ওয়েব ডেস্ক : করোনা আবহে গোটা লকডাউনে সংক্রমণ ছড়ানোর ভয়ে যখন এলাকার একাধিক চিকিৎসকের চেম্বার বন্ধ, সে সময় সংক্রমণের তোয়াক্কা না করেই দিনরাত এক করে রোগী দেখেছেন। এমনকি, কোনও রোগীর আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে টাকাও নিতেন না। কিন্তু আনলক পর্যায়ে তিনিই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরপর বাইপাসের ধারে মেডিকা হাসপাতালে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর শেষমেশ চলতিমাসের ১০ ই আগস্ট মৃত্যু হয় এলাকার ‘প্রিয় ডাক্তারবাবু’র। চিকিৎসকের মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই শোকাহত এলাকাবাসী৷ কিন্তু তাঁর হাসপাতালের বিল দেখে চোখ কপালে উঠেছে এলাকাবাসীর, এমনকি হতবাক স্বাস্থ্যকমিশন। করোনা রোগীর চিকিৎসার বিল প্রায় ১৯ লক্ষ! এরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন স্থানীয় বাসিন্দারা। বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সকলেই। শ্যামনগরের প্রয়াত চিকিৎসক প্রদীপ ভট্টাচার্যের এই বিল দেখে চোখ কপালে উঠেছে স্বাস্থ্য কমিশনেরও।
করোনা আবহে যখন একাধিকবার চিকিৎসকদের সাথে সাধারণ মানুষের নানা অসহযোগীতার ঘটনা সামনে আসছে, ঠিক সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ডাঃ প্রদীপ ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পরও যেভাবে তাঁর চিকিৎসার বিলের পরিমাণ নিয়ে মানুষ তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা নজরে এসেছে রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের এক কর্তার। সোশ্যাল মিডিয়ায় ডাক্তারবাবুকে ঘিরে নানান পোস্ট দেখেই তিনি মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালকে টেক্সট মেসেজ করে করোনা আক্রান্ত মৃত চিকিৎসকের আকাশছোঁয়া বিল ফের রিভিউ করে কিছু টাকা পরিবারের হাতে দেওয়ার জন্য আবেদন জানাল রাজ্যের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেখে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পুনরায় বিল বিবেচনা করে কমানোর নির্দেশ রাজ্যের স্বাস্থ্য ইতিহাসে এই প্রথম৷ ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনা এককথায় নজিরবিহীন।
উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের বাসিন্দাদের কাছে ডাঃ প্রদীপ ভট্টাচার্য ‘ভগবান’। সকলের ধারণা ডাক্তারবাবুর কাছে গেলেই ঠিক সুস্থ হয়ে উঠবে রোগী। তাই তো এই চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর পাশে থেকেছেন এলাকার মানুষজন। সকলেই সাধ্যমত আর্থিক সাহায্য করে তাঁর চিকিৎসার বিল মেটাতে এগিয়ে এসেছেন। রিক্সাওয়ালা থেকে বড়ো ব্যবসায়ী কেউই পিছপা হয়নি। সবার মুখে একটাই কথা যে করে হোক ডাক্তারবাবুকে বাঁচাতেই হবে৷ এলাকাবাসীর এই উদ্যোগের মাত্র ৫ দিনের মধ্যে ১৫ লক্ষ টাকা চাঁদা তুলে ফেলেছিলেন স্থানীয় ক্লাব। কিন্তু অবশেষে আর বাঁচানো গেল না ওই চিকিৎসককে দীর্ঘ এক মাস লড়াইয়ের পর অবশেষে ১০ ই আগস্ট মৃত্যু হল করোনা আক্রান্ত জনপ্রিয় চিকিৎসক প্রদীপ ভট্টাচার্যের। তাঁর মৃত্যু নিয়ে এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, “উনি নিজে চিকিৎসক হয়ে অনেক সময়েই দরিদ্র রোগীর কাছ থেকে ভিজিট নিতেন না। নিজেই পকেট থেকে ওষুধের টাকা দিয়ে দিতেন। এমন একজন চিকিৎসকের মৃত্যুতে তাঁর সহকারীরা ১৯ লক্ষ টাকা বিল করল। এটা অমানবিক।”
এদিকে করোনা চিকিৎসায় এই বিপুল অঙ্কের বিলের তথ্য তলব করল রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন। পুনরায় বিল রিভিউ করে দেখে তা কমানো যায় কিনা, সে কথাই কমিশন জানিয়েছে ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এবিষয়ে বুধবার স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “চিকিৎসকের মৃত্যুতে আমরা বেদনাহত। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টেই আমরা দেখেছি ১৮ লক্ষের বেশি বিল হয়েছে। এই বিল রিভিউ করে দেখা হোক। যদি রোগীর পরিবার ওই হাসপাতালের বিল মিটিয়েও দিয়ে থাকেন, তবু যদি তাদেরকে কিছু টাকা ফিরিয়ে দেওয়া যায় সে চেষ্টাই কাম্য।” তবে জানা গিয়েছে, এবিষয়ে মেডিকা কর্তৃপক্ষের তরফে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনকে গোটা বিষয়টি মানবিকতার নজরে দেখে ওই চিকিৎসকের বিল পুর্নবিবেচনা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে৷