অশ্লেষা চৌধুরী: ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী-দের জন্য পাঠানো টিকায় ছল করে ভাগ বসাচ্ছেন তৃনমূল নেতা ও বিধায়কেরা। রাজ্য জুড়ে সমালোচনার ঝড়। কোভিড টিকাকরণের বিধি লঙ্ঘন করেছেন তৃণমূল নেতা বিধায়করা, অভিযোগ গেরুয়া শিবিরের।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে শুরু হয়েছে করোনার টিকাদান প্রক্রিয়া। অথচ সেই টিকা নিয়েই এখন সরগরম বাংলার রাজনীতি।, যেই টিকা ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী-দের জন্য পাঠানো, সেই করোনা টিকা ‘হাসপাতাল রোগীকল্যাণ সমিতির সদস্য’র অজুহাত দেখিয়ে নিয়ে নিচ্ছেন অনেক তৃণমূল নেতা ও বিধায়কেরা।
প্রথম পর্বে শুধুমাত্র ডাক্তার নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরাই, এই ভ্যাকসিন পাবেন; এমনটাই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকেও; সেটাই ঠিক হয়েছিল। তারপরেও তৃণমূল নেতা, বিধায়কদের করোনা ভ্যাকসিন পাওয়া নিয়ে; রাজ্য জুড়ে শুরু রয়েছে সমালোচনা। এঁরা কি করে পেলেন করোনা টিকা? তা নিয়ে চড়ছে রাজনৈতিক পারদ।
আসানসোল পুরনিগমের স্বাস্থ্য বিভাগের বিদায়ী মেয়র পরিষদ দিব্যেন্দু ভগৎ-কে দিয়েই আসানসোলে টিকাকরণ শুরু হয়। টিকা নিলেন কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ও। ডাক্তার না হয়েও বাগদা গ্রামীণ হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিলেন বাগদার বিডিও জ্যোতি প্রকাশ হালদার ও তার সঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা রায়।
পূর্ব বর্ধমানের ভাতার হাসপাতালে ১০০ জনকে টিকা দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন ভাতারের বিধায়ক প্রাক্তন বিধায়ক, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সংঘমিত্রা ভৌমিক, পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ জহর বাগদি, ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ মহেন্দ্র হাজরা প্রমুখ। জনপ্রতিনিধিদের সকলে প্রথম দিনেই টিকা নেন।
এখানেই শেষ নয়, এই টিকাকরণের লিস্টের প্রথমেই নাম ছিল, আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী। আর সেই তালিকা প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা, জেলা জুড়ে ওঠে বিতর্কের ঝড়। বিধায়ক জানান, ‘আমার যেহেতু পি.এইচডি আছে এবং জেলা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান, সেজন্য হয়তো জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে কোনও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।‘
এই বিষয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতাল সুপার ডঃ চিন্ময় বর্মন বলেন, ‘আলিপুরদুয়ার জেলা সদর হাসপাতালের রোগী কল্যান সমিতির চেয়ারম্যান হিসেবে বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তীর নাম টিকা দেওয়ার তালিকায় উঠেছে এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী নামটি তালিকাতে রাখা হয়েছে।
তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফেও একই দাবী করা হয়েছে। দলের মুখপাত্র তাপস রায় বলেন, ‘মানুষ মাত্রই ভুল করেন। এমন ভাব করা হচ্ছে যেন বিজেপির নেতারা কোনও ভুল করেন না এবং তাঁরা সর্বদা ঠিক হন। সৌরভই নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ওখানেই বিষয়টিতে ইতি পড়ে গিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর্মীরাই টিকা পাবেন।’ আর টিকাকরণের দিন উপস্থিত থাকলেও বিধায়ক সেদিন টিকা নেননি।
তবে আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক টিকা না নিলেও বাকিরা টিকা নিয়েছেন। আর এটা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘আম্ফানের টাকা চুরি, চাল চুরি করেও স্বাদ মেটেনি, এবারে টিকা চুরি করছে।‘
বিজেপির আরও দাবী, কোভিড টিকাকরণের বিধি লঙ্ঘন করেছেন তৃণমূল নেতা বিধায়করা। রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে তাঁরা প্রথম দফায় করোনা ভ্যাকসিন চুরি করেছেন বলেও অভিযোগ গেরুয়া শিবিরের। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিকাপ্রাপক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, মহেন্দ্র হাজরা, বনমালি হাজরা, বাসুদেব যশ এবং জহর বাগদিরা। তাঁরা জানান, তাঁদের নামও করোনার টিকাকরণের তালিকায় ছিল। কারণ, তাঁরা প্রত্যেকেই হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির সদস্য।
তবে, তৃণমূল নেতারা করোনা টিকা নেওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, “অত্যন্ত অন্যায় কাজ করেছেন তারা।”