নিজস্ব সংবাদদাতা: মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন রাজ্যজুড়ে আংশিক লকডাউনের সুফল ফলছে। নামছে আক্রান্তের সংখ্যা। সেই দাবির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আক্রান্তের হারে অভূতপূর্ব পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। গত ৭২ ঘন্টা বা তিনদিন জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে আক্রান্তের হার যথেষ্ট কমছে। মে মাসের শেষের তিনদিন অর্থাৎ ২৯, ৩০ এবং ৩১ তারিখের আক্রান্তের হার বলছে ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছে করোনার গ্রাফ। ২৯ শে মে জেলায় দৈনিক সংক্রমন ছিল ৩৫৫। ৩০শে মে তা কমে হয়েছে ৩১০। ৩১শে মে আরও কমে যা দাঁড়িয়েছে ২৮৬ জনে। যদিও এখানে দেখা যাচ্ছে তিনজনের সোয়াব দুবার করে পরীক্ষা হওয়ায় তাঁদের দুবার করে নাম যুক্ত হয়েছে অর্থাৎ সংখ্যাটা আরও ৩কমে ২৮৩ হওয়া উচিৎ।
৩১শে মে জেলায় মোট ২২০৮ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল যেখান থেকে ২৮৩ জনের পজিটিভ পাওয়া গেছে। যার অর্থ পজিটিভের হার মাত্র ১২.৮১%। করোনাকাল থেকে শুরু করলে এখনও অবধি জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৩২৩ জন। এরমধ্যে বর্তমানে করোনা সংক্রমিত ৩৫৪৪জন। এদের মধ্যে মাত্র ২৯৪ জন হাসপাতালে এবং ৮জন সেফ হোমে রয়েছেন। ৩১ তারিখ করোনা মুক্ত হয়েছেন ৫০২জন। অর্থাৎ ওই দিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে ২৮৩ জন। অর্থাৎ সুস্থতার হার বাড়ছে। জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী এই সুস্থতার হার হল ৮৮.৫৫%। আর মৃত্যুর হার ১.৪২%।
এই পর্যায়ে আমরা ৩১মে প্রকাশিত জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রকাশিত জেলার দৈনিক সংক্রমনের হিসাবটি দেখে নেব। এই তালিকার ভিত্তিতে বুঝে নেওয়া যাবে যে জেলার বিভিন্ন শহর ও মফঃস্বল এবং গ্রামগুলিতে কোথায় কোথায় সংক্রমনের হাল হকিকত কী। মনে রাখতে হবে এটি হল নূন্যতম একটি আভাস। বাস্তবে এর চাইতে অনেক বেশি পরিমাণ এবং বেশি জায়গা সংক্রমিত। প্রথমেই বলা দরকার যে জেলার সংক্রমন কম অথবা বেশি যাই হোকনা কেন সংক্রমন শীর্ষে রয়েছে মেদিনীপুর শহরই। দেখা যাচ্ছে মেদিনীপুর শহরে এদিন আক্রান্ত হয়েছেন অন্ততঃ ৮০জন। যা জেলার মোট আক্রান্তের সাড়ে ২৮% দখল করে রয়েছে অর্থাৎ ১ চতুর্থাংশের বেশি। অথচ কয়েকদিন আগেও এটা ছিল ২২ শতাংশ মত। অন্যদিকে মেদিনীপুর গ্রামীনে এদিন আরও ২৭জন নতুন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে যার মধ্যেই সিংহভাগই মেদিনীপুর শহর ঘেঁষে রয়েছে। স্থানের পাশে উল্লেখিত সংখ্যাটি ওই এলাকার আক্রান্ত জনের সংখ্যা।
মেদিনীপুর শহরের সুনির্দিষ্ট ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি এমন ১৭ জন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে। এদিন সর্বাধিক আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে বার্জটাউন থেকে, ৭ জন। এরপরেই রয়েছে কুইকোটা ৫জন। এছাড়াও তোড়াপাড়া ২, জুগনুতলা, বরিশাল কলোনি, কোত বাজার, অশোকনগর ২, উদয়পল্লী ২, পাটনাবাজার ৩, পোষ্ট অফিস রোড ২, নতুনবাজার, মেডিক্যাল কলেজ ২, মিত্র কম্পাউন্ড, মিরবাজার, রবীন্দ্রনগর ৩, ধর্মা ২, আবাস ২, সুজাগঞ্জ, পুলিশ লাইন ২, রাজাবাজার ৪, শরৎপল্লী ২, সেকপুরা, বিদ্যাসাগরপল্লী, বল্লভপুর ২, নজরগঞ্জ ২, রাঙামাটি, সিপাই বাজার, বড়বাজার, বক্সীবাজার, মিঞাবাজার, হবিবপুর, অযোধ্যানগর, স্কুলবাজার, অরবিন্দ নগর, হোসনাবাদ এলাকায় নতুন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে। কিন্তু গত ৩দিনের হিসাবে দেখা গেছে কুইকোটা, তোড়াপাড়া, সিপাইবাজার, বার্জটাউন, পাটনাবাজার, তাঁতিগেড়িয়া এলাকায় সংক্রমনের মাত্রা যথেষ্ট ওপরের দিকে।
মেদিনীপুর সদর গ্রামীনে গোলাপিচক, গুড়গুড়িপাল ২, চন্ডিপুর, আমনপুর ২, মালিয়াড়া ৩, নেপুরা ৭, গোপগড় ৬, খয়েরুল্লাচক ২, পাঁচখুরি, হাতিহলকা, জাগুল
৩১ মে খড়গপুর শহর থেকে মাত্র ৩০জন মত নতুন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। যেমন খড়গপুর শহরের সুনির্দিষ্ট ঠিকানা পাওয়া যায়নি ৩ জনের, তালবাগিচা ২, আইআইটি ক্যাম্পাস ২, শ্রীকৃষ্ণপুর, বড় আয়মা, গোলবাজার, মথুরাকাটি, মালঞ্চ ৪, বালাজি মন্দির, বিদ্যাসাগরপুর, ভবানীপুর ২, সালুয়া, সাঁজোয়াল, তলঝুলি, টুরিপাড়া, সিএমইগেট, নিউ সেটেলমেন্ট, দেবলপুর ২, হিজলি কো অপারেটিভ সোসাইটি ২, গত তিন দিনের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে মালঞ্চ, ইন্দা, শ্রীকৃষ্ণপুর, নিমপুরা ও কৌশল্যা এলাকায় সংক্রমন বেশি পরিমাণে রয়েছে। গ্রামীন খড়গপুরের বালিঘাটি, রাউৎমনি, কাঁদনপুর ,বাড়বাসি, জামিরা পলস্যা ৪ থেকে আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে।
গড়াবেতা সদরে ৩জন ছাড়াও আক্রান্ত পাওয়া গেছে নয়াবসাত, কিয়াবনী, , কাষ্টগুড়া ২, ডাকবাংলা, ডাঙাপাড়া ৪, ধাদিকা, খড়কুসমা, সাঁপডাহা, গোলহাট, খিরিয়া থেকে। গোয়ালতোড় থানার বুলানপুর, কাদাশোল, সাহেবডাঙা, ডুমুরডিহা, পাথরপাড়া, ধামচা, নিমাকাটা, মাকলি, হাবলা, ঝলঝলি এবং শালবনী সদরে ৫, লালেরডিহি ৬, মালিদা, মেটাল, পিড়াকাটায় ২ জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে। গত ৩দিনে শালবনী এলাকায় সংক্রমন অনেকটাই মাথা চাড়া দিয়েছে। কেশপুর থানার আনন্দপুর, উপর কুয়াই, রাজডাঙা আনন্দপুর, পুশপাতা থেকে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে এদিন।
ডেবরা সদরে ১জন আক্রান্ত ছাড়াও আইকোলা বারাতি, ভোমারিয়া, দ্বারপাড়া, বিরসিংহপুর, অলিসাগড়, তালিগেড়িয়া, কিশোরপুর, রাধামোহনপুর, চন্দনপুর, গঙ্গারামচক, শ্যামচক থেকে আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে। সবং সদরে ২জন ছাড়াও আক্রান্ত পাওয়া গেছে মোগলানিচক, শিবচক, বাদলপুর, মোহাড়, খাগড়াগেড়িয়া, রুইনান। গত তিনদিনের হিসাবে সবংয়ে সংক্রমন যথেষ্ট বাড়ছে বলে জেলার রিপোর্ট বলছে। পিংলার রাত্ৰাপুর, গোবর্ধনপুর ২, দনি চক, রাগপুর,
খড়গপুর মহকুমার দক্ষিণে মোহনপুর থানা এলাকার রাজনগরে ২জন ছাড়াও কুচাই, কেওট খলিসা থেকে আক্রান্ত পাওয়া গেছে। বেলদা থানার তুতরাঙা থেকে ৩ জন আক্রান্ত ছাড়াও বড় মাতকাতপুর, উত্তর করকরা এবং নারায়নগড় থানার হাঁদলা, প্রহরাজপুর, , ফুলগেড়িয়া, পারুলিয়া, চকমকরামপুর ছাড়াও তালা থেকে ২জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে। কেশিয়াড়ী সদরে ৩জন ছাড়াও , খেজুরকুঠি, আমদা থেকে আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে।
জেলার সাথে আক্রান্ত কমেছে ঘাটাল মহকুমাতেও। যেমন চন্দ্রকোনার থেকে ক্ষীরপাই থেকে ৫ জন, বৈকুণ্ঠপুর ও ঝাঁকরা থেকে ৩জন করে ছাড়াও আক্রান্ত পাওয়া গেছে হরিমারা, বীরসিংপুর, সিমলা, , গোবিন্দপুর, ডিঙল, বাঁকা থেকে।
দাসপুরের খাড়রাধাকৃষ্ণপুর থেকে ৪জন ও জোত ঘনশ্যাম, চাইপাট, রবিদাসপুর থেকে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। ঘাটালের কোন্নগর থেকে ২জন ছাড়াও মনসুখা,
গঙ্গাপ্রসাদ, আলমগঞ্জ, গোবিন্দপুর, রত্নেশ্বরবাটি, নিশ্চিন্দিপুর, কুশপাতা, নতুক থেকে নতুন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে।