নিজস্ব সংবাদদাতা: দেশ ও রাজ্যের সঙ্গে যখন জেলায় হু হু করে করোনার প্রকোপ বাড়ছে তখন করোনা ভ্যাকসিনের সঙ্কট দেখা দিয়েছে জেলায়। ভোর থেকে দাঁড়িয়েও ভ্যাকসিন না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে বহু মানুষকে। করোনার যখন বাড়বাড়ন্ত তখন ভ্যাকসিনের এই সংকট ভয় বাড়াচ্ছে মানুষের। করোনা কালের শুরু থেকে ১৫ই এপ্রিল অবধি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সংক্রমিত হয়েছে ১৭হাজার ৭৬৭ জন। জেলায় মোট মৃত্যু হয়েছে ওই তারিখ অবধি ২৭১ জনের এবং বর্তমানে সংক্রমনের আওতায় আছেন ওই তারিখে ৩৮৯ জন। সমস্যার কারণ হল এই যে বর্তমান সংক্রমনের হার অত্যন্ত বেশি। ১৫ই এপ্রিল জেলায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮২ জন। পরের দিন ১লা বৈশাখ থাকায় করোনা পরীক্ষা হয়নি। ১৭ তারিখ ফের পরীক্ষা হয় যেখানে ৮৯জন আক্রান্ত হয়েছেন।
শুরু থেকেই সংক্রমনের হার বেশি খড়গপুর শহরেই। যেমন গত দুদিন জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছে ১৭২ জন যার মধ্যে খড়গপুর শহরেরই ৪২ জন রয়েছেন। এই ৪২ য়ের মধ্যে আবার ২৩জনই রেল এলাকার। খড়গপুর শহরের প্রায় সর্বত্রই সংক্রমন নজরে পড়েছে। আইআইটি, ডিভিসি, তালবাগিচা, প্রেমবাজার, ইন্দা, সোনামুখি, মালঞ্চ, নিমপুরা, খরিদা সর্বত্রই করোনার দাপট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। খড়গপুরের পরেই রয়েছে মেদিনীপুর শহর ও সদর এলাকা। গত ২দিনে যেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৩০জন। এখনও অবধি মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দনগর, বিধাননগর, সিপাহীবাজার, কুইকোটা, কর্নেলগোলা, ধর্মা, বড়বাজার, মহাতাপপুর ইত্যাদি এলাকা থেকে একাধিক সংক্রমনের খবর পাওয়া গেছে। শহরের বাকি অংশেও দাপাচ্ছে করোনা।
জেলার দুই বড় শহরের বাইরে গত ২দিনে ঘাটাল, ক্ষীরপাই এবং মোহনপুরে বড়সড় সংক্রমনের খবর পাওয়া গেছে। মোহনপুর এলাকায় ১৭ জন, ঘাটালে ১২জন, দাসপুর ২ ব্লকে প্রায় এক ডজন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। ডেবরা এলাকায় ৭ ও ক্ষীরপাইয়ে ৫জন করে আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও গড়াবেতা, গোয়ালতোড়, নারায়নগড়, শালবনী, সবং, চন্দ্রকোনা ইত্যাদি এলাকায় এক বা একাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। সর্বত্রই প্রথম দফার চাইতে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমনের হার বেশি নজর করা যাচ্ছে। তবে এরই মধ্যে সঙ্কট হিসাবে হাজির হয়েছে করোনা ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতা। শনিবার জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মানুষ দীর্ঘক্ষন লাইনে দাঁড়িয়েও ভ্যাকসিন পাননি। কোথাও প্রথম ভ্যাকসিন আবার কোথাও দ্বিতীয় ভ্যাকসিনও পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
খড়গপুর শহরের তালবাগিচা ও রাজগ্রাম সহ বিভিন্ন পৌরস্বাস্থ্যকেন্দ্রে মানুষ ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও কোভিডের ভ্যাকসিন না পেয়ে ফিরে গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। যদিও জেলার তরফে জানানো হয়েছে রাজ্য থেকে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন না আসায় প্রথম দফায় ভ্যাকসিন দেওয়া যায়নি কিন্তু যাদের দ্বিতীয় দফায় ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা তাঁদের সমস্যা নেই। যদিও তালবাগিচার বাসিন্দা প্রদীপ দাস সহ অনেকেরই অভিযোগ দ্বিতীয় দফার ভ্যাকসিন পাননি তাঁরা। নিয়ে আজও মানুষ নাজেহাল। বিষয়টি নিয়ে রাজগ্রামে বিক্ষোভ দেখান আমরা বামপন্থী সংগঠনের সদস্যরা।
আমরা বামপন্থীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে মানুষকে আগে থেকে এবিষয়ে জানানো হলে এই হয়রানির শিকার হতে হতনা। বহু মানুষ ভোর থেকে লাইন দিয়েছেন। তাঁদের আরও অভিযোগ এই প্রচন্ড গরমে মানুষকে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। রোদ থেকে বাঁচানোর জন্য কোনও ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়নি যার ফলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। সংগঠনের পক্ষে দাবি করা হয় ভ্যাকসিনের হাল হককিৎ সম্পর্কে পৌরসভার তরফে মানুষকে আগাম জানানো হোক এবং প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে অস্থায়ী ছাউনির ব্যবস্থা করা হোক। রাজগ্রামে অনিল দাস, তালবাগিচায় প্রদীপ ধর প্রমুখরা এই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন।
এদিন সংযুক্ত মোর্চার তরফেও খড়গপুর মহকুমা শাসকের কাছে এ বিষয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত নানা দাবিতে প্রশাসনের ভূমিকায় মোর্চার পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ ব্যক্ত করে অভিযোগ করা হয়, এই মহামারীর পরিবেশে যে তৎপরতা প্রশাসনের ও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নেওয়ার দরকার ছিল, তা হচ্ছে না। খড়্গপুর শহরে টীকা নেওয়া নিয়ে মানুষের যে চাহিদা ও ব্যকুলতা তার সাথে সরকারের টীকা কেন্দ্রের সংখ্যা ও টীকার সরবরাহ পরিমানে সামঞ্জস্য থাকছে না। ফলে এই দাবদাহের মধ্যে নাগরিকদের হয়রানি বাড়ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে মোর্চার পক্ষ থেকে দাবি য়করা হয় খড়্গপুর শহরে মাত্র পাঁচটি কেন্দ্রে টীকা দেওয়া হচ্ছে টীকা প্রদান কেন্দ্রের সংখ্যা অবিলম্বে বাড়াতে হবে,টীকা সরবরাহের অপ্রতুলতা কাটিয়ে তুলে প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত পরিমানে সরবরাহ করতে হবে, সর্বস্তরে করোনা বিধি সবাইকে মানানো ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসন কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও উদ্যোগ নিতে হবে,এই বিষয়ে সর্বদলীয় বৈঠক করতে হবে,১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকলকে অবিলম্বে টীকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, পৌর এলাকার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার বিষয়ে প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, ডেঙ্গু নিয়েও প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে।ডেপুটেশনে সংযুক্ত মোর্চার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সবুজ ঘোড়াই, রিতা শর্মা, বিপ্লব ভট্ট,বাসুদেব ব্যানার্জি প্রমুখ।জেলা স্বাস্থ্য তরফে জানানো হয়েছে কয়েকদিনের মধ্যেই ফের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে।