নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা পরিস্থিতিতে ছাড়েননি জেলা। অতিমারির দুর্যোগে কলকাতায় গিয়ে নাগরিক কেতার চাইতে জেলার বিপর্যয়ে মন্ত্রীর চাইতে জেলার সাধারন নেতা হয়েই দায়িত্ব পালন করাটাই শ্রেয় বলে মনে করেন বারংবার। ফণী হোক বা বুলবুল তিনি জেলাতেই থেকেছেন বরাবরই। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
মঙ্গলবার আমফান যখন দিঘা অভিমুখে আরও ৩৭৫কিলোমিটার এগিয়ে এসেছে, ঝড়ের দাপট শুরু হয়ে গেছে, বড় ফোঁটার বৃষ্টি ঝাঁপিয়ে পড়ছে দিঘার কোস্টাল কংক্রিটের রাস্তায়, রাত সাড়ে ৮ টা, ত্রস্ত জনতার কাছে ছুটে এলেন রাজ্যের সেচ ও জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী আর এসেই বললেন, কোনও ভয় নেই দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বশক্তি দিয়ে তৈরি আছে প্রশাসন।
মাথায় ছাতা ধরেছেন নিজেই,মুখে মাস্ক শুভেন্দু জানালেন, ” সাইক্লোনের সাথে লড়াই করার শক্তি কারও নেই বিশেষ করে যখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে আমফান নাকি ফণী আর বুলবুলের চেয়েও জোরালো কিন্তু মানুষের যাতে মৃত্যু না হয়, সম্পত্তি যথা সম্ভব কম ক্ষতি হয় তার জন্য ব্লুপ্রিন্ট প্রস্তুত আছে। কোনও দুশ্চিন্তা না করে সাবধানে থাকুন।”
কী সেই ব্লুপ্রিন্ট জানিয়ে মন্ত্রী বললেন, বাংলার বিস্তৃত উপকূল ভূমি যা কিনা পূর্ব মেদিনীপুর হয়ে দক্ষিন ও উত্তর ২৪পরগনা অবধি ছড়িয়ে আছে সেই উপকূলের উদয়পুর থেকে নয়াচর আর সাগর থেকে সন্দেশখালি একাধিক জায়গায় কন্ট্রোলরুম খুলে ২৪ঘন্টা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে এবং কলকাতার জলসম্পদ ভবনে অবস্থিত মূল কন্ট্রোলরুমের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
শুভেন্দু বলেন,” দিঘা কাকদ্বীপ ও বসিরহাট, পাথরপ্রতিমায় চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়া সাগর, বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ ওদিকে সন্দেশখালি ও হিঞ্জলগঞ্জ থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের মন্দারমনি হলদিয়ায় বিশেষ নজরদারি চলছে। বাঁধের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হওয়ার আগেই তা আটকানোর জন্য প্ল্যাস্টিক বালির বস্তা ও ব্ল্যাকস্টোন মজুত করা হয়েছে।”
প্রশাসনের আধিকারিক, জনপ্রতিনিধিদের একটি দল গঠন করে দিঘার উদয়পুর থেকে শংকরপুর, মান্দারমনি, কাঁথির জুনপুট, খেজুরি, নন্দীগ্রাম হয়ে নয়াচর অবধি প্রায় ১০০কিলোমিটার উপকূলের দায়িত্বে শুভেন্দু নিজেই থাকছেন বলে জানা গেছে।
মন্ত্রী বলেন, “এসডিআরএফ ও এনডিআরএফ এবং সিভিল ডিফেন্সের ২০০ জওয়ান মোতায়েন হয়েছেন বিপর্যয় মোকাবিলায় তাছাড়াও আগে থেকেই কথা বলে প্রস্তুত রয়েছেন ভারতীয় উপকূল রক্ষীবাহিনী। ইতিমধ্যেই এঁরা ৫০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছেন। উপকূলের ১০কিলোমিটারের মধ্যে কাঁচাবাড়ি ও টিনের চাল যুক্ত বাড়ির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মন্ত্রীর কথায়,” পূর্বাভাস অনুযায়ী দিঘায় ৩থেকে ৪ মিটার ও সুন্দরবন এলাকায় ৪ থেকে ৬ মিটার অবধি জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। সুন্দরবন এলাকায় নদী বাঁধ গুলির উচ্চতা ৫.৮মিটার তাই ৬ মিটার জলোচ্ছ্বাস হলে সমস্যা আছে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে একটু সমস্যা হতে পারে তবুও আমরা সবরকম ভাবেই প্রস্তুত।”
শুভেন্দুর কথায়, ” বুধবার জোয়ারের আগেই দিঘার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাওয়ার কথা। প্রচুর গাছ, বিদ্যুৎ খুঁটি উপড়ে পড়তে পারে। সেই কারনে কাটার,সার্চ লাইট,গ্যাস কাটার ইত্যাদি প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাতে বিকাল থেকে রাতের মধ্যে রাজ্য সড়ক, গ্রামীন সড়ক পরিস্কার করে দেওয়া যায়।” সব মিলিয়ে আগামী কয়েকটা দিন জেলাবাসীর সঙ্গেই রয়েছেন মন্ত্ৰী বলার অপেক্ষা রাখেনা।