অশ্লেষা চৌধুরী: প্রবল শক্তি নিয়ে বুধবার মধ্যরাতে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় নিভার। বুধবার রাত ১১টার দিকে তামিলনাড়ুর মারাক্কানম ও পুদুচেরির মধ্যবর্তী অঞ্চলে তাণ্ডব শুরু করে ঝড়টি। এখন পর্যন্ত রাজ্যের কয়েক লাখ মানুষকে উপকূলবর্তী এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়েছে তামিলনাড়ু সরকার। যদিও তবে এত প্রচেষ্টার পরেও এড়ানো গেল না প্রাণহানি। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘নিভার’- এর দাপটে তামিলনাড়ুতে মৃত্যু হল তিনজনের। আহত হয়েছেন আরও তিনজন। একথা জানিয়েছেন তামিলনাড়ুর অতিরিক্ত চিফ সেক্রেটারি অতুল্য মিশ্র। তবে সংবাদসংস্থা রয়টার্স সূত্রে খবর, চেন্নাই এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় কমপক্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
আঘাত হানার পর অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় নিভার দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর ফলে বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও অসংখ্য গাছ উপড়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিভারের কারণে দুই উপকূলীয় রাজ্যের প্রায় দুই লাখ মানুষকে আগেই নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তৎপরতার সঙ্গে চালানো হচ্ছে উদ্ধার কাজ।
বাসিন্দাদের ঘরে থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন তামিল নাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ই পালানিস্বামী। তিনি বলেছেন, ৪ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিৎ করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের বাসিন্দাদের সহযোগিতার জন্য বলা হয়েছে।
তবে, তামিলনাড়ুতে ইতিমধ্যে ঝড়ের দাপট কমেলেও কয়েকটি অংশে অবশ্য ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মৌসম ভবনের সাম্প্রতিক বুলেটিনে জানানো হয়েছে, শক্তি হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে ‘নিভার’। আপাতত সেটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। পরবর্তী ছ’ঘণ্টায় তা আরও দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। বৃহ্স্পতিবার রাতের মধ্যে তা নিম্নচাপে পরিণত হয়ে যাবে।
তামিলনাড়ুর অতিরিক্ত চিফ সেক্রেটারির বরাত দিয়ে সংবাদসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত সেই রাজ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন তিনজন। ১০১ টি কুঁড়েঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপড়ে যাওয়া ৩৮০ টি গাছ ইতিমধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা পুরোপুরি ফিরে এসেছে। চেন্নাই-সহ তামিলনাড়ুর একাধিক জায়গায় জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও অটো বা গাড়ির উপরে ভেঙে পড়েছে গাছের ডাল।
একই অবস্থা পুদুচেরিতেও। বৃহস্পতিবার পুদুচেরি এবং শহরতলিতে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপড়ে গিয়েছে গাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। নীচু জায়গাগুলির অধিকাংশ জলের তলায় চলে গিয়েছে। তবে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কোথাও এখনও প্রাণহানির খবর মেলেনি। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী। তিনি জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পুদুচেরিতে ২৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অধিকাংশ আবাসনে জল জমে গিয়েছে। ফলে বাড়িতেই আটকে পড়েছেন মানুষজন।
এদিকে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, দুর্বল ‘নিভার’-এর প্রভাবে ব্যাঙ্গালুরু এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ হবে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বিক্ষিপ্তভাবে কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বৃহ্স্পতিবার ব্যাঙ্গালুরু শহরাঞ্চল এবং গ্রামীণ, কোলার, কোলার, চিক্কাবল্লাপুর, তুমাকুরু, মান্ড্য এবং রামানাগাড়া জেলায় মাঝারি বর্ষণ হতে পারে। সেখানে হলুদ সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন।
প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কতা হিসেবে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী কে পালানিস্বামী বৃহস্পতিবার ১৩ জেলায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছেন। পুদুচেরিতেও সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত সব স্কুল বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় তামিলনাড়ু উপকূলে রণতরী আইএনএস জ্যোতি মোতায়েন করেছে নৌবাহিনী। খাবারসহ উদ্ধারকাজের বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখা হয়েছে ওই জাহাজে। তামিলনাড়ুর বাস পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ক্ষতির আশঙ্কায় চেন্নাই বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়েছে।
এছাড়াও চেন্নাইয়ের অধিকাংশ বড় সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তামিলনাড়ু সরকারের পক্ষ জানানো হয়েছে, রাজ্যে ইতোমধ্যে ১৫০টি ত্রাণ শিবির তৈরি রাখা হয়েছে। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে পুদুচেরিতে। এ সময়ে সব দোকান বন্ধ থাকবে। তবে দুধের দোকান, পেট্রলপাম্প খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে বিমানের ৪৯টি ফ্লাইট।