নিজস্ব সংবাদদাতা: সোমবার প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হওয়ার দেড় দিনও অতিক্রম হলনা মৃত্যু হল এক করোনা আক্রান্ত রুগীর। খড়গপুর রেলের জোনাল মা মেইন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে শ্বাসকষ্টের সঙ্গে পায়খানাও হচ্ছিল ৫৮ বছর বয়সী ওই রেলকর্মীর। সোমবার সকালে রেলের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে তাঁকে নিয়ে আসার পর চিকিৎসকরা তাঁকে ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডেই ভর্তি করে নেওয়া হয়। শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য রক্ত সহ বিভিন্ন উপাদান সংগ্ৰহ করা হয় যার মধ্যে লালারসও সংগ্ৰহ করা হয়েছিল। মঙ্গলবারই অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ে ওই ব্যক্তির এরপরই মৃত্যু হয় তাঁর। মঙ্গলবার রাতেই মেদিনীপুর ভাইরোলজি ল্যাবরেটরির পাঠানো রিপোর্টে দেখা যায় ওই ব্যক্তির করোনা পজিটিভ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খড়গপুর পৌরসভার ৪নম্বর ওয়ার্ডের লোহানিয়া হাইস্কুল সংলগ্ন ওই এলাকাকে কন্টেনমেন্ট জোন ঘোষনা করা হয়েছে এবং ঘিরে দেওয়া হয়েছে। পার্শ্ববর্তী কিছুটা এলাকাকে নিয়মমত বাফার জোনের আওতায় আনা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে রেলের বাণিজ্যিক বিভাগে কর্মরত ওই ব্যক্তি কর্মসূত্রে উলুবেড়িয়া যাতায়ত করতেন। রেলের কর্মীদের জন্য বরাদ্দ বিশেষ ট্রেনেই যাতায়ত করতেন তিনি। তাই পুলিশের প্রাথমিক ভাবে ধারনা উলুবেড়িয়া থেকেই সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন উনি।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে ওই ব্যক্তির করোনা পজিটিভ ছিল ঠিকই কিন্তু উনি করোনাতেই মারা গেছেন নাকি কো-মর্বিডিটিতে তা এখুনি বলা যাচ্ছেনা। তবে পরিবারের সদস্যদের কোয়ারেন্টাইন করা হচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের আরও একটি মাথা ব্যথার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে রেলের কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী। ওই ব্যক্তিকে প্রথম যখন ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে আনা হয় তখন কয়েকজন কর্মী পিপিই কিট পরে থাকলেও কয়েকজন কিট বিহীন ছিলেন। ফলে ওই ব্যক্তির করোনা পজিটিভ পাওয়ার খবর এসে পৌঁছানোয় ভীতি কাজ করছে। স্বাস্থ্যদপ্তরের পক্ষে বলা হয়েছে যাঁরা যাঁরা নিজেদের অনিরাপদ মনে করছেন প্রয়োজনে তাঁদেরও করোনা পরীক্ষা করানো হবে।
ঘটনাচক্রে মৃত ব্যক্তির বাড়ি যে ৫নম্বর ওয়ার্ডে তারপাশের ওয়ার্ড অর্থাৎ ৪নম্বর ওয়ার্ডেরই এক ৪৫ বছর বয়সী ব্যক্তি শ্বাসকষ্ট নিয়ে মেদিনীপুর গ্লোকাল হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর মারা যান পরে তারও করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। খড়গপুর তথা জেলায় সেটাই ছিল প্রথম করোনা আক্রান্তের মৃত্যু। গত ২৯মে সেই মৃত্যুর পর খড়গপুর শহরে দ্বিতীয় মৃত্যু হয়েছিল ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের এক ৬২ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মচারীর। গত ৪জুন কলকাতার আরএনটেগোর হাসপাতালে আ্যঞ্জিওপ্লাস্টি হওয়ার আগে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে ওই ব্যক্তির। অপারেশনের সপ্তাহ খানেক পরে ওই হাসপাতালেই মৃত্যুবরন করেন তিনি। তারপর এই তৃতীয় মৃত্যু। তবে এরা প্রত্যেকেই করোনায় আক্রান্ত হলেও প্রত্যেকেরই শ্বাসজনিত অথবা হৃৎপিন্ড জনিত সমস্যা ছিল। তাই করোনাতেই মৃত্যু কী না তা জানা যায়নি।
তৃতীয় জন বা সম্প্রতি মৃত্যু হওয়া ব্যক্তির সম্পর্কেও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর তথা খড়গপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সেক হানিফ বলেছেন, ” ওই ব্যক্তির আগে থেকেই হার্টের সমস্যা ছিল, পেসমেকারও বসানো ছিল বলেই জানি। গত কয়েকদিন ধরে নারায়ন পাকুড়িয়া মুড়াইলে কাজ করতে যাচ্ছিলেন। খুব একটা এলাকায় বেরুতেননা। বাকি বিষয় স্বাস্থ্য দপ্তরই বলতে পারবে।”