Homeএখন খবরআবার সে এসেছে ফিরিয়া! লকডাউনের সুফল, ঘাটালের গ্রামে ৭ দশক পরে ফিরল...

আবার সে এসেছে ফিরিয়া! লকডাউনের সুফল, ঘাটালের গ্রামে ৭ দশক পরে ফিরল পরিযায়ী, সতর্ক করলেন বন আধিকারিক

নিজস্ব সংবাদদাতা: লকডাউনের বিশ্ব, বহু মানুষকে যেমন নিঃস্ব করেছে তেমন প্রকৃতিকে পুরন করেছে অনেক খানি। দূষন মুক্ত বাতাস, কোলাহল হীন পরিবেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে যেমন অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে তেমনই পুরোপুরি প্রকৃতি নির্ভর প্রানীদের ফিরিয়ে দিয়েছে আদিগন্ত নিশ্চিত বিচরন। দিল্লির বসতির রাস্তায় ফিরে এসেছে ময়ূর, ওড়িশার খোলা তটে ডিম পাড়ছে অলিভ রিডলে আবার দিঘার সৈকতে ফিরছে লাল কাঁকড়া। মানুষ যত বেশি করে ঘরে ঢুকে থাকছে তত নিজেকে মেলে ধরছে প্ৰকৃতি। বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমায় তেমনই দেখা মিলেছে এক বিশালকায় পক্ষী যা গত সাত দশকের মধ্যে কেউ দেখেছেন মনে করতে পারছেননা।

বৃহস্পতিবার সকালে দাসপুর ২ ব্লকের মাগুরিয়া গ্রামে মাঠের মধ্যে এই বিরল প্রজাতির পাখিটিকে বসে থাকতে দেখা যায়। পাখিটি ঝিমুচ্ছিল। মাগুরিয়া গ্রামের এক কৃষক সেটিকে উদ্ধার করে গ্রামে নিয়ে আসেন। এরপর বনদপ্তরকে খবর দিলে বনকর্মীরা এসে সেটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ঘাটাল ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার বিশ্বনাথ মুদিকরা জানিয়েছেন, এটি একটি পরিযায়ী ওই পাখি, কোনো কারনে অসুস্থ ছিল হয়ে পড়েছে। এটিকে চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষনে রাখার পর ভাল হয়ে উঠলে ছেড়ে দেওয়া হবে।

প্রায় ৬ কেজি ওজনের পাখিটিকে লম্বা দুটো পায়ের ওপর দাঁড় করলে মাথা অবধি প্রায় আড়াই ফুট লম্বা এবং দুপাশের ডানা দুটির বিস্তার তিনফুট। অতিকায় চঞ্চু এই পাখিটি ঠিক কী প্রজাতির বলতে পারেননি স্থানীয় বনকর্মীরা। ‘দ্য খড়গপুর পোষ্ট’ পাখিটির ছবি পাঠায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিলিগুড়ি বনবিভাগের উদ্যানপালক তথা বন্যপ্রান বিশেষজ্ঞ অঞ্জন গুহর কাছে। বন আধিকারিক গুহ জানিয়েছেন, পাখিটি গ্রেটার এ্যজটান্ট স্টর্ক( Greater Adjutant Storck)। দক্ষিন এশীয় সমুদ্র বিস্তৃত ও প্রলম্বিত জলাশয় এক সময় এর সহজ বিচরন ভূমি ছিল। ভারত ছাড়াও থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ইত্যাদি সংলগ্ন দেশগুলি এর বিচরন ভূমি। মূলত মাছ এবং মৃত প্রানীর দেহাবশেষই এদের খাদ্য। বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির মধ্যে পড়া এই পাখি সারা পৃথিবীতে বড় জোর ১০ হাজার রয়েছে বলেই শ্রী গুহ মনে করছেন।

উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে, বর্তমানে এশিয়ার তিনটি জায়গায় এখন এর উপনিবেশের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে ভারতেরই দুটি জায়গা বড় আকারে অসম ও একটি ক্ষুদ্র উপনিবেশ রয়েছে ভাগলপুরে। অন্যটি কম্বোডিয়ায়। এখানেই উঁচু গাছের ওপর এরা দল বেঁধে থাকে, বাসা বানায়, ডিম পাড়ে। আর সারা বছর খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। খুবই উঁচুতে উড়ে বেড়ায় এরা, অনকেটাই শকুনের মত। বেশ কয়েক দশক আগেও এদের কলকাতার নিচু ভূমিতে দেখা যেত।

তবে শুধুই কলকাতা নয়, একসময়ে এর স্বাভাবিক বিচরন ছিল সমগ্র গাঙ্গেয় উপকূলেই। এই ছবিটি দেখার পর পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর শহরের বাসিন্দা ৯১ বছর বয়সী বৃদ্ধ অমূল্য রতন জানা জানিয়েছেন, ” আমাদের গ্রামের বাড়ি যা কিনা পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা, নারায়নগড় থানার সীমান্তে অবস্থিত গ্রামীন খড়গপুর, সেই পলশা গ্রামপঞ্চায়েতের মানিকপুর, বাড় গোকুলপুর এলাকায় এই পাখির দল আসত। চৈত্র মাসের শেষে যখন নতুন করে চাষের জন্য ক্ষেত তৈরি করত কৃষক। জল সেচের জন্য কংসাবতী ক্যানেলে জল ছাড়া হত, সেই জলে ক্ষেত ভরে থাকত তখন গেঁড়ি,গুগলি,শামুক খেতে আসত এরা দলে দলে। এদের সাথেই আলাদা করে আসত শামুক খোল, মানিক জোড় ইত্যাদি পরিযায়ীর দল। আজ থেকে অন্তত ৭০ বছর আগে এদের শেষ দেখেছি। আমরা একে হাড়গিলা বলেই ডাকতাম।”

এখানে আসার পেছনে যেমন লকডাউনের নির্মল পরিবেশ থাকতে পারে তেমনই বন আধিকারিক অঞ্জন গুহ  একটি সতর্ক বার্তাও দিয়েছেন। শ্রী গুহ বলছেন, ”এই পাখিটিকে রক্ষা করা খুবই জরুরি এবং যিনি এই কাজ করেছেন তিনি ধন্যবাদের পাত্র কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ধরনের পাখিকে সরাসরি না ধরে বনকর্মীদের খবর দিয়ে তাঁদেরকে দিয়েই উদ্ধার করানো উচিৎ। উচিৎ বনকর্মীরা যতক্ষন না আসেন ততক্ষন দুর থেকেই পাখিটিকে পাহারা দেওয়া যাতে অন্য কেউ না তার ক্ষতি করতে না পারে।”

কারন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গুহ জানিয়েছেন, “ওই পাখিটি কিসের সংস্পর্ষে এসেছে বা কোনও সংক্রমিত প্রানীর অবশেষ খেয়েছে কিনা আমরা জানিনা।   কয়েকদিন আগেই একটা খবর বেরিয়েছিল যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি চিড়িখানায় এক সিংহ করোনা আক্রান্ত হয়েছিল। মনে করা হচ্ছে সিংহকে খাবার হিসাবে যে জন্তুর মাংস দেওয়া হয়েছিল তার করোনা সংক্রমন ছিল। সুতরাং এই পাখিটিও সেই ভাবে সংক্রমিত হতে পারে। পাখিটি সরাসরি স্পর্শ করলে করোনা ছাড়াও বেশকিছু ভাইরাস ঘটিত রোগ আমাদের হতে পারে যা এখন রীতিমত উদ্বেগের। বিশ্ব জুড়ে পাখি বাহিত রোগ এখন একটা সমস্যার কারন। বিশেষ করে দূরবর্তী পরিযায়ী পাখি যারা কিনা এক দেশের সীমানা থেকে অন্যদেশের সীমানায় অবলীলায় চলে যায়।”

RELATED ARTICLES

Most Popular