নিজস্ব সংবাদদাতা : কারও করোনাতে মৃত্যু হলেও লিখবেন না করোনাতে মৃত্যু, চিকিৎসকদের এমনই নির্দেশ দিয়ে সেই চিঠি ফাঁস হতেই বদলি করা হল মুশির্দাবাদ মেডিক্যাল কলেজের মেডিক্যাল সুপার ভাইস প্রিন্সিপাল তথা এমএসভিপিকে। বুধবার মুশির্দাবাদ মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপির স্বাক্ষরিত এমনই একটি চিঠি সকলের সামনে আসতেই হুলুস্থুলু পড়ে যায় চিকিৎসক মহলে। ওই চিঠিতে বিভিন্ন চিকিৎসকদের ডিউটি ভাগ করে দেওয়ার পাশাপাশি কারোর করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলেও তা না লেখার জন্য রয়েছে নির্দেশ। আবার তলায় এমএসভিপি দেবদাস সাহার স্বাক্ষর।
এই চিঠি পেয়েই তা ট্যুইটারে পোষ্ট করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রাজ্যের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। এই অর্ডারের ছবি টুইটারে পোস্ট করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। ডেথ সার্টিফিকেটে কোভিড উল্লেখ না করার জায়গাটি দাগ দিয়ে চিহ্নিত করে তিনি লেখেন, “মুর্শিদাবাদের এই সরকারি নির্দেশে স্পষ্ট লেখা আছে, যে কোভিড ১৯ কারও থাকলেও তা উল্লেখ না করতে। মমতা সরকার বলুক, এই নির্দেশটা কি ভুল বা ভিত্তিহীন? তা না হলে আমি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নিয়ে কোর্টে চ্যালেঞ্জ করব।” এই ট্যুইটের পরেই শোরগোল শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি সত্যিই কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা গোপন করতে চাইছে রাজ্য? দিন কয়েক আগেই এ বিষয়ে সরাসরি অভিযোগ তুলেছিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। তিনি দাবি করছিলেন, সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক বেশি মৃত্যু হচ্ছে এ রাজ্যে, যা মমতা সরকার চেপে রাখছে। গোপনে দেহ সৎকার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি।
গতকাল তিনিও মুর্শিদাবাদ হাসপাতালের এই অর্ডার ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, “মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ সুপার নিজে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন যে করোনা ভাইরাস আক্রমণে মারা গেলেও রোগীর ডেথ সর্টিফিকেট এ লেখা যাবে না ।এর মাধ্যেমে আইসিএমআর-এর নির্দেশিকা সরাসরি অমান্য করা হচ্ছে। এর ফলে কখনোই বাস্তব চিত্র সামনে আসবে না।” এই লেখার সঙ্গে অর্ডারের ছবি এবং আইসিএমআর-এর গাইডলাইনও পোস্ট করেছেন তিনি।
এ নিয়ে বহরমপুরের সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, “শুনেছিলাম হাসপাতালের একটি অর্ডার সামনে এসেছিল কয়েক দিন আগে। রোগীর কোভিড হলেও তা ডেথ সার্টিফিকেটে না লেখার কথা সেই অর্ডারে বলা হয়েছে বলে শুনেছি। তার পরেই সুপারকে সরানো হল।”
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ওই চিঠি এমএসভিপির ব্যক্তিগত নির্দেশ বলে ব্যাখ্যা করে তাকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে বদলি করল স্বাস্থ্য দফতর। জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা ভাইস প্রিন্সিপল দেবদাস সাহাকে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে অ্যানেস্থিওলজি বিভাগের প্রফেসর হিসেবে পাঠানো হয়েছে। আর মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি-র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওই মেডিক্যাল কলেজেরই প্রফেসর শর্মিলা মল্লিককে।
প্রসঙ্গত, ২৬ এপ্রিল দেবদাসবাবুর স্বাক্ষরিত এই চিঠিটি সকলের সামনে প্রকাশ্যে আসে। সেখানে পরিষ্কার তিনি চিকিৎসকদের নির্দেশ দিয়েছেন, করোনায় মৃত্যু হলেও তা ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা যাবে না। বিষয়টি গোলমেলে মনে হয় ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদেরই। খোদ স্বাস্থ্য দফতরে যেখানে ডেথ অডিট কমিটি রয়েছে, সেখানে করোনায় মৃত্যুর তথ্য গোপনের নির্দেশ কিভাবে দিলেন এমএসভিপি, তাও আবার সরকারি নথিতে! অনেকেই সরাসরি স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের চিঠিটি দিয়ে কারণ জানতে চান। এই অভিযোগে নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর। দেবদাস সাহার বিরুদ্ধে তথ্য লোপাটের অভিযোগ তোলেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীও। তিনি তাঁর বদলির দাবি করেন।
এর পরেই স্বাস্থ্য দফতরের তরফ থেকে দাবি করা হয়, চিঠিটির ওই অংশ এমএসভিপি ব্যক্তিগত ভাবে লিখেছেন। সরকারি ভাবে এমন কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। ওই এমএসভিপি দেবদাস সাহাকে আপাতত বদলি করে দেওয়া হয়েছে। কেন তিনি এমন করলেন, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।