হয় অনুষ্ঠান, খাওয়া দাওয়া।
দাসপুরের মহকুমা পুলিশ শাসক তথা এস.ডি.পি.ও অগ্নিশ্বর চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘মারাত্মক অপরাধের মধ্যে পড়ে এই কাজ। গৃহস্বামী অথবা উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে মহামারি আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হবে অভিযুক্তকে।” স্থানীয় তৃনমূল নেতা তথা দাসপুর পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ জয়দেব সেনাপতি জানান, ‘আমাদের কিছুই বলার নেই। আইন আইনের পথে চলবে। পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”
স্থানীয়রা জানিয়েছেন শুধু মাত্র ১২০জন মত কনেযাত্রী এসেছিল। সকাল থেকেই লাইন দিয়ে কাটা হয়েছিল খাসি। তবে সবচেয়ে অসুবিধা হয়েছে তাঁদের যাঁদের কিনা হাঁড়ি বন্ধ নেমন্তন্ন ছিল। রাত ৯টার সময় পাত থেকে উঠে এসে অনেক গিন্নিকেই বাড়িতে ফিরে উনুন ধরাতে হয়েছে কিনা! কেউ কেউ অবশ্য মুড়ি খেয়েই রাত কাটিয়েছেন। এক ব্যক্তি জানালেন, “পুলিশ এসেছিল সাড়ে আটটা-ন’টা নাগাদ। আমি সবে মাত্র ছ্যাঁচড়াটা ধরেছিলাম। জাস্ট ১০মিনিট পরেই মাংসটা পড়ত। ওই অবস্থায় উঠে আসতে হল।”