নিজস্ব সংবাদদাতা: এ যেন চাঁদ সদাগরের সাজানো লোহার বাসরঘরে ঢুকে পড়ল কালনাগিনী! নজির বিহীন নিরাপত্তা দিয়েও আটকানো গেলনা করোনাকে। এক অবসর প্রাপ্ত কর্মচারীর শরীরে ভর করে করোনা শেষ অবধি ঢুকেই পড়ল আইআইটির ক্যাম্পাসে। জানা গেছে শারীরিক কিছু সমস্যা নিয়ে আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বিধানচন্দ্র রায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এক অবসরপ্রাপ্ত আইআইটির কর্মচারী। শনিবার তাঁর করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। গোটা ঘটনায় রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে হাসপাতাল চত্বরে।
খড়গপুর শহরের মালঞ্চর বাসিন্দা ৬৬ বছরের ওই বৃদ্ধকে কোভিড হাসপাতালে পাঠানোর পাশাপাশি হাসপাতাল ও হাসপাতাল চত্বর স্যানেটাইজ করার উদ্যোগ নিয়েছে আইআইটি কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি মুখ খুলতে রাজি হয়নি আইআইটি কর্তৃপক্ষ। আইআইটির রেজিস্টার ভৃগুনাথ সিংহ বলেছিলেন, ” আমিও শুনেছি তবে আমাদের কোনও কর্মচারী নন। যতদূর জানি উনি প্রাক্তন কর্মচারী এবং ক্যাম্পাসের বাইরে বাড়ি। জেলা প্রশাসনই ভাল বলতে পারবে বিষয়টি।”
খড়গপুর মহকুমা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে খড়গপুর শহরের নতুন করে শনিবার ২জন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। যারমধ্যে মালঞ্চর এক বাসিন্দা যিনি আইআইটি হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় তাঁর নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়েছিল। অন্যজন সুভাসপল্লী এলাকার এক মাছ ব্যবসায়ী। সুভাসপল্লীর ওই ব্যবসায়ীর কিছু উপসর্গ দেখা দেওয়ায় তাঁর নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়েছিল। শনিবার তারও পজেটিভ আসে। খড়গপুর শহর পুলিশের পক্ষ থেকে রবিবার সকালেই সুভাসপল্লী ও মালঞ্চ এলাকায় কন্টেনমেন্ট জোন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আইআইটি হাসপাতালে ভর্তি বৃদ্ধ খুবই সামান্য শ্বাসকষ্টর উপসর্গ নিয়ে কয়েকদিন আগে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসায় ভাল হয়েও গেছিলেন এমনটা বোধ করে বাড়ি ফেরার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন বলে জানা গেছে। তার আগেই প্রথামাফিক তার নমুনা সংগ্ৰহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেটাই পজিটিভ আসে। রবিবার দুই আক্রান্তকেই জেলার কোভিড হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার কথা।
উল্লেখ্য নিজেদের ক্যাম্পাসে করোনা সন্ক্রমন ঠেকাতে নজির বিহীন নিরাপত্তা নিয়েছেন আইআইটি কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসে ঢোকার চারটি ফটকের মধ্যে মাত্র একটি খোলা।
সেই পথে ঢোকা বের হওয়া কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত। জরুরি পরিষেবা ছাড়া সমস্ত প্রক্রিয়া বন্ধ। পঠন পাঠন গবেষনা বন্ধ কিংবা অনলাইনে। কর্মীরা ক্যাম্পাস ছাড়লে ঢোকা কিংবা বাইরে রয়ে গেছেন এমন কর্মী অধ্যাপকদের আপাতত ফেরা বন্ধ। শুধুমাত্র গাড়ির জ্বালানি ভরতে ২ঘন্টার ছাড়। ক্যাম্পসের ভেতরে বয়স্ক নাগরিকদের বাড়ির বাইরে না বের হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই সব পরিস্থিতিতে আইআইটি ক্যাম্পাস এখনো সন্ক্রমন মুক্ত। তবুও তারই মধ্যে এক অসুস্থ রোগীর মধ্যে দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করল করোনা।
যদিও এতে আতঙ্কের কোনও কারন নেই বলে জানিয়েছেন আইআইটি কর্তৃপক্ষ। এক নিরাপত্তা আধিকারিক জানিয়েছেন ক্যাম্পাস আগের মতই নিরাপদ আর ক্যাম্পাসের মধ্যে থাকা সবাইকে নিরাপত্তা দিতে আইআইটি দায়বদ্ধ এবং আন্তরিক। যিনি আক্রান্ত হয়েছেন তিনি বাইরে থেকেই আক্রান্ত হয়ে এসেছেন এবং হাসপাতালের বাইরে বের হননি। তাঁর চিকিৎসার সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন তাঁরাও ওয়েল ইক্যুইভ ছিলেন। সুতরাং আইআইটি ক্যাম্পাসে বসবাসকারীদের কোনও ভয়ভীতির কারন নেই।