নিজস্ব সংবাদদাতা: খুব ছোট বেলায় বাবার কাছে রামায়ন শুনতেন বছর ৪৮ য়ের চন্ডীচরন মান্না। শুনেছিলেন রামায়ন রচয়িতা বাল্মীকির দস্যু থেকে ঋষি হয়ে ওঠার কাহিনী। কয়েক হাজার বছর পরে ২০২০ তে দাঁড়িয়ে চন্ডীচরনের মনে হচ্ছে তাঁর ক্ষেত্রে যেন উল্টোটাই হয়েছে, তিনি বাল্মীকি থেকে রত্নাকর দস্যু হয়ে গেছেন। কেন এরকম ভাবছেন চন্ডীচরন? গ্রামের অদূরেই একটি ফাঁকা জায়গায় তার্পোলিনের ওপর বসে চন্ডীচরন বলেন, ” জানেনই তো রত্নাকরের কথা যাঁর অন্ন খেত সবাই কিন্ত তাঁর কর্মফলের ভাগ নিতে চায়নি স্ত্রী, পুত্র, বাবা মা। আমি পরিযায়ী শ্রমিক, খেটে কমিয়ে, বাড়ির সদস্যদের যখন পেট ভরিয়েছি তখন তাঁদের কাছে আমিই দেবতা ছিলাম, খাওয়া দাওয়ার বাইরেও বউয়ের শখ, ছেলের মোবাইলের রিচার্জের পয়সা দিয়েছি। আজ যখন লকডাউনে কাজ হারিয়ে ঘরে ফিরেছি তখন আমি করোনা রুগী হয়েই গেছি যেন। আমাকে ঘরে ঠাঁই দেয়নি স্ত্রী, পুত্র।” অভিমান ঝরে পড়ে চন্ডীচরনের গলায়।
গ্রামীন খড়গপুর থানার খড়গপুর২ ব্লকের জামনা এলাকার মান্না পাড়া গ্রামের চণ্ডীচরন মান্না। মাস তিনেক আগে জমি থেকে আলু তোলার কাজে গিয়েছিল হুগলির তারকেশ্বরে। ফি বছরই যান। বছরে স্থানীয় ভাবে দিন মজুরির পাশাপাশি এই তিনমাসের কাজ সংসারে একটু বাড়তি পয়সার যোগান দেয় কারন আলু তোলার কাজে মজুরি সামান্য হলেও বেশি। কিন্ত লকডাউনে আর পাঁচজন শ্রমিকের মত কপাল পুড়েছে তাঁরও। কাজ বন্ধ হয়েছে শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন আটকে গেছেন ভিন জেলায়। অবশেষে প্রশাসনিক সহায়তায় বুধবার গ্রামে ফিরেছেন চণ্ডীচরণ। তবে করোনা আতঙ্কে তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি স্ত্রী ছেলে। পাছে করোনা সংক্রমণ ছড়ায় এলাকায়, সেই আতঙ্কে প্রতিবেশী বন্ধুরাও করে রেখেছে এক ঘরে।
এই অবস্থায় স্থানীয় কয়েকজন তৃণমূল নেতা তাঁকে তার্পোলিন আর খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন। সেই তার্পোলিনের অস্থায়ী ছাউনি বানিয়ে গ্রামের এক কোনে পড়ে রয়েছেন চণ্ডীচরণ মান্না। এলাকাবাসীরও দাবি তার করা হয়নি করোনা পরীক্ষা। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে শুক্রবার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে লালা রস পরীক্ষা হবে চণ্ডীচরণ মান্নার। গোটা ঘটনা মারাত্মক ভাবে তবে চণ্ডীচরনের মনে আঘাত হেনেছে। মনে করিয়ে দিচ্ছে প্রাচীন প্রবাদ বাক্য,’যার জন্য করি চুরি, সেই বলে চোর!’
বাইরে থেকেই এলেই সে করোনা আক্রান্ত নয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, “এটা একে বারেই কাম্য নয়। উচিৎ বাড়ির মধ্যেই পৃথক জায়গায় রাখা। আলাদা ঘর না থাকলে গোয়াল ঘর পরিস্কার করে নিন অথবা নিদেনপক্ষে ওই তার্পোলিনের একটা শক্তপোক্ত ছাউনি বাড়ির উঠানেই বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে। গ্রামের বাইরে রাখতে হবে এমনটা বলা হয়না আর কাম্যও নয়। ঘরে থাকুন, সাবধানে থাকুন। ” সে তো হল কিন্তু বাকিদের বোঝায় কে? চন্ডীচরন এখন রত্নাকরই হয়ে আছেন।