নিজস্ব সংবাদদাতা: ঘূর্ণিঝড় যশের ভীতিতে পশ্চিম মেদিনীপুরে পরীক্ষার হার অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় জেলার আক্রান্তের সংখ্যা তেমন ভাবে পরিষ্কার হচ্ছিলনা কিন্তু ঝড় ভীতি কাটিয়ে পুরো মাত্রায় ফের পরীক্ষা শুরু হতেই আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। গত ২৩শে মে অবধি জেলার দৈনিক গড় সংক্রমন ৫০০ ছুঁয়েই ছিল। তার আগের ১৫দিন সেটাই ছিল সংক্রমনের গতি। ২৬শে মে পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুরে ঝড়ের প্রভাব পড়তে চলেছে এই আশঙ্কায় আগের দিন থেকেই ত্রস্ত হয়ে পড়েন মানুষ। সেই ভাবে করোনা পরীক্ষা হয়নি ফলে ২৬মে সারা জেলায় মাত্র ১৭৬জন আক্রান্ত পাওয়া যায়। পরের দিন ফের দেখা যায় ৩১৮জন আক্রান্ত! আর তারও পরের দিন অর্থাৎ ২৮শে মে আক্রান্ত একলাফে ৪০০ছুঁয়ে গেল।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের নথি মোতাবেক ২৮শে মে শুক্রবার জেলায় আরটি/পিসিআর পরীক্ষায় ১৯৬জন, আ্যন্টিজেন পরীক্ষায় ১৭৮ জন ও ট্রুনাট পরীক্ষায় ২৭জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে লক্ষণীয় যে খড়গপুর শহর, গড়বেতা ও ঘাটাল মহকুমায় আক্রান্তের হার বেশ কম। অন্যদিকে মেদিনীপুর শহর, শালবনী, ডেবরা, দাঁতনে সংক্রমনের গতি উর্ধমুখী রয়েছে। সবংয়েও ভালো সংক্রমন নজরে আসছে।
খড়গপুর শহরে শুক্রবার আক্রান্ত হয়েছেন ৬০জন মত যার মধ্যে রেল সূত্রে ৩১জন এবং আইআইটি সূত্রে আক্রান্ত ৩জন। ২৬জন পাওয়া গেছে বাদবাকি শহর এলাকায়। এদিন খড়গপুর শহরে সর্বাধিক আক্রান্ত পাওয়া গেছে নিমপুরা ও রবীন্দ্রপল্লী এলাকা থেকে। ৫জন করে মোট ১০ আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে শুধু ওই এলাকা থেকেই। ওল্ড সেটেলমেন্ট, মালঞ্চ এবং মথুরাকাটি এলাকা থেকে ৪জন করে আক্রান্ত পাওয়া গেছে। রামকৃষ্ণপল্লী
ইন্দা এলাকাতেও ৪জন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে। কৌশল্যা, সাউথ সাইড, ঢেকিয়া থেকে ৩জন করে আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে। ঢেকিয়াকে যদি মালঞ্চ এলাকায় ধরা হয় তবে ওই এলাকায় আক্রান্ত ৭ জন। ২জন করে আক্রান্ত মিলেছে মায়াপুর ডিভিসি ২, ভগবানপুর, খরিদা ও বারবেটিয়া থেকে। নূন্যতম ১জন করে আক্রান্ত তালবাগিচা, বড় আয়মা, ৩৬পাড়া, সাঁজোয়াল, ঝাপেটাপুর, ভবানীপুর, নয়াপাড়া, সুভাষপল্লী,ঝুলি, শ্রীকৃষ্ণপুর, নিউ সেটেলমেন্ট, মহকুমা হাসপাতাল আবাসন, ধোবিঘাট, রাবন ময়দান এলাকায়। আক্রান্ত ৩জনের সঠিক ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
খড়গপুর গ্রামীনের গোকুলপুর, কৃষ্ণপুর, বলরামপুর, কেশবপুর, উত্তর সিমলা, রামনগর মুকসুদপুর, চকবেনা কুলিয়াড়া, মহেশপুর, সাঁকোয়া থেকে ১০আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে।
এই দিন মেদিনীপুর শহরে মোট ৯০ জন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে যা কিনা জেলার মোট আক্রান্তের সাড়ে ২২শতাংশ। অন্যদিকে শহর লাগোয়া গ্রামীন অংশ থেকে ২০জন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ শহর ও গ্রাম মিলিয়ে মেদিনীপুর জেলার মোট আক্রান্তের এক চতুর্থাংশেরও বেশি। মেদিনীপুর শহরের করোনার হটবেড উত্তর থেকে সরে এবার পশ্চিমে চলে গেছে। সর্বাধিক আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে রাঙামাটি থেকে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আক্রান্ত ধরে ওই এলাকায় মোট ১১জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে। এরপরই ৫জন করে আক্রান্ত পাওয়া গেছে আবাস, তাঁতিগেড়িয়া, বল্লভপুর এলাকায়। তোড়াপাড়া, বিবিগঞ্জ থেকে ৪জন করে আক্রান্ত পাওয়া গেছে। পাটনাবাজার, বার্জটাউন, মানিকপুর, কেরানিতলা এলাকায় ৩জন করে সংক্রমিত। এক বা একাধিক আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে কুইকোটা, সিপাইবাজার, মহাতাপপুর, জগন্নাথমন্দির, উদয়পল্লী,নজরগঞ্জ, রাজাবাজার, জেলখানা, দেওয়াননগর, নবীনাবাগ, শরৎপল্লী, রাজারপুকুর, পাটনাবাজার, সেকপুরা , মির্জাবাজার, বিধাননগর, সিনহা কম্পাউন্ড, প্রেমবাজার, মিঞাবাজার, নেপালিপাড়া, স্টেশনরোড, কেরানীচটি, হবিবপুর, নতুনবাজার, পাটনাবাজার, ধর্মা, ইন্দিরাপল্লী, বিদ্যাসাগরপল্লী, কোতবাজার, বরিশাল কলোনী থেকে। এলাকার ঠিকানাহীন শহরে ৩ জন আক্রান্ত।
মেদিনীপুর গ্রামীন এলাকায় লোহাটিকরিতে ৪ জন ও খয়েরউল্লাচক ৩ জন আক্রান্ত। নেপুরায় ২আক্রান্ত পাওয়া গেছে। বাকি আক্রান্তরা গোয়ালডাঙা, বয়লাশোল, মুড়াকাটা, গোপগড়, , গোলাপিচক, রূপসা,মালবাঁধি, কলসিভাঙা, চাঁদড়া, ভাটিপাড়া, রানিপাটনা থেকে।
শহর এলাকা বাদ দিয়ে গ্রামীন থানাগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমন শালবনী এলাকায়। মূলত গোষ্ঠী সংক্রমনই এর কারণ। মোট ৩৬ জন আক্রান্তের ২২জনই ৩টি এলাকার। এক সিআইএসএফ জওয়ান সহ ট্যাঁকশালে ৬ জন,
সরসবেদিয়া গ্রামে তিনটি পরিবারে ১১জন ও ভাদুতলায় ২টি পরিবারে আক্রান্ত ৫ জন। শালবনী সদরে এক আক্রান্ত ছাড়া বাকি আক্রান্তরা পাথর কুমকুমি, বাগবাসা, ধান্যশোল, বালিবাঁধ ভীমপুর, পিড়াকাটা, ভাউদি, রঘুনাথপুর, বাগমারি, কর্নগড়, বারনাল, ধাঁধবাঁধ এলাকায়। চকতারিণীতে আক্রান্ত ২জন।
২৬ জন আক্রান্ত নিয়ে গোয়ালতোড়ও ভালো সংক্রমনের জায়গাতেই রয়েছে। সদরেই আক্রান্ত ৫জন। নিশ্চিন্তপুরে ৪ এবং শুড়িবাঁকা আমলাশুলিতে ৩জন করে আক্রান্ত পাওয়া গেছে। আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে নিমকাটা, দলাদলি, বেতঝরিয়া, বাঁধগোড়া, বাঁকাটা, বিরঘোষা, পাথরপাড়া, বাঁদরিশোল, গোরাবাড়ি, বুলানপুর, কেনকেনালি, আমলাশুলি, বালিবাঁধ থেকেও। গড়বেতায় সংক্রমন কমেছে অনেকটাই। নয়াবসাতে ২ জন আক্রান্ত ছাড়াও ১জন করে আক্রান্ত শিমুলডিহা, নিমডাঙা, গনগনি, কেওতাড়া মইতা এলাকায়। কেশপুর বাজারে ছাড়াও ওই থানার কলাগ্রাম, নেড়াদেউল, আনন্দপুর, তোড়াশির্ষা, আনন্দপুর, চড়কা, উনারচক থেকে আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে।
খড়গপুর মহকুমার থানা গুলির মধ্যে ডেবরাতেই আক্রান্তের সংখ্যা অধিক। নূন্যতম ৩০জন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে শুক্রবার। রাধামোহনপুরে ৪জন এবং
ডেবরা সদর, কল্যানপুর অর্জুনি ও হরিচরনে ২ জন করে আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে। আক্রান্ত পাওয়া গেছে দক্ষিণ গোটগেড়িয়া, চকশ্যামপুর, চকসুলতান ডুঁয়া, জালিমান্দা কালিকাডিহি, কাঁকরা শিবরাম, পদিমা ডুঁয়া, সুন্দরপুর হাউর, বাড় মাধবপুর, , দোগেড়িয়া, গঙ্গারামপুর, ভোমরা আত্মরাম, আলমপুর, ডিঙল, তিলপাটনা, বালিচক, , মলিঘাটি, সত্যপুর, অযোধ্যাপুর, ভূমুরিয়া থেকে।
এদিন কিছুটা হলেও সংক্রমন বেড়েছে সবং থানা এলাকায়। করোড়দায় ২ আক্রান্ত সহ মোহাড়, দক্ষিণ নিমকি মোহাড়, বলপাই, রুইনান, খাজুরি, পানপাড়া, গনোরা, তিলন্তপাড়া, দাদরা মিলিয়ে আক্রান্ত ১২জন। পিংলার জামনায় একই পরিবারে ৩ আক্রান্ত সহ পশ্চিমচক, ডাঙলসা, মালিগ্রাম, পাঁচগেড়িয়া মিলিয়ে ৭জন আক্রান্ত।
বেলদা থানার অন্তর্গত জোড়াগেড়িয়া ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক আক্রান্ত হয়েছেন করোনা যুদ্ধে অংশ নিয়ে। এছাড়াও বেলদা থানার শ্যামপুরা থেকে ২ জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে। নতুন করে সংক্রমন পাওয়া গেছে কাশিমপুর, গহিরা শুশিন্দা, উক্রসন্ডা, ব্রাহ্মণখলিসা, কৃষ্ণপুর, বাবলা, রাড়িপুর, , পাকুড়সেনী নারায়নগড় এলাকা থেকে। দাঁতনে কিছুটা বাড়তি সংক্রমন নজরে পড়েছে। পুরুন্দা তুরকা ও খন্ডরুইয়ে ২জন করে আক্রান্ত হয়েছেন। রুসুলপুরে আক্রান্ত ৪জন। ১জন করে আক্রান্ত মিলেছে দাঁতন হাসপাতাল আবাসন, কুন্ডুপাড়া মাটিবিরুয়া, আঙুয়া, মানিকাডাঙর, বাহরদা, জেনকাপুর, জফলা, সাবড়া থেকে। মোহনপুর থানার কুসুমদা, কেওটখালসা, নিলদায় আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে।
কেশিয়াড়ী সদরেই আক্রান্ত ৩জন। এছাড়াও নতুন সংক্রমনের খোঁজ মিলেছে কাশিপুর, কাঞ্চনপুর, চাতরাড়, বাঘাস্তি, বিনন্দপুর, সাতমারি, বেংদা, মামুদপুর, কুমারহাটি এলাকায়।
শুক্রবার ঘাটাল মহকুমায় তিন থানা এলাকাতেই সংক্রমনের গতি অনেকটাই নিম্নমুখি। যেখানে তিন থানা মিলিয়ে দেড়শ থেকে ১৭৫ জন অবধি আক্রান্ত হতে দেখা গিয়েছে সেখানে তিন থানা মিলিয়ে আক্রান্ত ৬৫জনের মত। তবে মহকুমার মধ্যে ঘাটাল থানা এলাকায় পারিবারিক সংক্রমনের কারনে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বেশি। ৬৫ জনের মধ্যে ২৭জন আক্রান্ত শুধু ঘাটালেই। ঘাটাল কোন্নগরে ১০, বীরসিংহে ৪ ও কুশপাতায় আক্রান্ত ৫জন। খাড়গম্ভীরনগরে ২জন ছাড়াও আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে সিংহডাঙা, হাসপাতাল, মনসুখা, , ধরমপুর, ধসাচাঁদপুর, সুলতানপুর, গম্ভীরনগর থেকে।
চন্দ্রকোনা সদরে এক আক্রান্ত ছাড়াও রঘুনাথপুর, বীরভানপুর, ক্ষীরপাই (২), সন্ধিপুর, হেমতপুর(২), গোপালপুর, ঝাঁকরা, পিয়ারডাঙা, রাজনা, যাদব ছত্রগঞ্জ থেকে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। অন্যদিকে দাসপুর চাইপাট (২), বড় শিমুলিয়া, তালিভাটা (২), খাড় রাধাকৃষ্ণপুর (৩), পলতাবেড়িয়া, উত্তর ধানখাল, বৈদ্যপুর , কিসমৎ কলোড়া, নুনিয়াগাদা, খুকুড়দহ, কোতলপুর, খুদিচক, গোপীনাথপুর, রানিচক, সাগরপুর, নিশ্চিন্তপুর থেকে নতুন করে আক্রান্ত হবার খবর পাওয়া গেছে।