নিজস্ব সংবাদদাতা: স্বামী স্ত্রীর সম্মিলিত অত্যাচারে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন বাবা মা। ছেলে–বউমার অত্যাচারে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা স্থানীয় পুলিশের দ্বারস্থ হন। কিন্তু সেখানেও কোনো সুরাহা মেলেনি। তবে কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে তাঁদের দুর্দশা কিছুটা হলেও কাটল। তাঁরা নিরুপায় হয়ে নিজেদের অধিকার ফেরানোর আবেদন করেন আদালতের কাছে। আদালত রায়ে উল্টে ছেলে-বউমাকেই ঘর থেকে বের করে দিয়ে প্রৌঢ় দম্পতিকে পুনরায় তাঁদের বাস্তুভিটে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে।
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্তা বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা করেন। আবেদনকারীদের আইনজীবী সৌগত মিত্র বলেন, “হাই কোর্ট ওই ছেলে–বউমাকেই ঘর থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বৃদ্ধ দম্পতিকে দ্রুত বাস্তুভিটেতে ফেরাতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে। ওই দম্পতি ঘরে ফিরলেই স্বস্তি পাবেন।” নজিরবিহীন এই রায়ে খুশির হওয়া ওই দম্পত্তির পরিচিত মহলে। যাঁরাই এই রায়ের কথা শুনেছেন তাঁদের সবার কাছেই স্বস্তি হয়ে এসেছে এই রায়। বৃদ্ধ বয়সে অসহায় মানুষের কথা আর কেউ না শুনুক আদালত তো শুনেছে।
বর্তমানে বাঁড়ার স্কুল ডাঙ্গার বাসিন্দা ওই বৃদ্ধ বৃদ্ধা বাস্তু ভিটা ছেলে বৌমার নামে না করে দেওয়ায় ছেলে–বউমা মারধর করে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়ায় তাঁরা দু’জনই নিরুপায় হয়ে পুরুলিয়া শহরের স্টেশন রোড এলাকায় মেয়ের বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। জানা গিয়েছে, ৭৭ বছরের আলি বুরহান নামে ওই বৃদ্ধ বাঁকুড়া জেলা পরিষদের কর্মী ছিলেন। তাঁর স্ত্রী মমতাজ বেগমের বয়স ৭৩ বছর। বেশ কিছুদিন ধরেই বসতবাড়ী নিজেদের মনে হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ছেলে আসমান আলি তার স্ত্রী খুসরো বানোকে সঙ্গে নিয়ে বাবা-মায়ের উপর লাগাতার অত্যাচার করত বলে অভিযোগ।
অত্যাচারের নানা রকম ফন্দিও বের করে নিয়েছিল ছেলে-বউমা। ঘরের শৌচালয় ব্যবহার করতে না দেওয়া, খাবার নিয়ে খোঁটা, ওঁদের ঘুমের বা বিশ্রামের সময় চিৎকার করে কথা বলা কিংবা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করা, জোরে গান বাজানো, এখুনি করে দিতে হবে বলে বৃদ্ধাকে কোনও কাজ দেওয়া, পেনশনের টাকা চাওয়া, ঘর তাদের নামে লিখে দেওয়ার জন্য ক্রমাগত চাপ দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই চাপ ক্রমাগত বাড়ছিল বলে অভিযোগ। কিন্তু ওই বৃদ্ধ তার বাস্তুভিটে ছেলের নামে করতে নারাজ ছিলেন। ফলে অশান্তিও প্রতিদিন বাড়ছিল।
এরপর আসে বৃদ্ধ দম্পত্তির জন্য সেই মারাত্মক দিনটি। গত বছরের ২০শে মার্চ ছেলে বৌমার অত্যাচারের মাত্রা সহনসীমার বাইরে হয়ে যায়।তারা বৃদ্ধ বাবা–মাকে মারধর করে ঘর থেকে বার করে দেয় বলে অভিযোগ। পাড়া প্রতিবেশী কেউই কিছু করতে পারেনি। বাবা-মার প্রতি এমন ব্যবহার করতে নেই বলে ছেলে আর ছেলের বউয়ের মুখ শুনতে হয় তাঁদের। ফলে হাত তুলে দেন তাঁরাও। এরপর আর থাকার মত পরিবেশ ছিলনা নিজেদের তৈরি করা ঘরেই। একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাঁরা পুরুলিয়া শহরে মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন।
জানা গেছে ওই বছরের ১ নভেম্বর তারা বাঁকুড়া সদর থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশের অসহযোগিতার ওই বৃদ্ধ দম্পতি ঘরে ফিরতে পারেননি। ছেলের প্রভাব নাকি টাকা কি দিয়ে যে সবাইকে বশ করেছিল তারা কে জানে? এরপর আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বৃদ্ধ। মাসখানেক পর কার্যত বাধ্য হয়েই ওই বছর ডিসেম্বর মাসে তাঁরা কলকাতা হাই কোর্টে রিট পিটিশন করেন বাড়ী ফেরত পাওয়ার উদ্দেশ্যে। সেই মামলার রায়েই দম্পতির পক্ষে ওই রায় দেয় হাইকোর্ট। আদালতের রায়ে স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। আক্রান্ত বৃদ্ধ আলি বুরহান বলেন, “হাই কোর্টের রায় শুনেছি। এবার বাড়ি ফিরতে চাই।”