নিজস্ব সংবাদদাতা: ফের প্রান ঝরল এক রাজনৈতিক কর্মীর। কিছুদিন আগেই ভিনরাজ্য থেকে আসা এক বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হল কলকাতার এক বেসরকারি নার্সিং হোমে। নিহত বছর পঁচিশেকের ওই যুবকের নাম পবন জানা। তাঁর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন থানার অন্তর্গত চক ইসমাইল গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার কুশমি গ্রামে। ঘটনায় আহত হয়েছেন মৃত বিজেপি কর্মীর বাবা অজয় জানাও।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কিছু পরেই মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছায় জেলায়। তারপরই তীব্র উত্তেজনায় ফুটছে ওই গ্রাম সহ সংলগ্ন এলাকায়। বুধবার সন্ধ্যায় বহিরাগত তৃণমূল দুষ্কৃতিদের সাহায্য নিয়েই বিজেপির তিনজন কর্মকর্তার ওপর আক্রমন চালানো হয় এমনটাই অভিযোগ করেছেন বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শমিত দাস। অন্যদিকে তৃনমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি জানিয়েছেন, ‘তৃণমূল কর্মীদের ওপর প্রথমে আক্রমন চালায় বিজেপি কর্মীরা পরে স্থানীয় মানুষের প্রতিরোধে আহত হন ওই বিজেপি কর্মীরা। মাইতি দাবি করেছেন, এই ঘটনায় তাঁদেরও দুই কর্মী মারাত্মক আহত হয়েছেন।’ মাইতি এও বলেছেন যে গত কয়েকদিন ধরেই তাঁদের কর্মীরা মাথা উঁচু করেই কয়েকটি জায়গা থেকে বিজেপিকে হটিয়ে দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে গত চারদিন ধরেই ওই এলাকায় তীব্র উত্তেজনা কাজ করছিল। দাঁতন যে বিধানসভা এলাকায় পড়ে সেই কেশিয়াড়ী বিধানসভা এলাকার বিজেপি সংযোজক মোশাফ মল্লিক জানিয়েছেন,”গত কয়েকদিন ধরেই বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে গৃহসম্পর্ক অভিযান চালাচ্ছিল বিজেপির কর্মীরা। এই পর্বে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, ১০০দিনের কাজ ইত্যাদি নিয়ে মানুষের সঙ্গে আলোচনা চলে। জানতে চাওয়া হয় বাড়িতে পরিযায়ী শ্রমিকরা ১০০দিনের কাজ পাচ্ছে কিনা ইত্যাদি। পাছে তৃনমূলের দুর্নীতিগুলো ধরা পড়ে যায় তাই রাগে ফুঁসছিল তৃনমূলের লোকেরা।”
মল্লিক জানান, “বুধবার সকালে আমাদের এক কর্মী সঞ্জয় দাস গ্রামের মোড়ে এলে তাকে মারধর করে তৃনমূলের লোকেরা। এরপর বিকাল বেলায় কয়েকজন মিলে ওদের কাছে জানতে চায় যে কেন সঞ্জয়কে মারা হল? তখুনি লাঠি সোটা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে দুষ্কৃতি বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে ওঁদের ওপর। মাথা ফালাফালা করে দেওয়া হয় পবনের। এরপর একে একে লুটিয়ে পড়েন অজয় জানা, গুনধর মান্না, রাসবিহারী মহাপাত্ররা।”
আহত চার বিজেপি কর্মীকে প্রথমে দাঁতন গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে স্থানান্তরিত করে দেওয়া হয় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে ফের পবনকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতায়। কলকাতার সেই বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় পবনের।
গোটা ঘটনার পিছনে পুলিশকে দায়ী করে তীব্র ভাষায় রচনা করেছেন জেলা বিজেপির সভাপতি। তাঁর অভিযোগ এলাকায় ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কথা পুলিশকে বারংবার জানানো হয়েছে। কিন্তু পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশের অবশ্য দাবি। গত কয়েকদিন ধরেই এলাকায় পুলিশ গিয়েছে। পুলিশের একটি অংশ দাবি করেছে শুধুই রাজনৈতিক নয়, ঘটনার পেছনে রয়েছে একটি গ্রাম্য বিবাদও। স্থানীয় একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, ওই গ্রামে জাতি বর্নগত দ্বন্দ্বের একটি চোরা স্রোত কাজ করে এবং সেটা ক্রমশ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। ঘটনা ক্রমে দুই রাজনৈতিক দল এই দুটি অংশের সমর্থনে ওই এলাকায় পুষ্ট। রাজনীতি আর জাতি বিদ্বেষ একত্র হয়ে গেছে এই ঘটনায়।
উল্লেখ্য লোকসভার সময় থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বেশ কয়েক বছর আগে এক বিজেপি কর্মীর মৃত্যুর পর কিছুটা শান্ত ছিল দাঁতন। লোকসভার পরেই ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। মৃত্যু হয় এক তৃণমূল কর্মীর। বিজেপির দাবি লোকসভায় শোচনীয় ফল হওয়ার পর থেকেই তৃণমূল মরিয়া হয়ে উঠেছে এলাকার দখল নিতে। অন্যদিকে তৃনমূলের দাবি, বিজেপি থেকে দলে দলে মানুষ তৃণমূলে আসছে দেখেই মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি।
এদিকে পবনের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েই দাঁতন ছুটে যান বিজেপি সভাপতি শমিত দাস। তাঁর আসার খবর পেয়েই দাঁতন থানার কাছে ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশ। শমিত জানান, “আগামী কাল দাঁতন থেকে কুশমি গ্রামে অভিযান করবে দল। এরজন্য আমরা এই পুলিশের কাছে আমরা অনুমতির জন্য যাবনা। আগামীকাল সাংসদ দিলীপ ঘোষও যোগ দেবেন আমাদের সঙ্গে।” শমিতের হুঁশিয়ারী “আমরা থানায় যাবনা, যেদিন যাব সেদিন থানা জ্বালিয়ে দিয়ে আসব।”