নিজস্ব সংবাদদাতা: একতলা দোতলা নয়, আন্ডার গ্রাউন্ড ধরলে চারতলার বাড়ি। খালের একেবারে বুকেই সেচদপ্তরের জায়গা দখল করে ৩০ কামরার ঘর। একদিনে নয়, মাসের পর মাস ধরে তৈরি হয়েছে কিন্তু কেউই দেখতে পায়নি। এই কোটি টাকার অট্টালিকার নির্মান! দেখার কথাও নয়, একে অর্থ আর প্রতিপত্তি অন্য দিকে শাসকদলকে একেবারে কোলে বসে রাখেন ওই ব্যবসায়ী। শনিবার সাত সকালেই খালের গর্ভে চলে গিয়েছে গোটা বাড়িটাই। সকলের চোখের সামনেই তাসের ঘরের মতই ভেঙে পড়েছে বাড়িটি। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানা এলাকার নিশ্চিন্তিপুর গ্রামের এই ঘটনায় প্রকৃতির নির্মম প্রতিশোধে উল্লসিত স্থানীয় মানুষ।
জানা গেছে নিশ্চিন্তিপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটির নাম গুমরিয়া খাল, কাঁসাই নদীর শাখা পলাশপাই খালের একটি উৎস থেকে শুরু হয়ে ছোটবড় শতাধিক গ্রাম পেরিয়ে এ খাল পড়েছে রূপনারায়ন নদে। গভীর এই খাল বর্ষায় ফুলে ফেঁপে অতিরিক্ত জল বের করে দিয়ে বন্যাপ্রবন এলাকাকে বাঁচায় আবার সারা বছর চাষের জলের যোগান দেয়, পাশপাশি ফিবছর মাছেরও যোগান মেলে এই খাল থেকে। এই খাল সেচদপ্তরের অধীন, খালের পাড়ও তাই। কিন্তু কোনও নিষেধ না মেনেই খালের পাড়ে গজিয়ে উঠেছে অজস্র ঘর বাড়ি। গরিব মানুষের ঝুপড়ি তবুও মেনে নেওয়া যায় কিন্তু ইদানিং খালের পাড় ভেঙে, বড়বড় গর্ত করে গড়ে উঠছে মস্ত মস্ত ইমারত। যা দিন দিন খালের অস্তিত্বকেই বিপন্ন করছে। এমনই এই বাড়ি যার মালিক ব্যবসায়ী নিমাই সামন্ত। তাঁর নিজের বসতবাড়ি খাল থেকে দেড় কিলোমিটার দুরে তা স্বত্ত্বেও খালের পাড়ে বড় জায়গা দখল করে আন্ডারগ্রাউন্ড সমেত চারতলা বাড়ি হাঁকিয়ে স্থানীয় ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের জিনিসপত্র রাখার জন্য ভাড়া দিয়েছেন, মাস গেলে মোটা কামাই।
সম্প্রতি সেচ দপ্তরের উদ্যোগে খালের সংস্কারের কাজ চলছে। নতুন করে খালের মাটি তুলে খালের গভীরতার বাড়ানো হচ্ছে যাতে আসন্নবর্ষায় খালের জলধারন ক্ষমতা বাড়ে, বন্যা না হয় যা কিনা গত মরসুমে শেষ করে দিয়েছিল দাসপুরকে। সংস্কারের কাজ চলার সময় সেচদপ্তরের আধিকারিকরা লক্ষ্য করেন সামন্ত শুধু পাড়ই নয়, খালেরও বড় অংশ খেয়ে বসে আছেন। সেচদপ্তরের পক্ষে সামন্তকে এই বেআইনি নির্মাণ সরিয়ে নিতে বলা হয়, সামন্ত চুপ করে বসে থাকেন। খালের কাজ চলার সময়েই সামন্তের বাড়ির তলায় ধ্বস নেমেছিল।
এরপর শুক্রবার, দিনভর ভারি বৃষ্টি হয়েছিল ঘাটাল ও দাসপুর এলাকায়। খালের গভীর অংশে নিচের মাটি নরম হয়ে যায়। আর অত বড় বাড়ির ভার নিতে না পারায় শনিবার পুরো বাড়িটাই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে খালের ওপর।
এদিকে ওই প্রকান্ড বাড়ি ভেঙে পড়ার ফলে গোটা খালটা ভর্তি হয়ে যাওয়ায় জল চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দ্রুত ওই ভেঙে পড়া অংশ সরাতে না পারলে জল জমে প্লাবিত হতে পারে এলাকা। ঘাটাল মহকুমা সেচ বিভাগের সহকারি ইঞ্জিনিয়ার সুমিত দাস বলেছেন, “আমরা ১৫দিন আগেই সামন্তকে বেআইনি নির্মাণ সরিয়ে নিতে বলেছিলাম। এরপর ওনাকে অবিলম্বে ওই খাল থেকে ভেঙে পড়া কাঠামো সরিয়ে নেওয়ার নোটিশ পাঠানো হচ্ছে। নচেৎ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।”
উল্লেখ্য শুক্রবার রাতেই বাড়িটি কাঁপতে দেখে ওই বাড়ির ভেতরে রাখা নিজেদের মালপত্র সরাতে শুরু করেছিল ব্যবসায়ীরা। অনেকের মালপত্র থেকেও গেছিল। তবে ভাগ্য ভাল দিনের বেলায় বাড়িটি ভেঙে পড়েছিল। রাতে যখন সবাই মালপত্র সরাচ্ছিল তখন ভেঙে পড়লে প্রানহানি হতে পারত।
সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুভাস মন্ডল বলেছেন, বাড়িটি বানানোর কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি তাঁদের কাছ থেকে। প্রশ্ন হল তাহলে বাড়ি বানানোর সময় কেন সেচ দপ্তর বা পঞ্চায়েত কোনও ব্যবস্থা নিলনা , কেন আগেই পুলিশে এফআইআর হলনা? জবাব নেই। স্থানীয় জেলাপরিষদ সদস্য, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাপরিষদের অধ্যক্ষ তপন দত্ত জানিয়েছেন, আমরা প্রশাসনকে বলব, ‘খালের পাড়ে সমস্ত বেআইনি নির্মান সরিয়ে দেওয়ার জন্য।’ একই কথা বলেছেন, জেলাপরিষদের সেচ কর্মাধক্ষ্য রমাপ্রসাদ গিরি।
যদিও স্থানীয় মানুষ এই সব স্তোক বাক্য বলেই মনে করছেন। তাঁদের বক্তব্য, পা থেকে মাথা শাসকদলের সমস্ত নেতাই ওই নিমাই সামন্তের টাকায় বশ। স্থানীয় এক কৃষক জানালেন, ” এতদিন ধরে সবাই বেআইনি কাজটা দেখে আসল, কেউই কিছু বললনা। আজ জনরোষের ভয়ে সবাই নিমাই সামন্তের বিরোধী হয়ে গেল? আপনারা দেখবেন কিছুই হবেনা ওঁর। দিব্যি থাকবে। আমরা খুশি যে খালটা নিজের মত করে তার জঞ্জাল সরিয়ে নিয়েছে।”