নিজস্ব সংবাদদাতা: বুধবারের তুলনায় ৯৫ জন কম আক্রান্ত নিয়ে যখন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বৃহস্পতিবার দৈনিক সংক্রমন কিছুটা হলেও কম তখন করোনা কালের সমস্ত রেকর্ডই ভেঙে দিল মেদিনীপুর শহর। ২৮শে এপ্রিল মেদিনীপুর শহরে প্রায় ১২০জন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে এবং গত বছরের এপ্রিল থেকে যদি করোনা শুরু হয়েছে ধরা যায় তবে বলতেই হয় যে তখন থেকে এ অবধি এক দিনে শহরে এত সংক্রমন চিহ্নিত হয়নি।
বৃহস্পতিবার জেলায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪৯ জন। আক্রান্ত সর্বাধিক চিহ্নিত হয়েছে আ্যন্টিজেন পরীক্ষায় ১৬৯ জন। আরটি/পিসিআর পরীক্ষায় ১৪৮ এবং ট্রুনাট পরীক্ষায় ৬২ জন আক্রান্ত চিহ্নিত হয়েছেন। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে মোট আক্রান্তের এক তৃতীয়াংশই মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা।
মেদিনীপুর শহরের প্রায় সমস্ত এলাকা থেকেই আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। কোন এলাকায় সঠিক বেশি আক্রান্ত কিংবা কোথায় কম এটি সঠিকভাবে নির্ধারণ করা মুশকিল কারন শহরে বাস করেন অথচ সুনির্দিষ্ট বসবাসের ঠিকানা উল্লেখিত হয়নি এমন আক্রান্ত জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরে নথিভুক্ত হয়েছেন ৫৮ জন। মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও পুলিশ লাইন থেকে আক্রান্ত হয়েছেন চারজন। এ ব্যতিরেকে সর্বাধিক আক্রান্তের খবর এসেছে ধর্মা থেকে যেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৫জন। মহাতাপপুর, পালবাড়ি, শরৎপল্লী, কুইকোটা, মিত্র কম্পাউন্ড, হাতারমাঠ এলাকায় ৩ থেকে ৪জন আক্রান্তের খবর এসেছে। শেখপুরা,কর্নেলগোলা, মির্জাবাজার, উদয়পল্লী, আবাস, রবীন্দ্রনগর, হাবিবপুর, বল্লভপুর এলাকা থেকে ২জন করে আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে। একজন করে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁ রয়েছে।তিগেড়িয়া, মিনিমার্কেট, সুভাষনগর, কালামসজিদ, বরিশাল কলোনী, তলকুই, কেল্লাপুকুর, অরবিন্দনগর, সিপাহীবাজার, রবীন্দ্রনগর, মির্জামহল্লা, নতুনবাজার, দেওয়ানবাবার চক, গান্ধীঘাট, বিধাননগর এলাকা থেকে। পুনরায় উল্লেখ করা যে শহরের এই করোনা মানচিত্র বদলে যাবে যদি পূর্বে উল্লেখিত ৫৮ জনের নির্দিষ্ট বাসস্থান চিহ্নিত করা যায়।
গ্রামীন মেদিনীপুরের গুড়গুড়িপাল, নয়াগ্রাম, চাঁপাসোল, চাইপুর, কালগাঙ, গোপগড়, শ্রীরামপুর, দেপাড়া থেকে নতুন আক্রান্ত পাওয়া গেছে।
খড়গপুর শহরে এদিন আক্রান্ত বেশ কিছুটা কম। কারন অবশ্য খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে নমুনা সংগ্ৰহ করা বন্ধ রয়েছে। ফলে পর্যাপ্ত নমুনা যায়নি খড়গপুর থেকে। এদিন আইআইটি থেকে পাঠানো নমুনায় ৭ জন ও রেলের পাঠানো নমুনায় ৬ জনের পজিটিভ এসেছে। বাদ বাকি প্রায় সবই বেসরকারি ভাবে করানো আ্যন্টিজেন অথবা ট্রুনাট পরীক্ষা। সব মিলিয়ে এদিন শহর থেকে প্রায় ৪০ জনের পজিটিভ এসেছে। সর্বাধিক ৯জন পজিটিভ চিহ্নিত হয়েছে ইন্দা এলাকা থেকে। মালঞ্চ (দুর্গামন্দির এলাকা সহ)ও খরিদা থেকে ৩ জন আক্রান্ত চিহ্নিত হয়েছে। বাকি আক্রান্ত চিহ্নিত হয়েছে সাউথ ইন্দা, বুলবুলচটি, নিউ সেটেলমেন্ট, গিরিময়দান, ছোট আয়মা, সুভাষপল্লী, নিমপুরা, দেবলপুর-সুকান্তপল্লী, প্রেমবাজার, লোকাল থানার আবাসন ও রবীন্দ্রপল্লী এলাকা থেকে। এছাড়া শহরে আরও ৫জনের পজিটিভ পাওয়া গেছে যাঁদের নির্দিষ্ট ঠিকানা উল্লেখিত হয়নি। খড়গপুর গ্রামীনের মাদপুর, চকমকরামপুর, তেঁতুলমুড়ি ছাড়াও সালুয়া ইএফআর হেড কোয়ার্টার থেকে ৩ আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে।
খড়গপুর মহকুমার ডেবরা এবং পিংলা থানা এলাকায় সংক্রমন যথারীতি বহাল রয়েছে। ডেবরার বালিচক, হামিরপুর, গোটগেড়িয়া, উত্তর গোটগেড়িয়া, ভোগপুর, ডুঁয়া, পন্ডত, সিজগেড়িয়া, পশ্চিম বেগুনি, শ্যামসুন্দরপুর হাউর, রামপুরচক-শ্যামচক, বিজাগেড়িয়া, চকলালপুর, লোয়াদা, হাসবাজার, রাধাচন্দ্রপুর ও ডেবরা সদর থেকে নতুন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে।
পিংলার গোবর্ধনপুর, কাঁটাপুকুর, পাতরচক, পাইকান ধনেশ্বরপুর, রাগপুর, মাধবচক, কলাইকুন্ডু, মালিগ্রাম, তিলন্তপাড়া, করকাই, নুনগোদার, গঙ্গাদাসচক, সাঁতাই, জামনা ও পিংলা সদর থেকে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে।
সবং থানা এলাকার গৌরবাড় ও দশগ্রামে ১জন করে আক্রান্ত। দাঁতনের খন্ডরুই তুরকা, জেনকাপুর, মেনকাপুর ও দাঁতন সদরে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। আক্রান্ত পাওয়া গেছে মোহনপুরের মোহনপুর ও রেমু থেকে। বেলদার ধনেশ্বরপুর সাবড়া, মহম্মদপুর ও পানিগেড়িয়া থেকে আক্রান্ত মিলেছে। কেশিয়াড়ীর মান্দের, এলাসাই, সাঁতরাপুর, বেলাড়, মামুদপুর ও কাঞ্চনপুরে আক্রান্ত পাওয়া গেছে।
মেদিনীপুর সদর মহকুমার গড়বেতায় আক্রান্ত প্রায় ১৮ জন। চন্দ্রকোনা রোড, বড়কুড়া, দুর্গাপুর, খড়িকাশুলি, শিয়রতলা, অপর্নাপল্লী, দ্বারিগেড়িয়া, নয়াবসত, সাতবাঁকুড়া, তালডাংরা, ফুলমনিপুর, লালপুর,পাথরিশোল, কসারিয়া পানিকোটর, লাপুরিয়া ও ঝাড়বনী থেকে এক বা একাধিক আক্রান্ত পাওয়া গেছে। গোয়ালতোড়ের গোয়ালতোড়, মইতা, শিখরবালি, কাকরিশোল, বাঘপিছলা ও কান্তোড় থেকে সংক্রমনের খোঁজ মিলেছে। শালবনী থানায় নতুন সংক্রমনের খোঁজ মিলেছে ট্যাঁকশাল কলোনী থেকে। ফের আক্রান্ত হয়েছেন ৪ জন। এছাড়া আক্রান্তরা হলেন সাতপাটি, চকতারিণী ও পতলিবাটা এলাকার। কেশপুর থানার আনন্দপুর, কেশপুর ও আসুবেড়িয়াতে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে।
এরপর আমরা চলে আসছি ঘাটাল মহকুমায়। তুলনামূলক এখানে আক্রান্ত বেশ কম পাওয়া গেছে। হতে পারে পর্যাপ্ত পরীক্ষা না হওয়াতেই এটা হয়েছে। চন্দ্রকোনা থানার মিত্রসেনপুর, আধারনয়ন, হরিসিংপুর, ধামকুড়িয়া, দালিমাবাড়ি, বামারিয়া, আলুই, ক্ষীরপাই, রঘুনাথপুর, সিতারামপুর থেকে আক্রান্ত মিলেছে। হেতমপুর ও বেলডাঙ্গায় একাধিক আক্রান্ত।
দাসপুরের জোতঘনশ্যাম, নিশ্চিন্তিপুর ও পুরুষোত্তমপুরে একাধিক আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি আক্রান্ত মিলেছে রাইকুন্ডু, নুনগাদা, গোকুলনগর, দাসপুর, কৃষ্ণনগর ও লাউদা থেকে। ঘাটালের একাধিক সংক্রমন কুশপাতায়। ঘাটাল থানাতেও একজন আক্রান্ত বলে জানা গেছে। বাকি আক্রান্তরা কৃষনগর, লছিপুর, দন্ডিপুর, হিরাধরপুর, কোন্ননগর, রানিচক, মহাকালপোতা ও সিংপুর এলাকার।