Homeএখন খবরবিনামূল্যে সব্বাইকে টিকা আর নভেম্বর অবধি রেশন! বক্তৃতায় জোড়া ধামাকা প্রধানমন্ত্রীর, মাথা...

বিনামূল্যে সব্বাইকে টিকা আর নভেম্বর অবধি রেশন! বক্তৃতায় জোড়া ধামাকা প্রধানমন্ত্রীর, মাথা ব্যাথা উত্তরপ্রদেশ, বললেন বিশেষজ্ঞরা, মোদি বন্দনায় বিজেপি সভাপতি

নিজস্ব সংবাদদাতা: দেশ জোড়া তীব্র সমালোচনা, বারবার আদালতের ভর্ৎসনা এবং মোদি ম্যাজিকে ফাটল এই তিন কারণেই কী মত বদলালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ অন্ততঃ তেমনটাই মনে করছেন। সোমবার দেশবাসীর উদ্দেশ্যে নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে বড়সড় ঘোষণা করেছেন মোদি। প্রথমতঃ ১৮ বছরের উর্দ্ধে সবার জন্য করোনা প্রতিষেধক আর নভেম্বর অবধি গরিব জনতাকে রেশন প্রদান।

প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন,  আগামী ২১ জুন সোমবার থেকে ১৮ উর্ধ্বরাও একেবারে বিনামূল্যে টিকা পাবে। রাজ্যগুলিকেও আর প্রতিষেধক কিনতে হবে না। কেন্দ্র ভ্যাকসিন কিনে সরবরাহ করবে রাজ্যকে। দরিদ্র, মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত, সকলকেই বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে এদিন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, মিশন ইন্দ্রধনুষের মাধ্যমে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় টিকাকরণ করা যাবে। আরও তিনটি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে। তাই এবিষয়ে কেন্দ্র যে বেশ সক্রিয় তা বলা যেতেই পারে। নাকের মাধ্যমেও যাতে ভ্যাকসিন দেওয়া যায় সেবিষয়েও গবেষণা চলছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এই ভ্যাকসিন বাজারে এলে বেশ সুবিধা হবে বলেও জানান তিনি।

প্রশ্ন হচ্ছে হঠাৎ মোদি সরকারের অবস্থান থেকে সরে গেলেন কেন? সবার জন্য বিনামূল্যে ভ্যাকসিনের দাবি জানিয়ে কলকাতা সহ বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে  বেশ কয়েকটি মামলা হয়। যদিও কেন্দ্র সরকারের সলিসিটর জেনারেল তাতে তীব্র আপত্তি জানায়। এরপরই সুপ্রিম কোর্ট মোদি সরকারকে হলফনামা জমা দিতে বলে। সুপ্রিম কোর্টের সেই রায় আসার পরই সিদ্ধান্ত বদলে ফেলল কেন্দ্র। এমনিতেই কেন্দ্রের করোনানীতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বারবার ভর্ৎসনার মুখ পুড়েছে কেন্দ্রের। আর যতবার বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের আলোচনায় উঠে এসেছে বিষয়গুলি ততবারই দেশব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদিকেই। এখন সরকারের করোনা নীতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট নতুন করে হলফনামা জমা দিতে বলায় বিপদের মুখে মোদি। হয় তাঁকে বলতে হবে কেন্দ্র সবাইকে টিকা দেবে কী না নতুবা বলতে হবে নির্দিষ্ট ভাবে কোন শ্রেণীকে টিকা দিতে চায় এবং কোন শ্রেণীকে নয়? তার থেকে সবাইকে টিকা দিতে চান এটাই মেনে নেওয়া শ্রেয়।

     যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে মোদির বিপদের জায়গাটা অন্যত্র আরও বড়। সেই জায়গাটার নাম উত্তরপ্রদেশ যেখানে ৪০৩ আসনে নির্বাচন হতে চলেছে ২০২২ সালের গোড়াতেই। গত পাঁচবছরে সাধারণ মানুষের দুর্বিষহ অবস্থা। খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতির চাইতেও সেখানকার মানুষের বড় সঙ্কট ব্যক্তি স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার আর বাক স্বাধীনতার। সাধারণ মানুষের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী যোগীর সাথে সাথে বিজেপির বিরুদ্ধেও ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। পাশাপাশি দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশ সীমান্তে প্রায় ১০মাস ধরে অবস্থানরত কয়েকলক্ষ কৃষকের অভিশাপ বর্ষিত হয়ে চলেছে বিজেপির ওপর। আর ২০২২ উত্তরপ্রদেশ না জিততে পারলে ২০২৪ সালে কেন্দ্র থেকেও সরে যেতে হতে পারে বিজেপিকে। ২০২০ সালের অক্টোবর নভেম্বরে হয়ে যাওয়া বিহার বিধানসভা নির্বাচন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ হারতে হারতে জিতে গেছে। সেই সময় বিজেপির ঘোষণা ছিল ভোটে জিতলে বিনামূল্যে সমস্ত বিহারবাসীকে করোনা প্রতিষেধক দেওয়া হবে। অনেকের মতে সেটাই ছিল এনডিএর কামব্যাক পয়েন্ট। সেই সব কথা মাথায় রেখেই এবার সমস্ত নাগরিককে টিকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মোদি।

সোমবার এরই সাথে আগামী নভেম্বর মাস অবধি দেশের ৮০ কোটি মানুষকে নভেম্বর মাস অবধি রেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মোদি। ২০২০ সালে লকডাউনের সময় যে রেশন ঘোষণা করা হয়েছিল তা পরের দিকে কিছুটা কাটছাঁট করে এবছর জুন অবধি করা হয়। সোমবার মোদি তা নভেম্বর অবধি বাড়িয়ে দেন। বলাবাহুল্য উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন অবধি এই নীতি বহাল থাকবে এমনটাই মনে করছেন অনেকে। এদিকে মোদির এই দুই ঘোষণা নিয়ে বাজারে মোদি বন্দনায় নেমে পড়েছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রীর এই দুটি বিষয় ঘোষণার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দেশের একাধিক আঞ্চলিক ভাষায়  মোদিকে অভিনন্দন কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ট্যুইট করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। ট্যুইট করতে গিয়ে বার্তায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি বলেছেন, ‘দেশবাসীকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মোদীজীকে হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানাই। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মোদী সরকার সমস্ত দেশবাসীর পাশে আছে। গরিব মানুষও যাতে ভ্যাকসিন পায় এটাই আমাদের সংকল্প।’

নড্ডা বলেছেন,  ‘দেশ যখনই কোনো বিপদের সম্মুখীন হয়েছে তখনই বারংবার মোদীজিকে দেখা গেছে সামনে দাঁড়িয়ে সেই বিপদের মোকাবিলা করতে। তার নেতৃত্বে দেশ সফল ভাবে ভ্যাক্সিনেশনের পথে এগোচ্ছে এবং আরো সক্ষম হচ্ছে। যারা প্রতিনিয়ত অজুহাত বানাচ্ছেন, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন তাদের উচিত ইতিবাচক অবদান রাখা।’ বিনামূল্য রেশন প্রসঙ্গে নড্ডা লেখেন, ‘সংকটের এই সময়েও কোনো মানুষ যাতে অভুক্ত না ঘুমান, তাই মোদীজী প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার মেয়াদ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিযেছেন। এর ফলে ৮০ কোটি মানুষ দীপাবলি পর্যন্ত বিনামূল্যে রেশন পাবেন। আমাদের লক্ষ্য প্রত্যেক ব্যক্তির অন্ন এবং ভ্যাক্সিনেশন সুনিশ্চিত করা।’
RELATED ARTICLES

Most Popular