নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা পরিস্থিতি রাজ্যের নিয়ন্ত্রনে আছে কিনা ভবিষ্যৎই বলবে কিন্তু মূখ্যমন্ত্রী কী নিজের ওপর নিয়ন্ত্রন হারাচ্ছেন , উঠেছে সেই প্রশ্ন। করোনার মত অতিমারির মত জাতীয় বিপর্যয়ে রাজ্যের সমস্ত দলগুলিকে নিয়ে কাজ করাতো দুরের কথা ক্রমাগত সবাইকে দুরে ঠেলে দিচ্ছেন তিনি এমনই আভিযোগ উঠছে। তাঁর নিজের দলের নেতা মন্ত্রী থেকে শুরু করে সামান্য দলীয় কর্মীরা যখন ত্রান বিলি করছেন এবং পুলিশ তাঁদের সহায়তা করছেন তখন বিরোধী সাংসদরা নিজের এলাকায় পরিস্থিতি দেখতে গেলে তাঁদের পুলিশ আটকাচ্ছে, লকডাউনের অজুহাত দেখাচ্ছে। শুধুই তাই নয়, রাজ্যের করোনা পরিস্থিতিতেও বেশ কয়েকবারই সংবাদমাধ্যমকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি বৃহস্পতিবার এসবই নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন রাজ্যপাল।
বুধবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা ব্যানার্জী বলেন, শকুনের মতো বসে আছে বিরোধীরা। টিকিয়াপাড়ার ঘটনায় রামায়ণ-মহাভারত করছে। মমতা আরও বলেন, ”টিকিয়াপাড়ায় একটা ঘটনা ঘটেছে, তাই নিয়ে হই-হুল্লোড় করছে। দিল্লিতে কী হচ্ছে, উত্তরপ্রদেশের ঘটনায় কী ব্যবস্থা নিয়েছেন…এখানে শকুনের মতো বসে আছে”
তৃণমূল সুপ্রিমো এদিন আরও বলেছেন, ”টিকিয়াপাড়ার ঘটনা নিয়ে সরকারকে অপদস্থ করছে। এ নিয়ে সারা ভারতবর্ষে রামায়ণ-মহাভারত-বেদ-বেদান্ত করছে। আরে ভাই, টিকিয়াপাড়ায় একটা ঘটনা ঘটেছে পুলিশ ব্য়বস্থা নেবে, তোমার অত কীসের মজা! শকুনির মতো বসে আছে। শকুন যেমন বসে থাকে কখন একটা মৃতদেহ আসবে ঠুকরে ঠুকরে খাবে। কাজ নেই খালি এসব করছে। যাঁরা এসব করছেন, তাঁদের ধিক্কার জানাচ্ছি”। তিনি আরও বলেন, ”বিজেপি বন্ধুরা কেউ আক্রান্ত হলে, কেউ অসুস্থ হলে, কারও উপসর্গ থাকলে আমায় মেসেজ পাঠাবেন, আমি বিনা পয়সায় চিকিৎসা করাব।”
এই প্রসঙ্গে রাজ্যপাল বলেন, তিনি বলেন, “এখন মাথায় ছাদ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। এ বার তো রাজনীতি বন্ধ করুন। মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে বলেছেন যে, ‘বিরোধীরা শকুনের মতো আচরণ করছেন, মৃতদেহের অপেক্ষায় রয়েছেন’ তা দেখে খারাপই লাগছে”। তাঁর কথায়, মানুষ যখন দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তখন কেন তিক্ততা বাড়ানো! এই সময়ে সব রাজনৈতিক দল একসঙ্গে কাজ করা উচিত।
বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে কিছু সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এও বলেছিলেন, চাইলে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি, কিন্তু আমরা ভাল বলে কিছু বলি না। তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, এই সংকটের পরিস্থিতিতেও কেউ কেউ ভুয়ো খবর ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
বৃহস্পতিবার সেই প্রসঙ্গেই রাজ্যপাল বলেন, মিডিয়াকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে। আমি দেখেছি, এবং দেখে খারাপও লেগেছে যে নানা ভাবে মিডিয়াকে কন্ট্রোল করা হচ্ছে। অথচ লুকনোর কিছুই থাকতে পারে না। তাঁর কথায়, “স্বাধীন সংবাদমাধ্যম হল মেরুদণ্ড, গণতন্ত্রের অপরিহার্য অঙ্গ। কেন তাদের চাপে রাখা হচ্ছে?”
শুধু তা নয়, রাজ্যপাল তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই বলেন ২০১১ সালে ইজিপ্ট, লিবিয়া, তিউনেশিয়াতে স্বেচ্ছাচারী শাসকদের গদিচ্যূত করতে মুক্ত ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা ছিল অসামান্য।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, মমতা ব্যানার্জী যখন বিরোধী নেত্রী ছিলেন তখন তাঁর বিরুদ্ধেই আভিযোগ ছিল যে তিনিই মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি করেন আর সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম পর্বে সংবাদমাধ্যম তাঁর নয়নের মনি ছিল, এমনকি অনেকে এও মনে করে থাকেন যে, সংবাদমাধ্যমের জন্যই তাঁর উত্থান। আর আশ্চর্য্য জনক ভাবেই রাজ্যপাল সেই ২০১১সালই উল্লেখ করেছেন, যে সালে তিনি বাংলার ক্ষমতায় এসেছিলেন!